Logo

জাতীয়

নারী দিবস

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে যা ভাবছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

Icon

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০৯:২৫

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে যা ভাবছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে গত দশ বছরে দেশে নারীদের প্রতি যৌন সহিংসতা বেড়েছে ২৮.৫ শতাংশ। ৭০ ভাগ নারী তাদের জীবদ্দশায় অন্তত একবার হলেও শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও সাম্প্রতিক সময়ে বেড়ে যাওয়া নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

‘রাজনৈতিক প্রভাব ও বিকৃত মানসিকতা দায়ী’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম রাফি মনে করেন নারীদের প্রতি ঘটনা সহিংসতার অন্যতম কারণ রাজনৈতিক প্রভাব ও বিকৃত মানসিকতা। তিনি বলেন, ‘নারী নির্যাতন বলতে নারীদের বিরুদ্ধে শারীরিক, মানসিক, যৌন, অর্থনৈতিক বা অন্য যেকোনো ধরনের নির্যাতনকে বোঝায়, যা তাদের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের দেশে সামাজিকভাবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, বিভিন্ন কুসংস্কার, যৌতুকপ্রথা, প্রকৃত শিক্ষার অভাব; অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্রতা, পরনির্ভরশীলতা এবং আইনের দুর্বল প্রায়োগিকতা, এমনকি রাজনৈতিক প্রভাবসহ বিকৃত মানসিকতার জন্য বিভিন্নভাবে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকে।’ 

রাফি আরও বলেন, ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ব্যক্তি, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সচেতনতা,  সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ ও সংস্থা গঠন, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন, সামাজিক মূল্যবোধ বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশে বিদ্যমান ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০’-এর যথাযথ প্রয়োগ জরুরি। এ ছাড়াও নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে জাতীয় হেল্পলাইন-১০৯-এর যথাযথ পরিষেবা বৃদ্ধিকরণ নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা মোকাবিলায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে।’

‘অপরাধীদের বিচার দ্রুত কার্যকর করতে হবে’
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থী নুজহাত তাসনিম বলেন, ‘নারী নির্যাতন কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের সীমাবদ্ধ সমস্যা নয়। এটি একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি। প্রতিনিয়ত পত্রিকার শিরোনাম ও সংবাদমাধ্যমে নির্যাতনের নির্মম চিত্র উঠে আসে। শারীরিক, মানসিক, যৌন, আর্থিক ও সামাজিক নির্যাতনের শিকার হয়ে নারীরা স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।’ 

তিনি মনে করেন, ‘এর প্রভাব শুধু ব্যক্তিগত নয় বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের অগ্রগতিকেও ব্যাহত করে। নারী নির্যাতনের অন্যতম কারণ আইনের দুর্বল প্রয়োগ। বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা, প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপ, পুলিশি গাফিলতি ও ভুক্তভোগীর নিরাপত্তাহীনতা অপরাধীদের শাস্তি এড়াতে সাহায্য করে। ফলে নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। এর সমাধানে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধি, ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা ও আইনি সহায়তা দেওয়া জরুরি।’ 

নুজহাত বলেন, ‘সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার। কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে পারলে নারী ও শিশু নির্যাতন হ্রাস পাবে। একটি নিরাপদ সমাজ গড়ে উঠবে।’

‘নারীর আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ দরকার’
নারীদের আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ দরকার বলে মনে করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহানা আক্তার ইশা। তিনি বলেন, ‘নারী নির্যাতন সমাজের এক ভয়াবহ অভিশাপ। দারিদ্র্য, কুসংস্কার, শিক্ষার অভাব ও আইনের দুর্বল প্রয়োগ এ সমস্যার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত। এ ছাড়াও পারিবারিক সহিংসতা, যৌন হয়রানি, বাল্যবিবাহ ও শ্রমশোষণ এর বিভিন্ন রূপ।’ 

ইশা আরও বলেন, ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধে প্রয়োজন কঠোর আইন, জনসচেতনতা ও নারীর ক্ষমতায়ন। শিশুদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়তে শিক্ষা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি ও সহায়তা কেন্দ্র শক্তিশালী করাই প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি। এ ছাড়া সমাজের সকলেই একসাথে এগিয়ে আসলে এই সমস্যা অতিদ্রুত বন্ধ করা সম্ভব হবে।’

‘সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোখলেসুর রহমান মাহিম মনে করেন, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের মাধ্যমেই নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা নারী নির্যাতন। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে যৌন হয়রানির সংখ্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নারীর প্রতি এই সহিংসতার মূলে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ, আইনের শিথিলতা, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় প্রধান।’ 

মাহিম বলেন, ‘আধুনিক যুগেও পিতৃতান্ত্রিক এই সমাজ এখনো নারীকে ভোগের বস্তু ও দুর্বলতার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে। এরই ফলস্বরূপ প্রতিনিয়ত নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না সদ্য স্কুলে ভর্তি হওয়া শিশুটিও। নারীর প্রতি এরূপ সহিংসতা প্রতিরোধে করতে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা জরুরি। পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনের শাসন নিশ্চিত করা গেলে সমাজ থেকে এই ঘৃণিত কাজ দূর করা সম্ভব হবে।’

  • সাইফুল ইসলাম/এমজে
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর