পশ্চিমা তরুণদের জীবনে সুখ-সন্তুষ্টি কমে গেছে : গবেষণা

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৫, ১৭:০৬

দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বাস করা হতো যে সুখ একটি নির্দিষ্ট গতিপথ অনুসরণ করে— যৌবনে এটি বেশি থাকে, মধ্যবয়সে কমে যায় ও বার্ধক্যে আবার বাড়ে। কিন্তু এটি হয়তো আর সত্য নয়।
পশ্চিমা ছয়টি দেশের উপর পরিচালিত নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বর্তমান তরুণরা আগের প্রজন্মের তুলনায় অনেক কম সুখী।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ (এনবিইআর) প্রকাশিত জাতিসংঘের অনুমোদিত এক গবেষণা বলছে, গত দশকে তরুণদের জীবনে সন্তুষ্টি ও সুখের হার ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
সান ডিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী জিন টোয়েঞ্জ ও ডার্টমাউথ ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ ডেভিড জি ব্ল্যাঞ্চফ্লাওয়ারের যৌথভাবে গবেষণা করেন। এজন্য তারা— অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ১১টি জরিপ পরিচালনা করেন। জরিপের ফলে দেখা যায়, তরুণদের সুখ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
অন্যান্য গবেষণাগুলোও একই ধরনের প্রবণতা দেখাচ্ছে, যা প্রমাণ করে যে এই পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী ঘটছে। এই গবেষণার ফলাফল দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে, যেখানে বলা হয়েছিল যে সুখ একটি ‘U-আকৃতির’ গতিপথ অনুসরণ করে।
গবেষকরা বলছেন, ১২ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যার মধ্যে— বিষণ্নতা ও মানসিক চাপ, আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।
অন্যদিকে, বয়স্কদের মধ্যে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনে সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিবর্তন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
মনে করা হচ্ছে— তরুণ প্রজন্ম করোনার পরবর্তী বিশ্বে নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির উত্থান ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এর প্রধান কারণ।
গবেষণা অনুযায়ী, স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যাপক ব্যবহার— সুখের নিম্নমুখী প্রবণতার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
গবেষক ব্ল্যাঞ্চফ্লাওয়ার বলেন, ‘ইন্টারনেটই মূল সমস্যা। অন্য কিছু এর সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না।’
২০২৪ সালে পরিচালিত পিউ রিসার্চের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি চারজনে তিনজন মার্কিন কিশোর-কিশোরী স্মার্টফোন ছাড়া বেশি স্বস্তি বোধ করেন। একই বছর পরিচালিত আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রিটিশ কিশোর-কিশোরীরা ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে কম সুখী। এর প্রধান কারণ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে দায়ী করা হয়েছে।
এই ফলাফল অন্যান্য দেশেও দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে— মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার মতো দেশগুলোতে প্রচুর তরুণ স্মার্টফোন ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে।
ব্ল্যাঞ্চফ্লাওয়ারের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, আফ্রিকায় তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে। কারণ সেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার এখনো অনেক কম।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘ইন্টারনেটের অভাবই সম্ভবত ব্যাখ্যা করতে পারে কেন আফ্রিকার তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় কম অবনতি ঘটেছে। তবে স্মার্টফোনের বিক্রি দ্রুত বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে উদ্বেগের কারণ হতে পারে।’
তবে শুধুমাত্র ইন্টারনেটই নয়, অর্থনৈতিক সংকট ও একাকীত্বের মতো অন্যান্য কারণগুলোকেও এই পরিবর্তনের জন্য দায়ী করা হচ্ছে।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সংস্কৃতির কিছু পরিবর্তন— ব্যক্তিগত যোগাযোগের অভাব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার ও আয় বৈষম্য বেড়ে যাওয়া জীবনের সন্তুষ্টি এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।।
২০২৪ সালের বিশ্ব সুখ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩০ বছরের কম বয়সী তরুণদের মধ্যে সুখের হার ব্যাপকভাবে কমেছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা আরও খারাপ, কারণ দেশটি ২০১২ সালে রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর এবার প্রথমবারের মতো বিশ্বের শীর্ষ ২০টি সুখী দেশের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
গবেষকরা বলছেন, তরুণদের সুখ কমে যাওয়ার প্রকৃত কারণ গভীরভাবে বোঝার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন, যাতে নীতিনির্ধারকরা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেন।
তবে ব্ল্যাঞ্চফ্লাওয়ার মনে করেন, এই সমস্যার সমাধান সহজ হবে না। তরুণদের মানসিক সুস্থতার এই নিম্নগতি অব্যাহত রয়েছে এবং এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে।
তিনি তরুণদের উদ্দেশে একটি পরামর্শ দিয়েছেন, ‘মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকুন। মানুষের সঙ্গে সরাসরি মেলামেশা করুন।’
আলজাজিরা থেকে