ফ্যাসিবাদ বিরোধী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : তারেক
![Icon](https://www.bangladesherkhabor.net/uploads/settings/ezgif-7-c58f72a6c2icon-2-1730277221.png)
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩:৫৭
![ফ্যাসিবাদ বিরোধী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : তারেক](https://www.bangladesherkhabor.net/uploads/news_photos/2025/01/29/bangladesher-khabor-679a6bedd102c.jpg)
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি খাত ধ্বংস করে দিয়ে গেছে স্বৈরাচার হাসিনা সরকার। আগামীর সরকারের জন্য দেশ চালানো হবে এক চ্যালেঞ্জ। কাজেই, আগামীতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ ফিরতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। দেশের ভেতরে ও বাইরে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। কারণ, বিএনপি জনগণের দল। নিজেদেরকে জনগণের আস্থায় নিয়ে যেতে হবে, শুধরাতে হবে।’
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেব ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ঝিনাইদহ ড্রিম ভ্যালি অডিটরিয়ামে জেলা বিএনপি এই কর্মশালার আয়োজন করে।
তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপির বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জনগণের আস্থা নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে দলের নেতাকর্মীদের এক থাকতে হবে। বিএনপির নেতাকর্মীকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির ৩১ দফা কেবল দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। ৩১ দফার মাধ্যমে আমরা দেশের মানুষের পরিবর্তন ঘটাতে চাই, যেটি মানুষ প্রত্যাশা করে। এই পরিবর্তন কোনো যাদু বা ম্যাজিক নয় যে, বলব আর হয়ে যাব। এজন্য জনগণের আস্থা ধরে রাখার জন্য নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তাই আমাদের ভাবনায় শুধুই জনগণ, জনগণ ও জনগণ। এই ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা সকল জুলুম নির্যাতনের প্রতিশোধ নেব।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও গত ১৬ বছর গুম খুনের শিকার ভুক্তভোগী পরিবারের উদ্দেশে তারেক বলেন, যারা আন্দোলন সংগ্রামে শহীদ হয়েছেন তাদেরকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হবে। তালিকা করে শহীদ ও আহতদের খোঁজখবর নেওয়া হবে। আমরা বিগত দিনগুলোতে দলীয়ভাবে এসব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রীয়ভাবে কাজ করার চেষ্টা করব। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে নিজ নিজ এলাকার সরকারি স্থাপনার নামকরণ করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দিয়ে নিজে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। আবার দেশ পরিচালনায়ও তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। দেশের মানুষকে সংগঠিত করে কীভাবে দেশ গঠন ও পরিচালনা করতে হয় তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। তাই দেশের প্রতিটি কমবেশি নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিএনপিকে মানুষ ভোট দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় পাঠিয়েছে। এটি বিএনপির সবচেয়ে বড় অর্জন। যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন এটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা দেখেছি ৭১ সালে একটা দল মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে দেশ ছেড়ে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে গিয়েছিল। আরেকটি দল মহান মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতা করেছে। কিন্তু বিএনপি এমন একটি দল যারা মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তীতে দেশ গঠনে নিরলসভাবে কাজ করেছে।’
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অপেক্ষায় আছি। পুরো জাতি নির্বাচনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। জনগণ বিএনপিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। আগামী নির্বাচনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে হলে আমাদের সকল নেতাকর্মীকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ গ্রহণ করা যাবে না। আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সকল প্রতিশোধ নেব। আমি মনে করি, ৩১ দফার বাস্তবায়নই বড় প্রতিশোধ। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সবচেয়ে বড় দল বিএনপি। এজন্য আমাদের দায়িত্ব অন্য দলগুলোর চেয়েও বেশি।’
৩১ দফা নিয়ে নেতাকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় অপ্রয়োজনীয় খরচ যদি কমানো যায়, দুর্নীতি রোধ করা গেলে বেকার ভাতাসহ অন্যান্য খাতে ভাতা ব্যবস্থা চালু ও ভাতা বৃদ্ধির করা সম্ভব। আমরা সেটা নিয়ে কাজ করব।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির আয়োজনে কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মুন্সি কামাল আজাদ পান্নুর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক ড. মোরশেদ হাসান খান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার মীর মো হেলাল উদ্দিন, মো. আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, ফারজানা শারমিন পুতুল, বিএনপির সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ঝিনাইদহ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা, মুন্সি কামাল আজাদ পান্নু, আব্দুল মজিদ বিশ্বাস, আনোয়ারুল ইসলাম বাদশা, সাজেদুর রহমান পাপ্পু, আহসান হাবীব রনক, আশরাফুল ইসলাম পিন্টু, হুমায়ুন বাবর ফিরোজ, আসিফ ইকবাল মাখন, এস এম সমেনুজ্জামান সমেন, মুশফিকুর রহমান মানিক ও রাসেল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এম বুরহান উদ্দীন/ওএফ