Logo

জাতীয়

সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে প্রশাসন ক্যাডারের তরুণ কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:৫৯

সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে প্রশাসন ক্যাডারের তরুণ কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ

উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে অন্য ক্যাডারের কোটা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করে সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এমন খবরে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রশাসন ক্যাডারের তরুণ কর্মকর্তারা। 

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ৩০ থেকে ৪১তম ব্যাচের একাধিক তরুণ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।  

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে এর আগে গত রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনে প্রশাসন ক্যাডারের নবীন কর্মকর্তারা বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় আয়োজিত জরুরি মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রশাসন ক্যাডারের নবীন কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং এ সিদ্ধান্ত তাদের প্রতি ভয়াবহ অবিচারের শামিল বলে উল্লেখ করেন।

৩০ থেকে ৪১তম ব্যাচের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশেও ঐতিহাসিকভাবেই উপসচিব পদে মূলত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা কাজ করে থাকেন। এ বিষয়ে করা রিট মামলায় উচ্চ আদালতে আইনি লড়াই শেষে আপিল বিভাগ ২০১০ সালের ২৪ মে চূড়ান্ত আদেশে উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ৭৫ শতাংশ নিয়োগ প্রদান বৈধ ঘোষণা করে।

প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তারা মনে করেন, আদালতের রায় উপেক্ষা করে এ ধরনের সুপারিশের প্রস্তাব একদিকে আদালত অবমাননার শামিল, অপরদিকে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দুর্বল করার নামান্তর। পাশাপাশি এটা নবীন কর্মকর্তাদের জন্য বৈষম্যমূলক। এই সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে পারে এবং রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা দুর্বল হতে পারে।

মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরীসহ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩০ ব্যাচ থেকে ৪১তম ব্যাচের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।

এ সময় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্য সরকারের উপর মহলে তুলে ধরার আশ্বাস দেন। একইসঙ্গে রিপোর্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া ও কার্যক্রম গ্রহণের আশ্বাস দেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সরকারের নীতি বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত ‘কোর’ অফিসগুলোতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা কাজ করেন। এ সুপারিশের ফলে প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রায় ৪০ শতাংশ কমে যাবে। 

বক্তারা বলেন, ফলে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তার ক্যারিয়ার অনিশ্চিত হয়ে পড়বে, যা প্রভাব ফেলবে প্রশাসনের ‘স্পিরিট ডি কর্পস’ বা মনোবলে। প্রশাসন যেহেতু সরকারের নানা নীতি বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করে, সেহেতু মনোবলহীন প্রশাসন ব্যবস্থা রাষ্ট্রব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার নামান্তর হবে।

নবীন কর্মকর্তারা আরও মনে করেন, সরকারের নীতি বাস্তবায়নে তারা প্রায় ২৪/৭ মাঠে কাজ করে থাকেন। ৫ আগস্টের পর যখন রাজনীতিবিদেরা মাঠে অনুপস্থিত ছিলেন, পুলিশ অকার্যকর ছিল, তখন স্থানীয় সরকারের নানা পর্যায়ে যেমন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ইত্যাদি পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সরকারকে কার্যকর রেখেছেন। 

এ সুপারিশের ফলে ক্যারিয়ারে পদসোপান যদি কমে যায়, তবে তারা বাড়তি কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। এতে করে মাঠ প্রশাসনের কার্যকারিতা অনেকাংশেই কমে যাবে এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। সরকারের এ সময়ে যা হতে পারে বিপজ্জনক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নবীন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘উপসিচব পদটি প্রশাসন ক্যাডারের সহজাত পদ বলে রায় দিয়েছে আপিল বিভাগ। সেটি উপেক্ষা করে এই অন্যায্য সুপারিশ প্রশাসন ক্যাডারের জন্য বৈষম্যমূলক। যেখানে অন্য সব ক্যাডারের কর্মকর্তারা পঞ্চম গ্রেডে একাধিক পদোন্নতির দুটি সুযোগ পাচ্ছেন, সেখানে প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা পাচ্ছেন শুধু উপসচিব পদে পদোন্নতির সুযোগ।’

আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘কমিশনের এ সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছেন জুনিয়র কর্মকর্তারা, যারা এখনো উপসচিব পদে পদোন্নতি পাননি। এসব কর্মকর্তা বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার সময় উপসচিব পদে পদোন্নতিতে সুযোগ ৭৫ শতাংশ আছে ধরেই চয়েস দিয়েছেন। ক্যারিয়ারের মাঝপথে এসে এ ধরনের পরিবর্তন ‘ডকট্রিন অফ লেজিটিমেট অ্যাক্সপেক্টেশন’-এর লঙ্ঘন।’

এনএমএম/এমজে

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

সংস্কার কমিশন প্রস্তাব ক্ষোভ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর