-67ab37a1662a0.jpg)
হাবিবাদের ক্যাম্পাসটা নিরিবিলি,শান্ত ও স্নিগ্ধ।
নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সবুজে চারপাশ ঘেরা। মাঠভরা সবুজ ঘাস। ঘাস নয় যেন সবুজের গালিচা। পাঁচতলা ভবনের সামনে সারি সারি ফুলগাছ। ভবনের দুপাশে দুটি হাসনাহেনা ফুলগাছ। ক্যাম্পাসের শোভা বৃদ্ধি করছে ঝাঁকড়া মাথা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা টগর ফুলগাছগুলো। রাত এলেই হাসনাহেনা ফুল ফোটে। আবার দিন হতে না হতেই সেই ফুলগুলো ঝরে যায়। এর ঘ্রাণ তীব্র ও কড়া। রাতে যখন ফুল ফোটে, গন্ধে পুরো ক্যাম্পাসটা ম ম করে। লোকমুখে শোনা যায়, হাসনাহেনা ফুলগাছের তলায় নাকি বিষাক্ত সাপ ও পোকামাকড় আসে। মানুষ ফুলকে ভালোবাসে। সাপরাও কি ফুলকে ভালোবাসে! কে জানে তাদের এ কথার কোনো ভিত্তি আছে কিনা! তবে কখনো এ দুই ফুলগাছের তলায় সাপ-টাপ দেখা যায়নি।
হাবিবা, রুণা, তয়্যিবা, নিপা ও আফরোজা পাঁচতলা ভবনের তৃতীয় তলায় থাকে। ওরা ক্লাসমেট। হাবিবা তার ছোটবোনের সঙ্গে দেখা করবার জন্য তাড়াহুড়ো করে নিচে নামছে। হঠাৎ সে দেখতে পেলো সিঁড়ির জানালার থাই গ্লাসের সাথে একটা চড়ুই পাখি ঢুসাঢুসি করছে।
থাইকে শূন্য ভেবে বারবার ওড়ার চেষ্টা করছে এবং আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে।
হাবিবা খপ করে চড়ুইটাকে ধরে চিৎকার দিয়ে বলল, রুণা, ওই রুণা! তোরা কই? একটা পাখি ধরছি দেইখ্যা যা। রুণা কাছে ছিল না। আওয়াজ শুনে নিপা ছুটে এল তার কাছে।
- আমার হাতে পাখিডা একটু দেস না!
- নে
- ইশ, হাবিবা! পাখিডার শরীলডা না একেবারে তুলতুলে। কী কস?
- হুম, এমনি।
- চড়ুই ভুনা খুব স্বাদ। চল, আজ এইডা ভুনা করমু।
- না, না, এইডার জন্য আমার মায়া লাগছে, দেখতো এইডা ভয়ে কীভাবে কাঁপছে!
- আরে আমার খাওয়ার লাইগ্যা না, বরং তোর জন্য। তুইতো কখনো চড়ুই ভুনা খাসনি তাই। আমি তো বহুতবার খাইছি। ভুনা কইরাও, ঝোল কইরাও। আমার বাড়িতে চড়ুইয়ের বহুত বাসা আছে। কয়দিন পরপর আমরা ধইরা ধইরা ভুনা কইরা খাই।
- আর যাই কস। এই চড়ুইডা খাইতে পারবো না; কারণ এডা বিপদে পইড়া আশ্রয়ের লাইগগা এইখানে আইছে।
এই বলে সে পাখিটা অবমুক্ত করে দিলো।
পাখিটা ছাড়া পেয়ে মুক্ত আকাশে লেজ নেড়ে নেড়ে উড়ছে। লেজ নেড়ে যেন সে কৃতজ্ঞতার জানান দিচ্ছে হাবিবার প্রতি, আর নিপাকে ভর্ৎসনা করছে।
হাবিবা আসলে কোমল হৃদয়ের মেয়ে। সে কারো দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে পারে না। পাখিটা অন্য কারো হাতে পড়লে বাঁচার উপায় ছিল না।
আজ রুণা উপস্থিত থাকলে এটা ভুনা করা ছাড়া নিস্তার ছিল না; কারণ সে হাবিবার ঘনিষ্ঠতম বান্ধবী এবং সে খুব দুষ্টুও বটে। তা ছাড়া রুণা আবদার করলে হাবিবা কখনো না করতে পারে না।
হাবিবাদের রুমের অদূরে বড় একটা বটগাছ আছে।
এই গাছ থেকে বট খেতে ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুঘু আসে প্রতিনিয়ত।
প্রায়ই তাদের রুমের জানালার থাইয়ে আঘাত খেয়ে অনেক ঘুঘু আহত হয়ে নিচে পড়ে। তখন তারা সেগুলো ধরে সঙ্গে সঙ্গে জবাই করে ফেলে। বোধহয় থাইয়ের গ্লাসে ঘুঘুরা নিজেদের ছায়া দেখে আর সেটাকে অন্য ঘুঘু ভেবে আক্রমণ করতে যায়। আর তখনই আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
শুধু গতমাসে দশটা ঘুঘু আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। দশটা থেকে আটটাই নিয়েছে রুণা। ওগুলো সে একা খায়নি; বরং বাড়ি থেকে ভুনা করে এনে অন্য ক্লাসমেটদেরও খাইয়েছে।
লেখক : গবেষক ও প্রবন্ধকার
- বাংলাদেশের খবরের জীবনানন্দ (সাহিত্য) বিভাগে লেখা পাঠান এই মেইলে- bksahitya247@gmail.com