এনআইডি : সরকার চায় আলাদা কমিশন, ইসির ‘না’
প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ১৩:০৩

জাতীয় পরিচয়পত্র (ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ড)- যার সংক্ষিপ্ত রূপ এনআইডি। নাগরিক শনাক্তকরণ থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন কাজে এনআইডি গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি থেকে বাংলাদেশে এনআইডি কার্যক্রম শুরু হয়। সময়ের পরিক্রমায় ২০০৮ সালে ছবি ও আঙুলের ছাপ সংবলিত বায়োমেট্রিক তথ্যসহ এনআইডি দেওয়ার কর্মসূচি হাতে নেয় সরকার।
- এনআইডি কার্যক্রম ইসির অধীনে চেয়ে সরকারকে চিঠি
- ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন’ নামে স্বতন্ত্র কমিশন করতে চায় সরকার
প্রথমে এনআইডি কার্যক্রম ও বিতরণ করা হয় জাতীয় পরিচয় উইংয়ের মাধ্যমে। পরবর্তীতে এনআইডি কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনে (ইসি) স্থানান্তর করা হয়। তারপর থেকে এনআইডি সেবা দিয়ে আসছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জন্ম নিবন্ধন, এনআইডি ও পাসপোর্ট সেবা নিয়ে দুর্ভোগ-জটিলতা নিরসনে ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন’ নামে একটি স্বতন্ত্র কমিশন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের পরই সরকার ও নির্বাচন কমিশন এনআইডি নিয়ে বিপরীত দুই মেরুতে অবস্থান করছে।
এনআইডি কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন থেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নতুন নয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এনআইডি সেবা নির্বাচন কমিশন থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে নিতে আইন সংশোধন করা হয়েছিল। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে আইনটি বাতিল করা হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জন্ম নিবন্ধন, এনআইডি ও পাসপোর্ট সেবা নিয়ে দুর্ভোগ-জটিলতা নিরসনে ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন’ নামে একটি স্বতন্ত্র কমিশন করার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়।
সবশেষ কমিশন গঠনের লক্ষ্যে ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন-২০২৫’ নামে একটি খসড়া অধ্যাদেশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কমিশন গঠনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এনআইডির কার্যক্রম নিয়ে স্থানীয় সরকার, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের মতামতও নিচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। একই সাথে খসড়াটি নিয়ে পর্যালোচনার লক্ষ্যে আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক মতামত দেওয়া সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির প্রথম সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
যেখানে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। মূলত কমিশন গঠনের অধ্যাদেশের প্রথম বৈঠকের পর থেকেই নির্বাচন কমিশন থেকে এনআইডি সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিতে দ্বিমত প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এরই মধ্যে স্বতন্ত্র কমিশন গঠন ও নির্বাচন কমিশন থেকে এনআইডি কার্যক্রম সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের এনআইডি শাখার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘এনআইডি সেবা ইসির মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্নভাবে দেওয়া হচ্ছে। ভোটার হালনাগাদ থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচন, এনআইডি সেবার সকল সক্ষমতা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। তবু বারবার এনআইডি নিয়ে টানাহেঁচড়া করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এমন সময় এনআইডি ইসি থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জটিলতা সৃষ্টি করবে। বর্তমানে ইসির সার্ভারে সাড়ে ১২ কোটির মতো দেশীয় নাগরিক ও ১১ লাখ রোহিঙ্গার তথ্য রয়েছে। কোনো রোহিঙ্গা বা বিদেশি যাতে ভোটার তালিকায় সম্পৃক্ত হতে না পারে এবং এনআইডি সংগ্রহ করতে না পারে, সে জন্য নির্বাচন কমিশন কয়েক ধাপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করেছে। যা দেশের নাগরিকের তথ্য নিরাপত্তা দিচ্ছে।’
এনআইডি ইসির অধীনে থাকবে না কি নতুন কমিশনে যাবে- এ বিষয়ে কোনো নির্বাচন কমিশনার এখনই মন্তব্য করতে চান না। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন এনআইডি সেবা ইসির অধীনে থাকার বিষয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এনআইডি সেবা অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘এনআইডি সেবাটা কিন্তু নিয়ে যাচ্ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আইনও করে ফেলেছিল, কার্যকর হয়নি। আমরা সরকারকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, এটি স্বরাষ্ট্রে যাওয়া ঠিক হবে না।’
এদিকে এনআইডি সেবা ইসির অধীনে রাখতে সরকারকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ চিঠি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সরকারের কাছে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এনআইডি কার্যক্রম স্থানান্তর করলে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক ক্ষমতা খর্ব হবে। আবার ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও নির্বাচন আয়োজনে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।’
- এসআইবি/এমজে