এক দেশে ছিল একটি সুন্দর রাজ্য, যার নাম ছিল সোনার রাজ্য। সেখানে এক মহান রাজা ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানী ও দয়ালু। রাজ্যের সব মানুষ তাকে খুব ভালোবাসত। কিন্তু রাজার একটি দুঃখ ছিল। তার একমাত্র ছেলে, রাজকুমার, ছিল অত্যন্ত অলস এবং অস্থির। রাজকুমার কখনো বই পড়তে চায় না। রাজ্যের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতেও তার ইচ্ছা করত না।
একদিন, রাজা ভাবলেন, ‘কীভাবে আমার ছেলে রাজকুমারকে ভালো কাজের জন্য উৎসাহিত করা যায়?’ তিনি একটি বিশেষ পরিকল্পনা তৈরি করলেন। রাজা একটি সোনালি কাঠি তৈরি করালেন, যা দেখে মনে হবে যেন একটি ম্যাজিক কাঠি। রাজা রাজকুমারকে ডেকে পাঠালেন।
রাজকুমার এসে রাজাকে বলল, ‘বাবা, আপনি আমাকে ডাকলেন কেন?’
রাজা বললেন, ‘বাছা, এটি তোমার জন্য একটি বিশেষ সোনার কাঠি। এই কাঠিটি শুধু তখনই কাজ করবে যখন তুমি ভালো কাজ করবে। তুমি যদি কারো সাহায্য করো বা কোনো সঠিক কাজ করো, তাহলে এই কাঠিটি তোমাকে বিশেষ কিছু দেবে।’
রাজকুমার প্রথমে কিছুটা সন্দেহ করলেন। কিন্তু রাজা বললেন, ‘এটি সত্যি। তুমি চেষ্টা করো।’
রাজকুমার কাঠিটি নিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়ল। সে ভাবতে থাকল, ‘কীভাবে আমি এই কাঠির সাহায্যে কিছু করতে পারি?’ হঠাৎ, সে একজন বৃদ্ধ লোককে দেখল, যে রাস্তার পাশে পড়ে ছিল। রাজকুমার গিয়ে বৃদ্ধ লোকের পাশে দাঁড়াল।
‘আপনি কেমন আছেন, দাদা?’ রাজকুমার জিজ্ঞাসা করল। বৃদ্ধ লোক উত্তর দিল, ‘আমি খুব অসুস্থ, কিন্তু কেউ আমাকে সাহায্য করছে না।’ রাজকুমার চিন্তা করল, ‘এখন যদি আমি তাকে সাহায্য করি, তাহলে হয়ত সোনার কাঠিটি কিছু ম্যাজিক দেখাবে।’
রাজকুমার বৃদ্ধকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিল। সে দ্রুত পানি নিয়ে এল এবং বৃদ্ধের মাথায় ঢালতে লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যে বৃদ্ধ লোক কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠল। সে রাজকুমারকে ধন্যবাদ জানাল।
রাজকুমার যখন কাঠিটি দেখল, তখন অবাক হয়ে গেল। কাঠিটি উজ্জ্বল হয়ে উঠল এবং তার হাতে একটি সোনালি পাথর এসে পড়ল। রাজকুমার আনন্দিত হয়ে বলল, ‘আরে! সত্যিই এই কাঠিটি ম্যাজিকের মতো!’
এরপর, রাজকুমার সোনালি কাঠিটি নিয়ে আরও মানুষের সাহায্য করতে লাগল। সে গরিবদের খাবার দিল, শিশুদের পড়ার জন্য বই নিয়ে দিল এবং বৃদ্ধদের সেবা করল। প্রতিবার যখন সে ভালো কাজ করত, কাঠিটি তাকে নতুন কিছু উপহার দিত।
একদিন, রাজকুমার তার বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করতে বেরিয়েছিল। তারা একটি গাছের তলায় বসেছিল। তখন তারা একটি ছোট্ট পাখিকে দেখতে পেল। পাখিটির পায়ে জখম হয়েছিল। রাজকুমার পাখিটিকে দেখে দুঃখিত হলো এবং তার বন্ধুদের বলল, ‘আমরা পাখিটিকে সাহায্য করব।’
তার বন্ধুরা বলল, ‘কিন্তু আমাদের কী করার আছে? রাজকুমার উত্তরে বলল, ‘আমরা ওকে উদ্ধার করতে পারি। আমি জানি, আমি যদি ভালো কাজ করি, তাহলে সোনার কাঠিটি আমাদের সাহায্য করবে।’
রাজকুমার পাখিটিকে হাতে তুলে নিল এবং কিছু পাতা ও পানি নিয়ে এল। কিছুদিনের মধ্যেই, পাখিটি আবার সুস্থ হয়ে উঠল এবং উড়ে গেল। কাঠিটি আবারও উজ্জ্বল হয়ে উঠল এবং রাজকুমারের হাতে একটি সোনালি কলম এসে পড়ল।
এখন রাজকুমার বুঝতে পারল যে, সোনার কাঠিটি তাকে উপহার দেয় তাই না, বরং ভালো কাজের মাধ্যমে প্রতিভা বিকাশেও সাহায্য করছে। রাজকুমার সিদ্ধান্ত নিল, সে শুধু সোনালি কাঠির জন্য কাজ করবে না, বরং সত্যিকার অর্থেই মানুষের জন্য কিছু করবে।
দিন দিন রাজকুমারের কাজের সংখ্যা বাড়তে লাগল। সে তার রাজ্যের প্রতিটি মানুষকে সাহায্য করতে লাগল। রাজ্যবাসী তার সম্পর্কে জানতে পারল এবং তাকে ভালোবাসতে লাগল। রাজকুমার কিছুদিন পর রাজ্যের সবচেয়ে প্রিয় নেতা হয়ে উঠল।
এখন রাজকুমারের অলসতা পুরোপুরি দূর হয়েছে। সে জানল যে, সত্যিকারের সুখ ভালো কাজের মধ্যে রয়েছে। একদিন, রাজা রাজকুমারকে ডেকে বললেন, ‘বাছা, আমি তোমার এই পরিবর্তনে খুব খুশি। তুমি যে সোনালি কাঠির মাধ্যমে ভালো কাজ করেছ, সেটাই তোমার সত্যিকারের সাফল্য।’
রাজকুমার হাসতে হাসতে বলল, ‘বাবা, আমি এখন বুঝতে পেরেছি যে ভালো কাজ করার আনন্দই আসল সোনালি কাঠি।’
রাজা ও রাজকুমার মিলে রাজ্যে একটি বিশেষ উৎসবের আয়োজন করলেন। রাজ্যের সব মানুষ সেই উৎসবে যোগ দিল। রাজকুমার তাদের বলল, ‘প্রতিটি মানুষকে আমাদের সাহায্য করা উচিত। এতে বিশেষ আনন্দ পাওয়া যায়।’
সেদিন থেকে রাজ্যটি একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। রাজকুমার তার সোনালি কাঠি নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে লাগল এবং তার হৃদয়ে সোনালি কাঠির চেয়ে বড় একটি প্রেরণা তৈরি হলো—মানুষের ভালোবাসা ও একতা।
এভাবেই রাজকুমারের সোনার কাঠি তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করল এবং রাজ্যের সমস্ত মানুষ একসঙ্গে সুখী জীবনযাপন করতে লাগল।
এমএইচএস