Logo

জাতীয়

হাসিনা ফাঁদে ক্ষয়ে যাচ্ছে আ.লীগ

এম এ বাবর

এম এ বাবর

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩১

হাসিনা ফাঁদে ক্ষয়ে যাচ্ছে আ.লীগ

পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারকে কেন্দ্র করে বুধবার থেকে উত্তাল সারা দেশ। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ডাক দেয় 'লংমার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’। 

তারা হাসিনাবিরোধী স্লোগান দিয়ে ওইদিন রাত সাড়ে ৮টা থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। ছাত্র-জনতার এ আহ্বান মুহূর্তের মধ্যে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন চুপ্পুর পদত্যাগের দাবিতে স্লোগানে উত্তাল থাকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়ক। উপস্থিত ছাত্র-জনতা জানায়; গণহত্যার পরও অনুশোচনা নেই শেখ হাসিনার, তার বক্তব্যের কথা শুনে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে আবার রাস্তায় নেমে এসেছে। 

এদিকে, রাত ৯টায় ফেসবুক লাইভে শেখ হাসিনা বক্তব্য দেওয়া শুরু করলেই, বিক্ষুব্ধ জনতা ৩২-এর বাড়িটি ভাংচুর করে। বিক্ষুব্ধরা হাসিনার বাসভবন 'সুধা সদন'-এও আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তারা বুধবার সারা রাত ও গতকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি। একইভাবে সারা দেশে রাতভর চলে ফ্যাসিস্টদের চিহ্ন উৎখাতের বন্দোবস্ত। 

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের ছয় মাস পূর্ণ হলো বুধবার। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ঘোষণা দেয়, রাতে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা, যিনি ৫ আগস্টের পর থেকে ভারতে পালিয়ে আছেন। বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে, যাদের নেতৃত্বে গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের 

পতন হয়েছিল। সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়াকে, বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ-বিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি।’

 পরে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফেসবুকে আরেক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।’

এর আগেই বুধবার বিকালে আলোচিত সাংবাদিক ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ইলিয়াস হোসাইন এবং মানবাধিকারকর্মী ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর পিনাকী ভট্টাচার্য ফেসবুকে ‘ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’ ঘোষণা করেন। তারা দুজন একটি ফটোকার্ড শেয়ার করেন। তাতে বলা হয়, ‘হাজারো ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়ে দিল্লি পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকেই খুনি হাসিনার বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতার প্রতিবাদে ২৪-এর বিপ্লবী ছাত্র-জনতার উদ্যোগে আজ (বুধবার) রাত ৯টায় এ কর্মসূচি পালিত হবে।’ 

প্রথমে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে সেই 'বুলডোজার মিছিল' শুরু হলেও পরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের খবর আসতে থাকে।

 বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার ফাঁদে পড়ে দিন দিন আরও ক্ষয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য অনুশোচনা না করে এখনো বিদ্বেষ ছড়ানো উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে চলেছেন শেখ হাসিনা, যা ক্ষোভ-অসন্তোষ বাড়াচ্ছে জনমনে। ফলে দেখা যাচ্ছে প্রতিক্রিয়া, তা ক্ষতিগ্রস্ত করছে আওয়ামী লীগকে। 

অন্যদিকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বিদেশে বসে বিভিন্ন ধরনের উসকানি ও বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। ফোনকল করে দেশে-বিদেশে অবস্থান করা দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে দলীয় কর্মসূচিতে বক্তব্য দিচ্ছেন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার কথিত এসব ফোনালাপ ফাঁসও হয়েছে। যেখানে নেতা-কর্মীদের উসকে দেওয়ার পাশাপাশি জুলাই-আগস্টের আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে জিঘাংসা ছড়াতে দেখা যায় তাকে। 

দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসন এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে যে দমন-পীড়ন ও নির্যাতন এবং হত্যাকাণ্ড চালানো হয় তার জন্য এখন পর্যন্ত তিনি জাতির কাছে ক্ষমা চাননি। এমনকি এর জন্য তার মধ্যে কোনো অনুশোচনাও নেই, যার প্রকাশ তার বক্তব্য-বিবৃতিতেও বিন্দুমাত্র উঠে আসছে না। শুধু তাই নয়, কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রেও তার মধ্যে কোনো সতর্কতা লক্ষ্য করা যায় না। তার সরকারের এহেন লুটপাট, দুর্নীতি ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ক্ষোভদানা বাঁধছিল। গত জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে তা দমনে নিষ্ঠুরভাবে বল প্রয়োগ করে শেখ হাসিনা সরকার।

রাজপথে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে গুলি ছোড়ার পাশাপাশি হেলিকপ্টারও ব্যবহার হতে থাকে বিক্ষোভ দমনে। এতে ছাদে খেলতে যাওয়া শিশু থেকে শুরু করে বারান্দায় বাবার কোলে থাকা শিশুও গুলিতে প্রাণ হারায়। সরকারি হিসাবে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি ও আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের হাতে প্রায় আট শ' মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। তবে আন্দোলনকারীদের হিসাবে, এ সংখ্যা দুই হাজারের মতো। 

শিশু, নারী থেকে শুরু করে নিরীহ জনতার ওপরও হাসিনার সরকার খগড়হস্ত হলে আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। যোগ দেয় দল-মত নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। গত বছরের ৫ আগস্ট লাখো ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে এলে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। তার আগে-পরে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী এবং সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা। গা-ঢাকা দেন দলটির দেশে থাকা নেতা-কর্মীরা। 

হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচারের ঘোষণা দেয়। এদিকে আন্দোলনকারীদের ওপর সশস্ত্র হামলা ও হত্যার অভিযোগে কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর অভিযুক্ত নেতা-কর্মীদের নামে মামলা হতে থাকে। শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের অনেক নেতা, সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপি গ্রেপ্তার হন, যান কারাগারে। শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অনেকের নামে হয়েছে অর্ধশতাধিক মামলা। 

এ পরিস্থিতিতে হাসিনার সমালোচক নিরীহ আওয়ামী লীগের কর্মীরা যখন স্বাভাবিক জীবনযাত্রার আশায় দিন গুনছেন, ঠিক তখন আওয়ামী লীগকে মাঠে নামাতে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করছেন শেখ হাসিনা। অভ্যুত্থানের গ্রাফিতির ওপর রাতের আঁধারে চোরাগোপ্তায় লিখতে বলা হচ্ছে হাসিনার নামে নানান স্লোগান, যা অভ্যুত্থানের কর্মীদের বিক্ষুব্ধ করছে।

তার নির্দেশে এই ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মসূচি পালনের জন্য নেতা-কর্মীদের রাস্তায় নামার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে লিফলেট বিতরণ করতে গিয়ে অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ-উর রহমান বলেন, আন্দোলনকারীদের হুমকি-ধমকি দিয়ে, তার নানান বক্তব্য ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের সোশ্যাল মিডিয়ার প্লাটফর্মে। এসব নিয়ে বিদ্বেষ ছড়িয়ে যাচ্ছে বিদেশে পালিয়ে নিরাপদে বিলাসী জীবনযাপন করতে থাকা দলটির কতিপয় নেতা-কর্মী ও অ্যাক্টিভিস্ট। এতে ছাত্র-জনতার অসন্তোষ আরও বাড়ছে। অসন্তোষের আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছেন সেই শেখ হাসিনাই। বুধবার রাতে তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীর উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বলে আগে থেকে প্রচারণা চালাতে থাকেন। এই ভাষণের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্র-জনতা। 

তাদের অভিযোগ, ভারতে বসে ভাষণ দিয়ে শেখ হাসিনা বিদ্বেষের আগুন ছড়াচ্ছেন। এসব করে হাসিনা নিজে তো শেষ হয়েছেন, একই সঙ্গে তার ফাঁদে পড়ে ধ্বংস হয়েছে আওয়ামী লীগও। 

এদিকে, ধানমন্ডি ৩২-এর প্রভাব পড়েছে দলের শীর্ষ নেতাদের উপরেও। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দেয় ছাত্র-জনতা। সকালে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘নোয়াখালীর বিপ্লবীরা বুলডোজার নিয়ে প্রস্তুত থাকুন। মার্চ টু কাউয়া কাদেরের বাড়ি! আজ বেলা ১১টা।’ এরপর গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভা এলাকায় তার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। 

বরিশাল নগরীতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমুর ডুপ্লেক্স ও জেলা সভাপতি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর বাসভবন বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

বুধবার রাত সাড়ে ১২টায় ছাত্র-জনতা প্রথমে নগরের কালীবাড়ি সড়কে হাসনাতের বাসভবন ভাঙচুর শুরু করে। সেনাবাহিনী এসে প্রথমে বাধা দিলেও পরে ফিরে যায়। সেখানে ভাঙচুর শেষে রাত ২টার দিকে ছাত্র-জনতা যান বগুড়া সড়কে আমির হোসেন আমুর ডুপ্লেক্স বাসায়। সকাল পর্যন্ত সেখানে বুলডোজার দিয়ে ভাঙচুর চলতে থাকে। দক্ষিণাঞ্চলের আলোচিত শেখ বাড়িতে ভাঙচুর শুরু করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। 

বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় খুলনার ময়লাপোতা এলাকার এ বাড়িটি ঘিরে ফেলে কয়েক হাজার জনতা। বাড়িটি বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ও খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দীন জুয়েলের। রাত সাড়ে ৯টার দিকে একটি বুলডোজার দিয়ে বাড়িটির গেট ভাঙার চেষ্টা করে জনতা। পরে আরেকটি বড় বুলডোজার আনা হয়। 

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও ভোলা-১ আসনের সাবেক এমপি তোফায়েল আহমেদের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে ছাত্র-জনতা। একই সঙ্গে আগুন দেওয়া হয়। বুধবার রাতে শহরের গাজীপুর রোড এলাকায় তোফায়েলের 'প্রিয় কুটির' নামে ডুপ্লেক্স বাড়িতে এ ভাঙচুর চালানো হয়। 

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানীতে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাসায় ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছে স্থানীয় একদল লোক। গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে একদল লোক বাড়িতে আগুন দেয়। এ সময় বাড়িতে কেউ ছিল না। বাড়িতে প্রথমে ভাঙচুর করে পরে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে চারতলা বাসার অধিকাংশ কক্ষ পুড়ে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৪০০ থেকে ৪৫০ জন লোক একটি মিছিল নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে শাহরিয়ার আলমের বাসভবনের সামনে যায়। বাড়ির গেটের তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে সবগুলো কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়। এরপর ১২টার দিকে বাড়িতে আগুন দেয়। এ সময় পুরো চারতলা ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়লে গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের শব্দে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। 

কুষ্টিয়ায় বুলডোজার (এক্সকাভেটর) দিয়ে ভাঙা হচ্ছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়ি। বুধবার রাত ১০টার দিকে শহরের পিটিআই সড়কে তিনতলা বাড়িটি ছাত্র-জনতার ব্যানারে ভাঙা শুরু হয়। এর আগে গত ৪ ও ৫ আগস্ট এই বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন মাহবুব উল আলম হানিফ। 

সুনামগঞ্জে শেখ মুজিবুর রহমানের ছয়টি ম্যুরাল ভেঙে দিয়েছে ছাত্র-জনতা। বুধবার রাতে এসব ভাঙা হয়। প্রথমে পৌরসভা প্রাঙ্গণে থাকা ম্যুরাল ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধরা। পরে শহরের ঐতিহ্য জাদুঘর প্রাঙ্গণে ম্যুরালসহ জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ম্যুরাল ভাঙচুর করেন তারা। সুনামগঞ্জ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমন দোজ্জা বলেন, দেশে ফ্যাসিবাদের সবকিছু আমরা ভেঙে দিতে চাই। যেন দেশের কেউ আর এই ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার সাহস না করে। 

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শেখ হাসিনাসহ দলটির যেসব নেতা-কর্মী ও অ্যাক্টিভিস্ট জুলাই হত্যার জন্য অনুশোচনা না করে বা নমনীয় না হয়ে, উপরন্তু বিদেশে বসে বিদ্বেষ-উসকানি ছড়াচ্ছেন, তা দেশে থাকা আওয়ামী লীগের নিরীহ কর্মী-সমর্থকদের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ঠেলে দিচ্ছে। কোটা আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনার হটকারিতা তার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও বজায় থাকলে তা আওয়ামী লীগের আরও বিপর্যয় ডেকে আনবে। ছাত্রদের নিয়ে হাসিনার এক বক্তব্যে গদি শেষ হয়ে গেছে। 

আবার বুধবার ছাত্রদের নিয়ে এক লাইভে এসে বক্তব্য দিতে গিয়ে বাড়ি শেষ হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার ফাঁদে পড়ে আওয়ামী লীগ আরও ক্ষয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। 

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস উইংয়ের মিনিস্টার (প্রেস) গোলাম মোর্তোজা তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘গণহত্যাকারী হাসিনার বিচার নিশ্চিত করেন। গণহত্যাকারীর পক্ষ নিয়ে যারা গণঅভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রজেক্ট নিয়ে নেমেছে, এদের গণহত্যার অংশীজন হিসেবে বিচারের আওতায় আনেন। খুনির পক্ষ নেওয়ার অধিকার আছে শুধু তার উকিলের, অন্য কেউ গণহত্যাকারীর পক্ষ নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে গণঅভ্যুত্থানের ম্যান্ডেটে গঠিত সরকার অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। ভাঙার চেয়ে খুনি অপরাধীচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব দেখিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। খুনিরা বিদেশে পালিয়ে গেল, সেখান থেকে উসকানি দিচ্ছে-উত্ত্যক্ত করছে। এদের দেশের সম্পদের দিকে নজর দেন। শহীদ পরিবারের হক আছে খুনি-লুটেরাদের সম্পদে। গণঅভ্যুত্থানের শক্তি মিনমিন করলে ধ্বংস হয়ে যেতে হবে। 

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতির জন্য পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার উসকানি মূলত দায়ী। মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা কখনোই বাংলাদেশের মানুষকে অন্তরে ধারণ করে না। এটি তার ঘৃণিত স্বভাব।’

এটিআর/

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর