ভারত
স্ত্রী পরকীয়া করে সন্তান জন্ম দিলে দায়িত্ব নিতে হবে স্বামীকেই
![Icon](https://www.bangladesherkhabor.net/uploads/settings/ezgif-7-c58f72a6c2icon-2-1730277221.png)
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:২১
![স্ত্রী পরকীয়া করে সন্তান জন্ম দিলে দায়িত্ব নিতে হবে স্বামীকেই](https://www.bangladesherkhabor.net/uploads/news_photos/2025/02/03/Bangladesher-Khabor-BH-(2)-67a0a6ca88462.jpg)
প্রতীকী ছবি
ভারতে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণে জন্ম নেওয়া সন্তানের আইনত বৈধ বাবা কে হবেন? এই প্রশ্নের রায় দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, যদি বিবাহিত থাকাকালীন কোনো স্ত্রী বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং সেই পুরুষের থেকে তার সন্তান হয়, তাহলে সেই সন্তানের আইনত বৈধ পিতা হবেন স্বামী।
সোমবার (৩ ফ্রেব্রুয়ারি) কেরালার একটি মামলায় ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট এ রায় দেন। রায়ে জানানো হয়, কোনো সন্তানের জন্ম বৃত্তান্ত নিয়ে অকারণে যাতে কোনো অনুসন্ধান বা প্রশ্ন না ওঠে এজন্য এই নির্দেশ। কোনো স্বামী যদি সেই সন্তানের দায়িত্ব নিতে বা নিজের পিতৃত্ব অস্বীকার করতে চান, তাহলে স্বামীকে প্রমাণ করতে হবে তার সঙ্গে স্ত্রীর কোনো ‘কন্টাক্ট’ বা যোগাযোগ নেই।
এ ক্ষেত্রে ‘নো-কন্টাক্ট’র সংজ্ঞাও দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সেই পুরুষকে প্রমাণ করতে হবে তার স্ত্রীর সঙ্গে তার কোনো শারীরিক সম্পর্ক নেই।
কিন্তু কেন হঠাৎ এমন রায়? ঘটনার সূত্রপাত কেরালায়। ২০০১ সালে জন্ম হয় মিলান জোসেফের। সে সময় তার মা রাজু কুরিয়ান নামক ব্যাক্তির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। পরে ডিভোর্স হয়ে যায় তাদের মধ্যে। ২০০৭ সালে মিলান জোসেফের মা কোচিন পৌরসভায় গিয়ে মিলানের বাবার নাম পরিবর্তনের আবেদন জানান। নারী আরও জানান যে, আসলে মিলানের জন্মদাতা বাবা ইভান রথিনাম (বায়োলজিক্যাল ফাদার)। কিন্তু পৌরসভা জানিয়ে দেয়, আদালতের নির্দেশ ছাড়া বাবার নাম পরিবর্তন সম্ভব নয়।
এরপরই ওই নারী ফার্স্ট অ্যাডিশনাল মুন্সিফ কোর্টে একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করেন। নারী আবেদন জানান, আদালত যেন রথিনামকে মিলান জোসেফের বাবা বলে ঘোষণা করেন এবং জোসেফকে নিজের পরিচয় দেন। এমনকি ক্রিমিনাল প্রোসিডিউর কোড ১৯৭৩-এর ১২৫ নম্বর ধারা অনুসারে রথিনামের থেকে খোরপোষ দাবি করেন।
দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর ২০০৯ সালে আদালত রায় দিয়ে জানান, যেহেতু সন্তানের জন্মের সময় তিনি রাজু কুরিয়ানের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন, সেই কারণে মিলন জোসেফের বৈধ বাবা হলেন কুরিয়ানই। পরবর্তী কালে সাব-জজ কোর্ট এবং ২০১১ সালে কেরালা হাই কোর্ট এই একই রায় বহাল রাখে।
এরপর ২০১৫ সালে আলাপ্পুঝার ফ্যামিলি কোর্টের সামনে আরও একটি পিটিশন করেন। তিনি জানান, তার স্বামী রাজু কুরিয়ান তাকে ইতোমধ্যেই পরিত্যাগ করেছেন। যেহেতু ইভান রথিনাম জোসেফের বায়োলজিক্যাল ফাদার, তাই তার এবং তার সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়া উচিত ইভান রথিনামেরই। ফ্যামিলি কোর্ট মামলা দায়ের করার অনুমতি দেয় এই বলে যে, পিতৃত্ব এবং আইনি বৈধতা দুটি পৃথক বিষয়। ২০১৮ সালে কেরালা হাই কোর্ট এই পর্যবেক্ষণ জানায়।
মামলা পৌঁছায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। ‘ভারতীয় প্রমাণ আইন, ১৮৭২’-এর ১১২ নম্বর ধারা অনুসারে সুপ্রিম কোর্ট জানান, বৈধ বিবাহ বন্ধনে থাকাকালীন জন্ম নেওয়া সন্তানের বৈধ বাবাও হবেন স্বামীই। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টই জানায়, ‘এমনকি যদি ডিএনএ প্রমাণ অন্য কিছু নির্দেশ করে তাহলেও পিতৃত্বের পরিচয় দেওয়ার সময় সামাজিক বৈধতাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। যদি কোনো পুরুষ বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ‘নন-অ্যাক্সেস’ প্রমাণ করতে পারে তবেই শিশুর পিতৃত্ব অস্বীকার করতে পারবেন।’
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং উজ্জ্বল ভূঁইয়ার বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ অনুসারে, একজন সন্তানের জন্মদাতা বাবা থাকতেই পারে, তবে আইন স্বামীকেই বৈধ পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই বিষয়ে আদালত রায় দিয়ে দিয়েছে, পরবর্তীতে এই নিয়ে মামলা কেবল অবিরাম আলোচনার দিকেই বিষয়টিকে টেনে নিয়ে যায়।’
ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট তার চূড়ান্ত রায়ে এই বিষয়ক চারটি পর্যবেক্ষণ পেশ করে। ১. বৈধতা পিতৃত্ব নির্ধারণ করে যদি না ‘নন-অ্যাক্সেস’র স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। ২. শুধুমাত্র ডিএনএ প্রমাণই বৈধতার আইনি নিয়মকে অগ্রাহ্য করতে পারে না। ৩. ২০১১ সালের রায় চূড়ান্ত, এই বিষয়ে আর কোনো আপিল হবে না। ৪. ইভান রথিনামের কাছে নারীর রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানানো মূল্যহীন। কারণ জোসেফ মিলানের বৈধ বাবা হলেন রাজু কুরিয়ান। সূত্র : টিভি নাইন
বিএইচ/