এখনো অধরা রহমান ঘনিষ্ঠ শিমু, হাল ছাড়েনি পুলিশ

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ২০:০৫
-67dc208e109fd.jpg)
সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আবদুর রহমান ঘনিষ্ঠ পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা মো. সামসুদ্দোহা শিমুকে গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আত্মগোপনে থাকা শিমু কাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন সে বিষয়েও অনুসন্ধান চলছে। তার প্রতিটি মুভমেন্ট নজরদারিতে রয়েছে বলেও জানিয়েছে গোয়েন্দারা।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) মামলা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতা শিশুর বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলন দমনের মামলা রয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় হওয়া ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশ একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে। তবে তাতেও ধুরন্ধর শিমুকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। শিমু ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণেরও বিভিন্ন পদে ছিলেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা শিমুকে গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা জাল বিছানো হয়েছে। তার ঘনিষ্ঠ কারা, তিনি কোথায় যাচ্ছেন, পলাতক অবস্থায় কাদের সঙ্গে যোগযোগ রাখছেন- এসব বিষয়ে পর্যালোচনা চলছে। পলাতক অবস্থায়ও শিমু বেশ কয়েক জায়গায় মুভমেন্ট করেছেন; সেসব জায়গাগুলো শনাক্তে কাজ চলছে।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ইবনে মিজান বলেন, ‘শিমুকে ধরতে আমরা কাজ করছি। একাধিকবার নিজের অবস্থান পরিবর্তন করায় তাকে ধরা যায়নি।’
শিমু যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য বিমানবন্দর ও সকল স্থলবন্দরে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী মামলার পলাতক আসামি শিমুর অবস্থান আমরা একাধিকবার নিশ্চিত হয়েছি। অত্যন্ত চতুর শিমু সেখান থেকে পালিয়ে যান। তার অবস্থান নিশ্চিতে গোয়েন্দারা মাঠে কাজ করছেন। হত্যাচেষ্টা মামলায় তাকে যেকোনো সময় গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হবে। এই মামলায় আরও অনেক আসামি এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে।’
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান বলেন, ‘তার অবস্থান শনাক্ত এবং তাকে ধরতে আমাদের একাধিক টিম মাঠে আছে। পাশাপাশি আমাদের সোর্সরা কাজ করছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি বেশি দিন পালিয়ে থাকতে পারবেন না।’
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা শিমু শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা। সেখানে কর্মরত অবস্থায় দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন তিনি। এ ছাড়া ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার আত্মীয় এই শিমু। কারাবন্দি আছাদুজ্জামান মিয়ার অনেক সম্পদ তার কাছে গচ্ছিত রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সাবেক গডফাদার শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এই শিমু।
সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ আমলে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে ত্রাণ সামগ্রী কেনাকাটা, বিতরণ ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন শিমু। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে তিনি এসব অপকর্ম করেছেন। তা ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংক কর্মকর্তারা সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হতে পারবেন না। তবে শিমু চাকরির পাশাপাশি সরাসরি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল, যা সুস্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন। শিমুর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকের বর্তমান পর্ষদ তদন্ত কমিটি করবে বলেও জানা গেছে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকরাম হোসেন বলেন, ‘সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমান ও সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার অনুরোধে তাকে উপদেষ্টা করা হয়। আর ব্যাংক কর্মকর্তারা যে দলীয় দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না সেটা আমি জানতাম না। শিমু দলীয় কর্মসূচিতে সব সময় উপস্থিত থাকতেন এবং সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল।’
অভিযোগ রয়েছে, শিমু শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এভাবে অঢেল ধন-সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। এসব টাকায় ভাটারায় পাঁচতলা সুবিশাল বাড়ি করেছেন। নিজের ও স্ত্রী-সন্তানদের নামে করেছেন অনেক সম্পদ।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ নেতা ও আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা সামসুদ্দোহা শিমু ছাত্র জীবনে অধুনা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের তোলারাম কলেজের নেতা ছিলেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট বছিলা ব্রিজ সন্নিকটে হত্যার উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করেন গুরুতর জখম ও হুকুমের আসামি এই শিমু। এই মামলার এজাহারনামীয় ৩৮ নম্বর আসামি তিনি।
সম্প্রতি শিমুকে ধরতে রাজধানীর ভাটারা থানার সাইদনগর হাউজিং এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। সাবেক প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমানের ঘনিষ্ঠ শিমুকে গ্রেপ্তারে তিন ঘণ্টা ধরে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে বাসার বাতি নিভিয়ে কৌশলে পালিয়ে যান তিনি। এ সময় শিমুর স্ত্রী ও মেয়েরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে তীব্র বাদানুবাদে লিপ্ত হন।
ডিআর/বিএইচ
প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন