Logo
Logo

অন্যান্য

ইচ্ছাশক্তির আলো

অন্ধত্বকে জয় করা এক আইনজীবীর গল্প

Icon

জি. এম. আদল

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:২১

অন্ধত্বকে জয় করা এক আইনজীবীর গল্প

অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর অধ্যবসায় থাকলে কোনো প্রতিবন্ধকতাই দমিয়ে রাখতে পারে না। মানুষের ইচ্ছাশক্তির কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও যে হার মেনে নেয়, তার জীবন্ত উদাহরণ অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন মজুমদার। চোখে দেখতে না পেয়েও তিনি হয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী।  

দৃষ্টিহীন মানুষ কিভাবে আইনজীবী হয়? শুনে অবাক লাগছে? তার জীবনের পথচলার গল্প, শিক্ষাজীবনের সাফল্যের গল্প শুনলে আপনি আরও অবাক হবেন।  

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও শিক্ষাজীবনে বোর্ড স্ট্যান্ড করেছিলেন অদম্য মোশাররফ হোসেন মজুমদার।  

তার জন্ম ১৯৫৮ সালের ৬ জুন ফেনী জেলায়। মাত্র চার বছর বয়সেই টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে তিনি হারিয়ে ফেলেছিলেন দৃষ্টিশক্তি।  

ডাক্তার জানিয়ে দিলেন, মোশাররফ হোসেনের দৃষ্টিশক্তি আর ফিরে আসবে না। এ কথা শুনে তার বাবা হতভম্ব হয়ে গেলেন। ডাক্তার তখন সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন, ‘আপনার ছেলে চোখ থাকলেও যেমন লেখাপড়া করতো, না থাকলেও সে সব ধরনের লেখাপড়া করতে পারবে।’ 

 চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. টি. আহমেদ জানালেন, তিনি ইসলামিয়া ব্লাইন্ড (অন্ধ) স্কুল নামে একটি বিশেষায়িত স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। পরবর্তীতে এই স্কুলেই পড়াশোনা শুরু করেন অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন।  

অন্ধত্বকে দূরে ঠেলে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার ইচ্ছাশক্তি নিয়ে সামনে এগিয়ে যান তিনি। ব্রেইল পদ্ধতিতে শুরু করেন পড়াশোনা।  

ব্রেইল পদ্ধতিতে কাগজের ওপর বিন্দু ফুটিয়ে তুলে লেখার এক ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই বিন্দুগুলোতে আঙুল বুলিয়ে দৃষ্টিহীনরা পড়াশোনা করেন।  

তবে সেই স্কুলে বেশিদিন পড়া হয়নি তার। তখন তেজগাঁওয়ে আরেকটি স্কুলে ভর্তি করানো হয়। সেখানে লেখাপড়া চলাকালে সরকার স্কুলগুলো জাতীয়করণ করে। তখন সারাদেশে পাঁচটি সরকারি স্পেশাল স্কুল ছিল, যারা ব্রেইল পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করতো।  

একপর্যায়ে তিনি বরিশালের সাগরদীতে একটি স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে এসএসসি সম্পন্ন করেন।  

এরপর বরিশাল বিএম কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হন। এইচএসসিতে ফার্স্ট ডিভিশন পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তখন বরিশাল যশোর বোর্ডের অধীনে ছিল।  

১৯৭৭ সালে মোশাররফ হোসেন মজুমদার যশোর বোর্ডে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে ১৯তম স্থান অধিকার করেন।  

ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। সফলতার সঙ্গে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে আইনজীবী পেশায় যাত্রা শুরু করেন এই অদম্য মানুষটি।  

১৯৮৩ সালে তিনি জজ কোর্টে আইনপেশা শুরু করেন। ১৯৮৫ সালে অ্যাসিস্ট্যান্ট পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে তিনি হাইকোর্টে প্র্যাকটিসের অনুমতি পান এবং ২০০২ সালে আপিল বিভাগের অ্যাডভোকেট হন।  

২০২৪ সালে তিনি সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের সভাপতিত্বে এনরোলমেন্ট কমিটি আপিল বিভাগের ৫৪ জন আইনজীবীকে সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন। তাদের মধ্যে মোশাররফ হোসেন মজুমদারও স্থান পান। এর ফলে সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো দৃষ্টিহীন আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে স্বীকৃতি পান।  

অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন মজুমদার বিশ্বাস করেন, ‘জীবনে সফল হতে হলে চারটি বিষয় থাকা জরুরি- লক্ষ্য, অধ্যবসায়, কঠোর পরিশ্রম এবং আন্তরিকতা। পাশাপাশি অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হবে।’ 

এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর