Logo

রাজনীতি

এনসিপি-জামায়াত চায় বিচার, বিএনপি চায় নির্বাচন

মো. বাবুল আক্তার

মো. বাবুল আক্তার

প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৫, ১০:০২

এনসিপি-জামায়াত চায় বিচার, বিএনপি চায় নির্বাচন

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণহত্যার বিচার চলছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ৭ মাস পরও ধরা পড়েনি জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যা-নির্যাতনে জড়িত বেশির ভাগ আসামি।

এরমধ্যে নির্বাচন ইস্যুতে চাপ বাড়ছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। এ অবস্থায় জাতীয় নির্বাচনের আগেই বিচার কাজ শেষ করার দাবি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামীর। তবে বিএনপির দাবি আগে জাতীয় নির্বাচন। কারণ, দীর্ঘমেয়াদি বিচার প্রক্রিয়ার জন্য নির্বাচনে দেরি করা যুক্তিসঙ্গত নয়।

এদিকে এত দিনেও বিচার প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় হতাশ হতাহতদের পরিবার। জুলাই অভ্যুত্থানে মোহাম্মদপুরে নিহত মাহমুদুর রহমান সৈকতের মা ছেলের স্মৃতি হাতড়ে বলেন, আমার মন চায় যখন, ছবি-টবি দেখি। মনে হয় ছেলেটাকে ধরে নিয়ে আসি। মনে হয় ও এখানেই কোথাও আছে। বিচারে কেন দেরি হচ্ছে- প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন; কেন দেরি হচ্ছে, এটা নিয়ে আমারও প্রশ্ন। দেরি হবেই বা কেন?

গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রায় আড়াই মাস পর, ১৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গণঅভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ শাসনামলে সংঘটিত গুম, খুন, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে এই ট্রাইব্যুনালে। যদিও এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য। 

ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় সূত্র বলছে, গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যা ও গণহত্যা এবং আওয়ামী লীগের বিগত সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এ পর্যন্ত ৩০০টির মতো অভিযোগ এসেছে। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে ট্রাইব্যুনালে ১৬টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি মামলা হয়েছে গুমের ঘটনায়। বাকি ১৩টি মামলা হয়েছে গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায়। ১৬ মামলার মধ্যে ২টিতে আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে।

এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, জুলাই গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করা একটি কঠিন প্রক্রিয়া। তাই এ বিষয়ে কাউকে চাপ না দিতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বুধবার ট্রাইব্যুনালে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।

এর আগে বিচার প্রক্রিয়ায় সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক দুই কূটনীতিক। রাইট টু ফ্রিডম নামের মার্কিন থিংকট্যাঙ্কের পক্ষ থেকে সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পরিদর্শ করেন তারা। সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম ও কূটনৈতিক জন ড্যানিলোভিজ সকালে ট্রাইব্যুনাল পরিদর্শনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তারা বিচারের বর্তমান অগ্রতি ও সার্বিক খোঁজখবর নেন।

অন্যদিকে, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, যতদিন না খুনি হাসিনা এবং তাদের দোসরদের বিচার না হচ্ছে, হাসিনাকে আমরা ফাঁসির মঞ্চে না দেখছি, ততদিন এই বাংলাদেশে ভুল করেও কেউ যেন নির্বাচনের কথা না বলে। তাদের বিচার এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় করতে হবে এবং যে সময়টুকু এই সরকারের আছে- নির্বাচনের আগেই খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে নিয়ে এসে ফাঁসির মঞ্চে নিতে হবে।

জামায়াতে ইসলামী বলছে, বিচারের আগে নির্বাচন হলে তা হবে প্রশ্নবিদ্ধ। দলটির মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বিচার করা দরকার নির্বাচনের আগে। তা না হলে, নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়া নিয়েও আশঙ্কা আছে। এজন্য আমরা চাই, সংস্কার ও বিচার এই দুটো কাজ করতে হবে তারপর ইলেকশন করতে হবে। এবং এটা এই সময়ের মধ্যে করা সম্ভব।’

তবে বিচার দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া জানিয়ে বিএনপি বলছে, এজন্য নির্বাচন আটকে রাখা উচিত নয়। দলটির বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘নিম্ন আদালত থেকে জাজেস কোর্ট, জাজেস কোর্ট থেকে হাইকোর্ট, হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের আবার আপিল বিভাগের রিভিউ পর্যন্ত। এই যে এতগুলো স্তর পার হওয়া, এটা করতে তো বহু বছর লেগে যাবে। তাহলে কী আমরা বিচারের জন্য বহু বছর গণতন্ত্রহীন অবস্থার মধ্যে থাকব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার বিচারের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নাই। বিচারিক বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরকার পরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক নাই। স্বাধীন বিচার বিভাগ বিশ্বাস করলে নির্বাচন নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করা কাম্য নয়। শুধু শেখ হাসিনা নয়, আওয়ামী লীগে বাকি অপরাধীদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। নির্বাচিত সরকারও শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অপরাধীদের বিচার করার বিষয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে নানা প্রস্তাবজুড়ে দেওয়া শেখ হাসিনা সরকারের ফ্যাসিস্ট চরিত্র মতো।

সমাজকর্মী ড. শহিদুল আলম বলেন, আমি কখনই চাইব না যে এমন একটা বিচার হোক যেটাকে পাল্টে দেওয়া যায়, যেটাকে প্রশ্ন করা যায় এবং যে মানুষগুলো এরকম একটি অন্যায় করেছে তারা পার পেয়ে যায়। এ কারণে সুষ্ঠু বিচারের জন্য যে সময়ই লাগা দরকার, আমি মনে করি যে সেটা হওয়া উচিত। তাড়াহুড়া না করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

  • ওএফ
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর