-68035343b7d75.jpg)
গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর
বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণসহ সহিংসতার মতো ঘটনা বেড়েই চলছে। যাদের দ্বারা শিশুরা সুরক্ষিত ও নিরাপদ থাকার কথা, তাদের হাতেই বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ শিশু প্রতিনিয়ত সহিংসতা, ভর্ৎসনা এবং শোষণের শিকার হয়।
ধর্ষণ হলো এমন একটি অপরাধ, যেখানে একজন ব্যক্তি জোরপূর্বক বা অসম্মতিতে অন্য একজন ব্যক্তির সাথে যৌনসঙ্গম করে। এটি শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে অত্যন্ত ভয়াবহ অপরাধ এবং বিশ্বজুড়ে আইনত দণ্ডনীয়। আর শিশু ধর্ষণ হলো, ১৮ বছরের কমবয়সী শিশুর সঙ্গে সম্মতি ছাড়া বা জোরপূর্বক যৌনসঙ্গম বা যৌন কার্যক্রম করা। বলে রাখছি যে, এখানে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু আইনত সম্মতি দিতে সক্ষম নয়।
ইউনিসেফের তথ্যমতে, গত বছর ২০২৪ সালে ১ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৯০ ভাগ শিশু প্রতি মাসে গৃহে মানসিক বা শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছে।
বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে ১০২টি শিশু আদালত থাকা সত্ত্বেও কিশোর-কিশোরীদের জন্য যে বিচার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে ২৩ হাজারেরও বেশি মামলার এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।
২০২৩ সালে মোট ৯৭১টি শিশু নির্যাতনের ঘটনা বিভিন্ন রিপোর্টে উঠে এসেছে। যার ফলে ৪৪৯ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে ৭৫ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালে মোট ৪৩৯৪টি ধর্ষণের মামলা নথিভুক্ত হয়েছে যার মধ্যে অনেক ভুক্তভোগী শিশু। একই বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ২২৪ জন মেয়েশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যার মধ্যে ৮১ জনকে হত্যা এবং ১৩৩ জন আত্মহত্যা করেছে।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ৯৯৭৭টি ধর্ষণ মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। যা দৈনিক গড়ে ১৩টি নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা নির্দেশ করে।
২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে ৩৯২টি ধর্ষণ মামলা দায়ের হয়েছে, যা পূর্ববর্তী দুই বছরের জানুয়ারি মাসের তুলনায় সর্বোচ্চ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের বিভিন্ন যৌন সহিংসতার ঘটনাগুলোর মধ্যে ৬৩ ভাগ ভুক্তভোগী শিশু। যাদের বয়স ৩ থেকে ১২ বছরের মধ্যে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান শিশুদের প্রতি যৌনসহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং ইউনিসেফের পূর্ববর্তী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিশ্বজুড়ে প্রতি ৫ জন মেয়ে শিশুর মধ্যে ১ জন এবং প্রতি ১৩ জন ছেলে শিশুর মধ্যে ১জন ১৮ বছর হওয়ার আগেই যৌনসহিংসতার শিকার হয়ে থাকে।
চলতি বছরে বাংলাদেশ সরকার ধর্ষণ মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ প্রণয়ন করেছে। এই আইনটি ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে কার্যকর করা হয়েছে। নতুন এই অধ্যাদেশে তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধর্ষণ মামলার তদন্ত ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ও বিচার প্রক্রিয়া ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করার কথা বলা হয়েছে। এখানে শিশু ধর্ষণ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এই পরিসংখ্যানগুলো থেকে বোঝা যায় যে, শিশুদের প্রতি যৌনসহিংসতা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতন একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি। ধর্ষণ মামলা তদন্ত ও বিচার নির্ধারিত সময়সীমায় শেষ করতে হবে। দোষী প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তির বিধান কার্যকর করতে হবে। মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে হবে। শিশু যেন তার পরিবারের সাথে নিরাপদে কথা বলতে পারে তার সাথে সে সুসম্পর্ক তৈরি করতে হবে। নির্যাতনের শিকার শিশুকে দোষারোপ না করে তার এবং পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো কীভাবে নারী শিশু নির্যাতন কমিয়ে আনছে তার দিকে নজর দিতে হবে এবং বিশ্লেষণ ও প্রয়োগের মধ্য দিয়ে শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা কমানো যাবে।
রিফাত আমিন রিয়ন : কলামিস্ট ও সংবাদকর্মী, জয়পুরহাট
- বাংলাদেশের খবরের মতামত বিভাগে লেখা পাঠান এই মেইলে- bkeditorial247@gmail.comি
এমএইচএস