Logo

জাতীয়

বাঘ-বকের রূপকথা আর আদিবাসী শিল্পে সাজছে মঙ্গল শোভাযাত্রা

জয় খ্রীষ্টফার বিশ্বাস

জয় খ্রীষ্টফার বিশ্বাস

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৮

বাঘ-বকের রূপকথা আর আদিবাসী শিল্পে সাজছে মঙ্গল শোভাযাত্রা

পয়লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষের উৎসব বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিবছর ১৪ এপ্রিল বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে নতুন বছর শুরু হয়। দিনটি শুধু একটি নতুন বছরের সূচনা নয়, এটি বাঙালি জাতির হাজার বছরের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ও আনন্দের প্রতীক। পয়লা বৈশাখে সাধারণত একযোগে সমগ্র বাংলাদেশে পালিত হয় নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা, খেলা ও শোভাযাত্রা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার নতুন উদ্যমে পালিত হতে যাচ্ছে বাংলা বছরের প্রথম দিনটি। মঙ্গল শোভাযাত্রার সাজে যুক্ত হচ্ছে আদিবাসী শিল্পও।

পয়লা বৈশাখের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। এ শোভাযাত্রাকে বর্ণিল করে তুলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে চলছে প্রস্তুতির ধুম। এক প্রান্তে চলছে শোভাযাত্রার শিল্পকাঠামো নির্মাণের কাজ, অন্যপ্রান্তে চলছে শোভাযাত্রার ব্যয় নির্বাহের জন্য জলরঙ, সরাচিত্র, মুখোশ, পুতুল তৈরি ও বিক্রি। দিন-রাত বিরামহীনভাবে চলছে এ প্রস্তুতি। যাকে ঘিরে পুরো চারুকলা অনুষদ এখন উৎসবমুখর ও ব্যস্ত মুহূর্ত পার করছে।

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপনে মঙ্গল শোভাযাত্রার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। তাদের সঙ্গে অনুষদের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক ও চারুশিল্পীরাও যোগ দিয়েছেন এবারের ব্যতিক্রম উদ্যোগে। গত ২০ মার্চ ছবি এঁকে এ প্রস্তুতিকার্যের উদ্বোধন করেন প্রাচ্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার।

এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ও প্রস্তুতি নিয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন আজহারুল ইসলাম চঞ্চল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও থাকবে বাঙালিয়ানার নতুন সাজ। বাংলা ঐতিহ্যের বাহক মঙ্গল শোভাযাত্রা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা বাঙালি। আর মঙ্গল শোভাযাত্রা, প্রদীপ প্রজ্বলন, এগুলো আমাদের নিজস্ব কৃষ্টি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এবারে আমাদের সাথে আদিবাসীদের একটি বড় অংশ তাদের নিজস্ব সত্তা নিয়ে অংশগ্রহণ করবে। যেটি এবারের আয়োজনকে বাড়তি উল্লাস-উদ্দীপনা দেবে বলে মনে করি। এখন পর্যন্ত ভালো কিছুই হচ্ছে। সকলের অংশগ্রহণে আশা করি দারুণ একটি বৈশাখ কাটবে।’

বৈশাখের আয়োজন প্রায় ৬ বছর থেকে করে আসছেন অন্বেষা। দিনটি অপেক্ষায় থাকেন চারুকলার এ শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘এখনো শিল্পকাঠামোর সংখ্যা চূড়ান্ত হয়নি। তবে ১০টির মতো শিল্পকাঠামো থাকবে এবারের শোভাযাত্রায়। এর মধ্যে রয়েছে ঘোড়া, পাখি, উল্টা কলসি। সবচেয়ে আর্কষণীয় কাঠামো হিসেবে থাকছে বাঘ ও বকের শিল্প কাঠামো। বাঘ ও বকের রূপকথা অবলম্বনে শিল্পকাঠামোটি তৈরি করা হচ্ছে।’

এদিকে, বাইরে থেকে অনেকে আর্টে অংশগ্রহণ করছেন এবার। শিশু থেকে শুরু করে পূর্ণবয়স্ক অনেকেই রংতুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে রাঙাচ্ছেন সাদা পোস্টারে বানানো হরেক রকমের মুখোশ। তাদের কাছে এটি প্রশান্তির এক জায়গা। এটার অংশ হতে পেরে তারা আনন্দে আত্মহারা। 

উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বের হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। শুরুর বছরেই তা সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়। এরপর থেকে এটা বাংলা বর্ষবরণের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে। ১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এ আনন্দ শোভাযাত্রা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম ধারণ করে। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কোর বিশ্বঐতিহ্যের স্বীকৃতি লাভ করে এ শোভাযাত্রা।

জেসি/এমজে

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর