Logo

জাতীয়

মরক্কো থেকে পালিয়ে কানাডায় যাওয়া রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ০০:২৭

মরক্কো থেকে পালিয়ে কানাডায় যাওয়া রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার

মরক্কোতে দায়িত্ব পালন শেষে দেশে না ফিরে পালিয়ে কানাডায় গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা ও বিগত সরকারের সাফাই গাওয়ায় রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ হারুন আল রশিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

শুক্রবার (১৪ মার্চ) প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১১ ডিসেম্বর মরক্কোয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ হারুন আল রশিদকে দেশে প্রত্যাবর্তন ও অনতিবিলম্বে মন্ত্রণালয়ে যোগদানের জন্য আদেশ দেওয়া হয়। এ সত্ত্বেও তিনি স্বপদে বহাল থেকে এ বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব ত্যাগ করেন।

মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশে ফিরে আসার পরিবর্তে তিনি বিভিন্ন অজুহাতে যাত্রা বিলম্বিত করেন। মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমোদন ছাড়াই তিনি মরক্কোর রাবাত থেকে কানাডার অটোয়ায় চলে গেছেন বলে জানা গেছে। এরপর গত ৬ মার্চ অটোয়া থেকে তার ঢাকায় ফেরার কথা থাকলেও তিনি ফেরেননি। 

উল্লেখ্য, শুক্রবার হারুন ফেসবুকে ‘A Plea for Bangladesh-and for Myself Subject : Bangladesh’s Descent into Anarchy under Yunus-The World’s Silence is painful’ (‘বাংলাদেশ এবং আমার জন্য একটি আবেদন। বিষয়: ড. ইউনূসের অধীনে বাংলাদেশের নৈরাজ্যের দিকে পতন– বিশ্বের নীরবতা বেদনাদায়ক’) শীর্ষক একটি লেখা পোস্ট করেন। এতে তিনি দাবি করেন, তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈধ সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি পূর্ববর্তী সরকারের গুণকীর্তনের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গত ৫ আগস্ট-পরবর্তী বাংলাদেশে পরিস্থিতি ক্রমশ নৈরাজ্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছেন। 

সেখানে রাষ্ট্রদূত লেখেন, ‘মানবতার বিবেকের উদ্দেশে : বাংলাদেশ আজ নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছড়িয়ে দেওয়া বর্বরতার শিকার। লাখো মানুষ এক ভয়ংকর বাস্তবতার মুখোমুখি– মৃত্যু, নির্বাসন, অথবা উগ্রপন্থার কাছে আত্মসমর্পণ। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, দেশটি তার ইতিহাসের এক অন্ধকারতম অধ্যায়ের মুখোমুখি হয়– একটি সুপরিকল্পিত সন্ত্রাসী আক্রমণ, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈধ সরকারকে উৎখাত করে বাংলাদেশের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেয়। যখন দেশ জ্বলছিল এবং শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছিল, মুহাম্মদ ইউনূস তখন আত্মপ্রকাশ করেন দখলদার হিসেবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অবস্থানরত জিহাদিরা যেমন ফরহাদ মজহার ও জাহেদুর রহমান– শেখ হাসিনার বাক্‌স্বাধীনতার নীতির সুযোগ নিয়ে উগ্রপন্থার প্রচার চালিয়েছে। তারা হিন্দু ও ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়েছে, শুধুমাত্র এই কারণে যে, শেখ হাসিনার শাসনে বাংলাদেশের হিন্দুরা নিরাপদ ছিল। তাদের মিথ্যাচার বাংলাদেশি মুসলিমদের মনে ভারতবিদ্বেষকে এক মানসিক ব্যাধিতে পরিণত করেছে, যা উগ্রপন্থার পথ সহজ করে দিয়েছে।’

হারুন আল রশিদ বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিচয় ধ্বংস: ইউনূসের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এই জিহাদিরা বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ ও সাংস্কৃতিক পরিচয় ধ্বংস করেছে, ইতিহাস ও ঐতিহ্য মুছে দিয়েছে। তারা শুধু জাদুঘর, ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও সাংস্কৃতিক প্রতীক ধ্বংস করেনি; শত শত সুফি দরগাহ এবং হিন্দু মন্দিরও গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ইউনূসের শাসনে বাংলাদেশ নারীদের প্রতি সবচেয়ে নির্যাতনমূলক দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। সংখ্যালঘু ও ধর্মনিরপেক্ষ মানুষরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে, আর হিযবুত তাহ্‌রীর, আইএস ও আল কায়দা প্রকাশ্যে তাদের লাল-কালো পতাকা উড়িয়ে ইসলামী খেলাফতের দাবি জানাচ্ছে। জুলাই-আগস্ট মাসের সন্ত্রাসীরা এদের মধ্য থেকেই উঠে এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু ড. ইউনূস শুধু তাদের রক্ষা করেননি– তাদের ক্ষমতাও দিয়েছেন। তার সরকারে সন্ত্রাসীরা মন্ত্রী হয়েছে, আর যাদের তিনি মন্ত্রিত্ব দিতে পারেননি, তাদের রাজনৈতিক দল গঠনের সুযোগ করে দিয়েছেন।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, হারুন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ ও প্রচেষ্টাসহ বাংলাদেশের সামগ্রিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে বর্তমান বাংলাদেশে বিরাজমান পরিস্থিতি এবং বাস্তবতাকে সম্পূর্ণরূপে বিকৃত উপস্থাপন করে ফেসবুকে এ ধরনের লেখা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং এর বিষয়বস্তু গভীরভাবে উদ্বেগজনক। এরূপ রচনা লেখকের গোপন উদ্দেশ্য বা অসৎ অভিসন্ধির ইঙ্গিত দেয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন ও মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পরিবর্তে তিনি কানাডায় চলে যান এবং সেখান থেকে ফেসবুকে লেখালেখি শুরু করেন। তিনি তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে নিজেকে ‘নির্যাতিত কূটনীতিক’, ‘নির্বাসিত ঔপন্যাসিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা মূলত বিদেশে সহানুভূতি অর্জনের অভিপ্রায়ে করা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে তার এবং তার পরিবারের (সদস্যদের) পাসপোর্ট বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয় মোহাম্মদ হারুন আল রশিদের এহেন কর্মকাণ্ডের জন্য প্রয়োজনীয় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে কোনোভাবে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না জানিয়ে ভবিষ্যতেও যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করবে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর