Logo

মতামত

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ভাবনা

সমতার পৃথিবী গড়তে নারীকে পথে নামতে হবে

Icon

সুজন বিপ্লব

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫, ১৫:০৭

সমতার পৃথিবী গড়তে নারীকে পথে নামতে হবে

নারীর প্রতিবন্ধকতা পিতৃতান্ত্রিকতা, ধর্মীয় সংস্কার ও লিঙ্গীয় সমস্যা প্রভৃতির বিরুদ্ধে সংগ্রামে নারী বিছিন্নভাবে লড়াই করলে হবে না। রাজনৈতিক সচেতন নারী নেতৃত্বে শক্তিশালী সংগঠন গড়া চাই। এ ক্ষেত্রে আপসকামী এনজিও তৎপরতা এবং সব ধরনের পিতৃতান্ত্রিক সহযোগীদের থেকে সাবধানতা জরুরি। বর্তমানে মেয়েরা মোটরসাইকেল চালনার সংখ্যা বাড়ছে। কয়েক বছর আগেও এসব নিয়ে প্রচুর নেতিবাচক সমালোচনা ছিল। নারী রোজগার করলে ভিন্ন আদর্শের বৈপরীত্যে সত্ত্বেও অনেকে বিষয় সমাজ ও পরিবারে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণও করে, এমনকি মর্যাদা সম্পন্ন হয়। ব্যক্তিমানুষের আচরণটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার ব্যবহারে যদি কেউ সন্তুষ্ট হন, তাহলে আমার অনেক বিষয় স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেন। আর স্বতন্ত্র বোধ, নৈতিকতা ও ঘাড়ত্যাড়ামী তো থাকতেই পারে। একজন ব্যক্তিমানুষ একইসাথে অনেক ভূমিকা পালন করেন। একজন মানুষ একইসাথে একজন সমাজকর্মী, একজন রাজনৈতিক কর্মী, একজন সংগঠক, স্বাস্থ্যকর্মী ইত্যাদি ভূমিকার ফলে তার গ্রহণযোগ্যতাও বৃদ্ধি পায়। জনগণের সাথে মেলামেশার ক্ষমতা ও বৃদ্ধি পায়। 

শোষণহীন সমাজদর্শনের মানব মুক্তির ধারায় নারীকে তার চিন্তার স্বাধীনতা ব্যতীত নারীর স্বাধীনতা পোষাকি হলে নারীর পোশাকের বিবর্তন বিষয়ক আলাপটা আসলে নারী মুক্তির তাগিদে কাজের আলাপ কতটা হচ্ছে? আমার স্ত্রীকে বললাম, ঘোমটা-গহনাদি নারীকে শোষণের শিকলে আটকে রেখেছে। প্রত্তুরে ‘গৃহকর্মের বাইরে নারীর অবাধ বিচরণ যেখানে স্বীকৃত নয়, সেই সমাজের শোষণচিত্র হিসেবে এখন নারীর পোশাক-পরিচ্ছদ কোনো জরুরি কাজের ভাবনা হতে পারে না। নারীর প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করছি না' জানিয়েছে। তার ছাত্রজীবন থেকে কাজ, উপার্জন ও স্বাবলম্বী হওয়ার দুর্বার আকাঙ্ক্ষা থেকে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজে নিয়োজিত রয়েছে। আমি তাকে মোটর বাইক চালনা শিখিয়েছি। রাজনীতি-সংস্কৃতির তাত্ত্বিক, সাংগঠনিক ও সামাজিক পাঠের জানাবুঝার সুযোগ আমাদের রয়েছে। আবার আমার জীবনসঙ্গী বলেই সবকিছু সহজভাবে রপ্ত করতে পেরেছে, এমনটা ভাবলে অবিবেচনাপ্রসূত হবে। সামাজিক সীমাবদ্ধতাকে কৌশলে মাড়িয়ে আমাদেরও চলতে হয়। বুর্জোয়াকালচারের বিরুদ্ধে প্রগতিমুখী লক্ষ্য ধারণে সচেতন বোধ লালন করে চলেছি। এই বাস্তবতা সব নারীর জীবনেও নেই। তো পোশাক-গহনাদির শোভন ও শালীন ব্যবহার কিরূপ হবে, তা প্রচল সমাজ নারীকে চাপিয়ে দিয়েছে।

ঘরে-বাইরে নির্যাতিত নারীর সর্বাঙ্গীন মুক্তির জন্য কোনরূপ সামাজিক বিধি-নিষেধ বাঞ্ছনীয় হতে পারে না। কেউ ঘোমটা-গহনাদি আবার কেউ হিজাব-বোরকা আর শুধু পর্দার জন্য কঠোর অবস্থান জানান দেয়। প্রচলিত বাস্তবতায় নারীর পরিধেয় নিয়ে আলাপটা জরুরি নয়। অতএব, সে যাতে স্বস্তি পায়, সেটা পরছে, ধর্মান্ধতাকে অস্বীকারের জগতে পূর্বতন পোশাক পরেই আসুক। তারা তো একটা সামাজিকতায় বাধ্য হয়ে অনেকেই পোশাকাদি পরিধান করছে। এটা আমাদের প্রধান সমস্যা নয়।

আসলে চিন্তার পরিবর্তন ঘটলে তখন দৃশ্যপট তো প্রগতিশীল পরিবেশের অনুকূলে চলে যাবে। এখনও শতভাগ নারী বোরকা পরেই হোক, কামিজ পরেই হোক আর শাড়ি পরেই হোক ঘরের বাইরে জীবিকার প্রশ্নে শত প্রতিবন্ধকতায় আসতেও পারছে না, টেকা তো দূরবর্তী আলাপ। নারীর কর্মক্ষেত্রে কাজের নিশ্চয়তা নেই, নেই কোনো নির্ধারিত শ্রমঘণ্টা, উপযুক্ত কর্ম পরিবেশ নেই, নারীর সন্তানের নিরাপত্তা নেই, দেহের নিরাপত্তা নেই, শ্রম দিয়েও পরিবারে স্বস্তি নেই তখন এসব বড় সমস্যা না ভেবে মগজে ইউটোপীয় চিন্তন পুষে নারীকে অবরুদ্ধ করতে আমার ভেতরকার পিতৃতন্ত্র বা পুরুষতন্ত্র অদম্য হয়ে ওঠে। তাই চিন্তার ক্ষেত্রেও যৌক্তিক অনুশীলন চাই।

নারী মুক্তি তথা মানব মুক্তির প্রধান অন্তরায় পুঁজিবাদী সামাজিক ব্যবস্থায় ধর্মকে আলোচনার বাইরে রাখা যাবে না। তবে ভয়ের ব্যাপার যে, অনুভূতিতে আঘাত হানার মিথ্যা দায়ে রাষ্ট্র আমাদের আলোচনায় খড়গ চালাতে সিদ্ধহস্তে আগুয়ান হয়েছে। বিপরীত আলোচনায় যদিও প্রগতিশীল শিবিরের অনুভূতি কখনও আঘাত পায়নি। অনুভূতিতে আঘাতপ্রাপ্তের বিষয় ক্ষমতার রাজনৈতিক কারসাজিতে চালান হয়ে থাকে। বিকল্প আলোচনা দিয়েই আমরা মুক্তি অন্বেষণের পথে থাকি। এই ধর্ম কীভাবে এসেছে? কেনো মানুষ শেষ ভরসা ধর্মে পাচ্ছে? কেনো মনে করছে সকল অন্যায়ের শেষ বিচার উপরওয়ালাই করবে? ধর্মকে পুঁজিবাদই ধর্মীয় রাজনীতির রূপ দিয়েছে। ধর্ম নারীকে গৃহলক্ষ্মী করে ঘর পর্যন্ত বিচরণের সীমানা নির্ধারণ দিয়েছে। পিতৃতন্ত্রী তথা পুরুষতান্ত্রিক নারীকে দেখে বা এলিট শ্রেণির নারীকে দেখিয়ে নারীর অগ্রগতির সূচক ভাবনাতো আবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রীসহ নারীর উচ্চাসনের আলাপকে মিশিয়ে নারীমুক্তি ভাবলে অপ্রকৃতিসহ প্রলাপে পরিণতি পাবে।

সামাজিক কাঠামো বিন্যাসের উঁচু স্তরের সুবিধাভোগী নারীর অবস্থানের বাইরে সর্বত্র নিগৃহীত নারী সমাজকে অন্তত নারীমুক্তির অন্যতম লিজেন্ড রোকেয়ার পর্দাঘেরা গাড়িতে স্কুলগামী প্রয়াসের মতো নারীকে আপাতত যেভাবেই হোক ঘরে-বাইরে চলাফেরা ও কর্মসংস্থানের গ্যারান্টির ইতিবাচক বিষয়টা এই মুহূর্তে আসলেই প্রধান কাজের আলোচ্য। দীর্ঘ প্রতিক্রিয়াশীলতায় ধেঁয়ে আসা ঘন আঁধার ঘোচাতে সলতের আলোকে পরিপূর্ণ আলোয় রূপান্তরিত করে ছড়িয়ে দিতে সজাগ পদক্ষেপ নিতে হবে। তাই সমতার মানবিক পৃথিবী গড়তে নারীকে যেভাবেই হোক পথে নামতে হবে। এই রাজনীতিটা না জেনে হটকারি আওয়াজ তুললে নারীপ্রগতি ও মানবিক সাম্যের সমাজের গোর খোড়ার সামিল হবে।

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মানবমুক্তির সংগ্রামে মুক্তমানবের মুক্তসমাজ প্রতিষ্ঠার সমতার আদর্শে নারীর বাক-স্বাধীনতার, অবাধ বিচরণ ও মানবিক মর্যাদায় রাষ্ট্রের কৈফিয়ত ও সক্রিয় উদ্যোগ সময়ের নির্ধারিত প্রয়োজন। 

সুজন বিপ্লব : গবেষক ও সংগঠক

  • বাংলাদেশের খবরের মতামত বিভাগে লেখা পাঠান এই মেইলে- bkeditorial247@gmail.com

এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর