Logo
Logo

রাজনীতি

শেখ হাসিনার আসন্ন 'ভার্চুয়াল বৈঠক' ঘিরে আওয়ামী লীগে কী চলছে

Icon

বিবিসি

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:২৭

শেখ হাসিনার আসন্ন 'ভার্চুয়াল বৈঠক' ঘিরে আওয়ামী লীগে কী চলছে

আন্দোলনের মুখে গত আগস্টে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। সেখানে তিনি 'দিকনির্দেশনামূলক' ভাষণ দেবেন। উদ্যোগটি সফল হলে এটিই হবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার নেতাকর্মীদের প্রথম বৈঠক।

এ উদ্যোগটি এমন সময় নেয়া হলো যখন দলটির সিনিয়র নেতাদের প্রায়ই সবাই জেলে কিংবা আত্মগোপনে। অন্যদিকে আত্মগোপনে থাকা সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে দলের কর্মীদের অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।

অবশ্য সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন "আওয়ামী লীগ আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবির্ভূত হবে"। তবে সেটি কীভাবে হতে পারে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা তিনি দেননি।

এর আগে শেখ হাসিনা লন্ডন, ফ্রান্স ও ব্রাসেলসে প্রবাসী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে ফোনে বক্তব্য দিলেও দলটির নেতাদের সাথে তার যোগাযোগের কোনো তথ্য এতদিন পাওয়া যায়নি।

ঢাকা, কলকাতা ও লন্ডনে থাকা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেছেন শেখ হাসিনা দলের নেতাদের উদ্দেশে ভাষণ দিবেন- এমন খবরে তারা উচ্ছ্বসিত। তারা মনে করেন 'বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতিতে' জেলের বাইরে থাকা নেতাদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের এ চেষ্টার মাধ্যমেই আওয়ামী লীগের 'ঘুরে দাঁড়ানোর' প্রচেষ্টা শুরু হতে যাচ্ছে।

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন যে শেখ হাসিনাসহ দলের নেতারা এর মধ্যেই তৃণমূলের নেতাদের সাথে কথা বলতে শুরু করেছেন।

"দেশের চল্লিশ ভাগ ভোটার আওয়ামী লীগের। সব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেই আমরা ঘুরে দাঁড়াবো। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হলে নির্বাচনেও যাবো। এটাই আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। আমরা দলকে সংগঠিত করার কার্যক্রম শুরু করেছি," বলেছেন তিনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলেছেন, শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। সে কারণে তিনি তার দলের নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠক করতেই পারেন।

"এমন বৈঠক হলে সেটি হয়ত হবে দলটিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টার অংশ হিসেবে একটি রাজনৈতিক কৌশল। তবে দেখার বিষয় হবে সে বৈঠকে শেখ হাসিনা কী বার্তা দেন," বলেছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত পাঁচই আগস্ট পদত্যাগে বাধ্য হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার তার পাসপোর্ট বাতিল করেছে। অন্যদিকে ভারত তাকে দীর্ঘসময় ধরে সেখানে অবস্থানের অনুমতি দিয়েছে।

কী করছে আওয়ামী লীগ

বাংলাদেশে আত্মগোপনে থাকার পাশাপাশি কলকাতা ও লন্ডনে অবস্থানরত কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার সাথে কথা বলে যে ধারণা পাওয়া গেছে তা হলো জেলের বাইরে থাকা নেতাদের সাথে শেখ হাসিনার সংযোগ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

দলটির নেতারা ধারণা দিয়েছেন কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন লেভেল পর্যন্ত দলটির সাবেক এমপি ও শীর্ষ নেতারা আটক হওয়ার কারণে সম্ভাব্য বিকল্প নেতাদের সাথে যোগাযোগের কাজ শুরু হয়েছে।

শেখ হাসিনা এর মধ্যেই ব্রিটেনসহ কয়েকটি দেশের আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সাথে কথা বলার পাশাপাশি বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ের বেশ কিছু নেতার সাথে ফোনে কথা বলেছেন।

অন্যদিকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ বিতর্কিত কয়েকজনকে কোনো কার্যক্রমে জড়িত না হওয়া এবং গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের হয়ে কোনো মন্তব্য না করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে- এমন তথ্য পাওয়া গেলেও তার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

এর মধ্যেই খবর এসেছে যে আগামী উনিশে জানুয়ারি শেখ হাসিনা তার দলের নেতাদের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন কিংবা নেতাদের উদ্দেশে ভাষণ দিবেন।

"আমরা জানতে পেরেছি নেত্রী ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন। তার ভাষণে দিকনির্দেশনা দিবেন। বৈঠকটির জন্য আমরা গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। আওয়ামী লীগ এভাবেই সব প্রতিকূলতা জয় করে জনগণকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাবে," বলেছেন লন্ডনে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হেমায়েত উদ্দীন খান।

দলের মধ্যম সারির কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধীরে ধীরে সক্রিয় হতে চাইছে আওয়ামী লীগ। যদিও দলটির সাবেক এমপি ও মন্ত্রীদের অনেকেই জেলে আর বাকিরা আত্মগোপনে রয়েছেন।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, কামরুল ইসলাম, মুহাম্মদ ফারুক খান, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও কাজী জাফরউল্লাহ বিভিন্ন মামলায় আটক হয়ে এখন কারাগারে।

অন্যদিকে বেগম মতিয়া চৌধুরী মারা গেছেন। আর আত্মগোপনে আছেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আব্দুল মান্নান, আব্দুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য এবং এদের মধ্যে অনেকেই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।

সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। আর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি কারাগারে থাকলেও মাহবুব উল আলম হানিফ, ড. হাছান মাহমুদ ও আফম বাহাউদ্দিন নাছিম আত্মগোপনে রয়েছেন।

সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে আহমদ হোসেন আটক হয়ে কারাগারে আছেন। বাকিরা দেশে কিংবা বিদেশে আত্মগোপনে আছেন। সম্পাদকমণ্ডলীতে যারা ছিলেন তাদের অবস্থান সম্পর্কেও পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যায়নি। খবর নেই দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ারও।

গত ১৮ই আগস্ট সেনাবাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়েছিল ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর 'জীবন সংশয়ের আশঙ্কা থাকায়' দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে ৬২৬ জনকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।

কিন্তু এসব ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। ফলে বোঝা যাচ্ছে না সেনাবাহিনীর আশ্রয়ে যারা ছিলেন, তারা কি দেশ ত্যাগ করেছেন নাকি দেশের ভেতরেই আছেন।

পরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কলকাতার একটি পার্কে বসে আছেন। শামীম ওসমানকে দিল্লিতে দেখা গেছে।

আওয়ামী লীগের তিন নেতা বিপ্লব বড়ুয়া, জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আসাদুজ্জামান খান। মি. খানকে কোলকাতায় দেখা গেলেও বাকিদের অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যায়নি।

ছবির ক্যাপশান,আওয়ামী লীগের তিন নেতা বিপ্লব বড়ুয়া, জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আসাদুজ্জামান খান। মি. খানকে কোলকাতায় দেখা গেলেও বাকিদের অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যায়নি।

এমন পরিস্থিতিতে দলীয় সভানেত্রীর ভার্চুয়াল বৈঠক কিংবা নেতাদের উদ্দেশে ভাষণ- দেওয়ার উদ্যোগকে 'একটি রাজনৈতিক কৌশলই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন।

তার মতে যেহেতু আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ নয় সে কারণে দলীয় প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা তার নেতাদের সাথে কথা বলতেই পারেন।

"তিনি তার দলের নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করা কিংবা দলকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক রাখার উদ্যোগ নিবেন সেটিই স্বাভাবিক। আমার ধারণা দল হিসেবে মানুষের কাছে ফিরে আসার চেষ্টার অংশ হিসেবেই তার এই উদ্যোগ। দেখা যাক কী বার্তা তিনি দেন এবং তার বার্তা মানুষ কীভাবে গ্রহণ করে সেটিও দেখার বিষয় হবে," বলেছেন তিনি।

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম অবশ্য বলছেন সংকটময় সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ঐতিহ্য আওয়ামী লীগের আছে।

"কিন্তু মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ কোনো দল নয়। তারপরও আওয়ামী লীগকে কাজ করতে দেয়া হয় না। গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরেছে। আমাদের বক্তব্য বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় ছাপাতে দেওয়া হয় না। সারাদেশে নেতাকর্মীদের ওপর মামলা হামলা চলছে। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এর বিরুদ্ধেই আমরা রুখে দাঁড়াবো," বলেছেন তিনি।

"আমরা দলকে সংগঠিত করার কার্যক্রম শুরু করেছি। শেখ হাসিনার নির্দেশনা নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করছি। শেখ হাসিনা নিজেও যোগাযোগ করছেন প্রতিটি ইউনিটে তৃণমূল পর্যায়ে। এটুকু বলতে পারি যে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়াবে এবং অচিরেই," বলেছেন তিনি।

ওদিকে শুক্রবার ১০ই জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ঢাকায় ও টুঙ্গিপাড়ায় শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি শীতবস্ত্র বিতরণের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাহাউদ্দিন নাছিম।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন ও দিল্লি হয়ে ১৯৭২ সালের দশই জানুয়ারি ঢাকায় ফিরে এসেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর