ছবি : সংগৃহীত
ইংরেজি ভাষা দক্ষতার জন্য প্রচলিত নিরীক্ষণ পদ্ধতি ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম বা আইইএলটিএস। স্কলারশিপ বা বৃত্তি নিয়ে যারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যারা পড়তে ও অভিবাসনের জন্য যেতে চান, তাদের এ পরীক্ষা দিতে হয়। সম্প্রতি আইইএলটিএস পরীক্ষায় একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে বাংলাদেশে আইইএলটিএস পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ কাউন্সিল ও আইডিপি (ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) এডুকেশন।
আগে আইইএলটিএস পরীক্ষায় বাধ্যতামূলকভাবে লিসেনিং ও রিডিং পরীক্ষায় পেনসিল ব্যবহার করতে হতো, রাইটিং অংশে পেনসিল বা কলমের মধ্যে যেকোনো একটি ব্যবহারের অনুমতি ছিল। কিন্তু এখন থেকে নতুন নিয়মের কারণে লিসেনিং, রিডিং ও রাইটিং তিন অংশের পরীক্ষাতেই বাধ্যতামূলকভাবে কলম ব্যবহার করতে হবে। কোনোভাবে পরীক্ষার্থীরা পেনসিল ব্যবহার করতে পারবেন না।
ব্রিটিশ কাউন্সিল ও আইডিপি দুই প্রতিষ্ঠানেরই পরীক্ষার্থীদের জন্য আগামী ২৫ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশে এই নিয়ম কার্যকর হবে। অ্যাকাডেমিক ও জেনারেল আইএলটিএসে দুই ক্ষেত্রেই এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে। পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া অন্য কিছু সঙ্গে আনতে পারবেন না। কেন্দ্রে প্রার্থীদের কলম দেবে ব্রিটিশ কাউন্সিল ও আইডিপি।
আইডিপি আইইএলটিএসের প্রধান ইলোরা শাহাব শর্মী গণমাধ্যমকে জানান, ‘পরীক্ষায় আরও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং পরীক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য নতুন এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি প্রার্থীদের জন্য ভালো হবে। আমরা আমাদের কর্ম বা শিক্ষাজীবনের সব ক্ষেত্রেই কলম ব্যবহার করি। কলমের সঙ্গে প্রার্থীদের ইরেজার বা শার্পনার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। পেনসিল ধারালো করা বা লেখা মুছে ফেলার জন্য পরীক্ষায় যথেষ্ট সময় ব্যয় হয়। তাই কলম ব্যবহারের ফলে সময় বাঁচবে এবং প্রার্থীরা উত্তর তৈরিতে সেই সময় কাজে লাগাতে পারবেন। এটি একটি নতুন নিয়ম এবং এটি অনেক দেশেই দেওয়া হচ্ছে।’
ব্রিটিশ কাউন্সিলের বিপণন ব্যবস্থাপক জুবায়ের নাঈম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নতুন এ নিয়মের ফলে প্রার্থীদের সঙ্গে কিছু নিয়ে আসতে হবে না। কোনো কিছু নিয়ে আসার ঝামেলা থাকবে না। পরীক্ষার্থীদের সময় বাঁচবে এবং আরও দ্রুততার সঙ্গে পরীক্ষা দিতে পারবেন। আমরা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজে, ফরম পূরণ বা স্বাক্ষরের জন্য কলম ব্যবহার করি। তাই আইইএলটিএস পরীক্ষায় এখন থেকে কলম ব্যবহারের ফলে প্রার্থীরা প্রাত্যহিক জীবনে কলম ব্যবহারের সুবিধা পরীক্ষাতেও পাবেন।’
তবে নতুন এ নিয়মের কারণে পরীক্ষার্থীরা কিছুটা সমস্যায় পড়তে পারেন বলে মনে করছেন আইইএলটিএসের বাংলাদেশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তাদের মতে, আইইএলটিএস লিসেনিং, রিডিং ও রাইটিং অংশে পেনসিলের ব্যবহার সুবিধাজনক। কারণ, ভুল করলে সঙ্গে সঙ্গে রাবার দিয়ে মুছে ফেলে ঠিক করা যায়। কিন্তু কলম ব্যবহারের ফলে ভুল করলে কেটে দিতে হবে, ঠিক করে লেখার জায়গা পাওয়া যাবে না।
আইইএলটিএসের শিক্ষক ও পেট্রোনাস এডুকেশনের পরিচালক মোস্তাকিম শুভ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সার্বিকভাবে কলমের ব্যবহার পরীক্ষার্থীদের জন্য অসুবিধার। যেমন লিসেনিং ও রিডিং পরীক্ষায় খুব অল্প জায়গায় উত্তর লিখতে হয়, অনেক সময় উত্তর পরিবর্তন করার প্রয়োজন পড়ে। পেনসিল ব্যবহারের কারণে পরীক্ষার্থীরা সহজে তা মুছে সঠিক উত্তর লিখতে পারতেন। কিন্তু কলম ব্যবহারের ফলে পরীক্ষার্থীরা এ সুবিধা পাবেন না। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বেন রাইটিং অংশে। সেখানে নতুন কোনো ভোকাবুলারি অথবা কোনো কারেকশন মুছে করতে গেলে বড় সমস্যায় পড়তে হবে। কারণ, কলম দিয়ে লেখার ফলে মুছতে পারবে না, কাটাকাটি করতে হবে, কাটাকাটির পর নতুন শব্দ লেখার জায়গা থাকবে না।
মোস্তাকিম শুভ আরও বলেন, ‘পরীক্ষার্থী যে কলম দিয়ে লিখবেন, সেটি টেস্ট সেন্টার প্রোভাইড করবে। ফলে সেই কলমে শিক্ষার্থীরা অভ্যস্ত না–ও থাকতে পারেন। এতে লেখার গতি কমে যাবে এবং অনেকে নির্দিষ্ট সময়ে রাইটিং শেষ করতে সমস্যায় পড়তে পারেন। তবে এ সমস্যা সমাধানে যদি আইডিপি এবং ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রতিটি অংশে অতিরিক্ত উত্তরপত্রের ব্যবস্থা করে, তাহলে শিক্ষার্থীরা এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। কারণ, তখন ভুল হলে আর মোছামুছির প্রয়োজন হবে না, কেটে দিয়ে অতিরিক্ত উত্তরপত্রে সঠিক উত্তর দিতে পারবেন এবং জায়গা নিয়ে সমস্যায় পড়বেন না।’
এসবি