সংসদ নির্বাচন
প্রার্থী বাছাইয়ে নয়া কৌশলে বিএনপি
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:৪৫
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর আবারো গণতন্ত্রের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন সংস্কারের পাশাপাশি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এরপর থেকেই বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবি জানিয়েছে। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চলতি বছরের ডিসেম্বর বা ২০২৬ সালের জুনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
তবে, চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে নির্বাচনের দেওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। ঘোষিত সময় অনুযায়ী তৃণমূলে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থী ও জোটের হিসাবও কষছে দলটি।
২০১৮ সালের প্রার্থীদের অগ্রাধিকার
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছিল। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। ব্যাপক কারচুপির ফলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অনেক প্রার্থী। বিতর্কিত ওই নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট পায় মাত্র সাতটি আসন। যেখানে বিএনপি পায় মাত্র পাঁচটি আসন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি।
অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো পুরোপুরি ভেঙে যাওয়ায় বিএনপি এখন দেশের সবচেয়ে বড় দল। বিএনপি নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক আসনে জয়লাভ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দলের প্রার্থী হতে চাইবেন অনেকেই। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে ত্যাগীদের প্রার্থী করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
প্রার্থী বিবেচনায় অগ্রাধিকার পাবেন ২০১৮ সালের প্রার্থীরা। কারণ হিসেবে জানা গেছে, ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের পাতানো নির্বাচন বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে ভূমিকা রেখেছেন ২০১৮ সালের বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আওয়ামী লীগের পাতানো নির্বাচন জনগণের সামনে প্রামণিত হয়ে যায়।
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যে এলাকায় জনসংযোগ করছেন। বিএনপির কেন্দ্র থেকে নির্দেশিত বিভিন্ন সভাসমাবেশ বাস্তবায়ন করছেন।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি অনেক বড় দল। আমাদের বহু ত্যাগী নেতাকর্মী রয়েছেন। দলের জন্য যাদের অতীত ভূমিকা ভালো তারাই মনোনয়ন পাবেন।’
অনিশ্চিত বিএনপি-জামায়াত জোট
বিএনপির সাথে জোটের হিসেব এলে প্রথমেই আসে জামায়াতে ইসলামীর নাম। তবে দীর্ঘদিন একসাথে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেও দুই দলের মধ্যে সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সবশেষ ২০১৮ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জামায়াতে ইসলামী। তখন জামায়াতকে ২৫টি আসন ছেড়ে দেয় ঐক্যফ্রন্ট। যদিও জামায়াত কোনো আসনেই জয় পায়নি।
হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে যে টানাপোড়েন চলছে এতে অনেকটা নিশ্চিত এই দুই দলের মধ্যে জোট হচ্ছে না। যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় সেক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রসঙ্গ আসতে পারে। তবে জামায়াতের পক্ষ থেকে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণায় স্পষ্ট হয়েছে যে দল দুটির মধ্যে জোট হচ্ছে না। ইসলামপন্থী দলগুলোকে নিয়ে একটি শক্তিশালী জোট গঠন করতে চাচ্ছে জামায়াত। যেন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের সুযোগ না পেলে বিএনপির শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে তারা মাঠে টিকে থাকতে পারে।
বিএনপি ইতোমধ্যে আন্দোলনে থাকা শরিক দলগুলোকে আসন ছাড় দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে দলের পক্ষ থেকে শরিক নেতাদের নির্বাচনী এলাকায় সহযোগিতার জন্য ছয়টি জেলার বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের জরুরি চিঠি দিয়েছে।
ওই ছয়টি আসন হলো- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব (লক্ষ্মীপুর-৪), নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না (বগুড়া-৪), গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি (ঢাকা-১২ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬), গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর (পটুয়াখালী-৩) ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান (ঝিনাইদহ-২) এবং বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা (কিশোরগঞ্জ-৫)।
ডিসেম্বরকে সামনে রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতি ইসির
নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ ও সুপারভাইজার কর্তৃক বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাই করা হবে ২০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ২০২৬ সালের জুনের মাঝে নির্বাচনের কথা বলেছেন। আমরা প্রথম তারিখটাকে ধরে নিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তারপরও রাজনৈতিক মতৈক্য যেখানে দাঁড়াবে আমরা সেই মোতাবেক কাজ করব।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের হাতে নেই। এখন একটি পরিবর্তিত পরিস্থিতি চলছে। এখানে রাজনৈতিক ঐক্যের বিষয় রয়েছে। সেই অনুযায়ী কাজ করব।’
এসআইবি/ওএফ