Logo

রাজনীতি

নতুন সংগঠন নিয়ে আসছেন ছাত্ররা, ৮ দফা ঘোষণা

Icon

ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:১৪

নতুন সংগঠন নিয়ে আসছেন ছাত্ররা, ৮ দফা ঘোষণা

ছাত্র-জনতার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ থেকে বেরিয়ে শীঘ্রই নতুন ছাত্রসংগঠন হতে যাচ্ছে। দলটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাইরে এসে নিজেদের কর্মসূচি অনুযায়ী সংগঠন পরিচালনা করবে।

এ ছাড়া দলটি কোনো লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি চর্চা করবে না। বরং গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে দলটির নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে বলে জানানো হয়।  

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ‘জুলাই অভ্যুত্থানের শক্তি থেকে নতুন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন গঠনের প্রক্রিয়া’ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়। 

তবে নবগঠিতব্য ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে কারা আসবে এবং কবে নাগাদ সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করবে তা জানানো হয়নি। শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে শীঘ্রই ছাত্রসংগঠনটির আত্মপ্রকাশের তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান নেতারা। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের এবং আবু বাকের মজুমদার। 

নতুন ছাত্রসংগঠন তৈরির লক্ষ্যে সোমবার ও মঙ্গলবার সারাদেশে শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রেক্ষিতে জনমত জরিপ ও সদস্য সংগ্রহ করা হবে। অনলাইন ও অফলাইনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, জাবি, জবি, রাবি, চবিসহ দেশের সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, সম্ভাব্য সব কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসায় এই প্রচারণা চালানো হবে। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, ‘বিগত ১৬ বছর বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত ছিল। শান্তিকামী জনতা চরম উৎকণ্ঠা, হতাশা আর ভয়ে নিমজ্জিত হয়ে দিনের পর দিন পার করেছে।’ 

তিনি বলেন, ‘শিক্ষাঙ্গনে ক্রমাগত সন্ত্রাসবাদ কায়েম, ট্যাগিং সংস্কৃতি, সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদ কায়েমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার, শিক্ষার অধিকার কেড়ে নিয়েছিল তারা।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন থেকেই গেস্টরুমের অবর্ণনীয় নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীর চিন্তা ও মনন দখল করার প্রক্রিয়া শুরু হতো।’

তিনি আরও বলেন, ‘দিনের পর দিন মাদার পার্টির প্রোগ্রামে তাদেরকে জোরপূর্বক অংশগ্রহণ করানোর মধ্য দিয়ে চিন্তা ও মনন দখলের এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতো। লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির অন্ধ অনুকরণের কারণে তরুণদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ কীভাবে জনবিরোধী অবস্থান নিয়েছিল তা আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেখেছি।’

নতুন ছাত্রসংগঠন কেমন হবে, সে সম্পর্কে কাদের বলেন, ‘বিগত দিনের রাজনীতি ছাত্ররাজনীতিকে কেবল ডান ও বাম ঘরানার রাজনীতির বাইনারীর মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছে। বাংলাদশের সংগ্রাম ও স্বাধীনতার ইতিহাসকে স্বীকার করে এবং ৪৭, ৫২, ৬২, ৬৬, ৬৮, ৬৯, ৭১, ২০২৪-এর সব আন্দোলন এবং জনতার সংগ্রামী চেতনাকে ভিত্তি করে ছাত্ররাজনীতি সক্রিয় থাকবে। বাংলাদেশে স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস সুদীর্ঘ। এ সংগ্রামের ধারা ২৪-এ এসেও শেষ হয়নি।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘আমাদের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ভিত্তি। সকলের অংশগ্রহণে গঠিত হতে যাওয়া নতুন রাজনীতিই আমাদের ভবিষ্যত বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অন্তর্ভুক্তিমূলক ছাত্ররাজনীতি তৈরি করা, যেখানে পরিচয়ের ভিত্তিতে কাউকে অবমূল্যায়ন করা হবে না।’

তিনি বলেন, ‘ট্যাগিংয়ের মধ্যে দিয়ে যে বিভাজনের রাজনীতির চর্চা হয়, সে রাজনীতি কখনো জনমানুষের হয়ে উঠতে পারে না। সে রাজনীতিতে মানুষ পরিচয় হয়ে যায় গৌণ। সে রাজনীতি সব মানুষের অধিকারের কথা বলতে পারে না, এ কারণেই তার প্রতিবাদ হয় ক্ষেত্রবিশেষে। এই বিভাজনের রাজনীতিতে অপর পক্ষকে শত্রু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে যে জুজুর ভয় দেখিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করা হয় সে রাজনীতির বিপক্ষে আমাদের অবস্থান।’

বাকের বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, অপরায়নের রাজনীতি অপরাজনীতিকে শক্তিশালী করে। সর্বস্তরের মানুষের অন্তর্ভুক্তি পরিশেষে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের রক্তে প্রতিশ্রুত নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সূচনার এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে শামিল হওয়ার আহ্বান জানাই।’

‘Students first, Bangladesh first’ স্লোগানকে সামনে রেখে নতুন ছাত্রসংগঠন গঠনে কিছু মৌলিক প্রস্তাবনা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধীর নেতারা৷ প্রস্তাবনাগুলো হলো

১. আদর্শিক বাইনারির কালচারাল দ্বন্দের বাইরে গিয়ে মধ্যপন্থি ছাত্ররাজনীতিকে প্রতিষ্ঠা করা।

২. জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অন্তর্ভুক্তিমূলক ছাত্ররাজনীতি তৈরি করা, যেখানে পরিচয়ের ভিত্তিতে কাউকে অবমূল্যায়ন করা হবে না।

৩. আমাদের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ভিত্তি। সকলের অংশগ্রহণে গঠিত হতে যাওয়া নতুন রাজনীতিই আমাদের ভবিষ্যত বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে।

৪. মূলধারার রাজনৈতিক পরিসরে নারীদের যে অনুপস্থিতি রয়েছে, সেটিকে অ্যাড্রেস করে নারীর রাজনৈতিক মানদণ্ড বিনির্মাণ করা, রাজনৈতিক চর্চার পরিবেশ তৈরি করা এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নারীবান্ধব করে তোলার মাধ্যমে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য সমান সুযোগের সৃষ্টি করা।

৫. শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে আপসহীন ছাত্ররাজনীতির প্রতিশ্রুতি।

৬. বাংলাদেশের সংগ্রাম ও স্বাধীনতার ইতিহাসকে স্বীকার করে এবং ৪৭, ৫২, ৬২, ৬৬, ৬৮, ৬৯, ৭১, ৯০, ২৪-এর সকল গণআন্দোলন এবং ছাত্রজনতার সংগ্রামী চেতনাকে ভিত্তি করে ধাত্ররাজনীতি সক্রিয় থাকবে।

৭. ফ্যাসিবাদকালীন সকল শিক্ষাপরিসরে পরিকল্পিতভাবে যে রাজনৈতিক ডিজএম্পাওয়ারমেন্ট করা হয়েছে এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শিক্ষার্থী সংসদ কাঠামোকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। নতুন ছাত্ররাজনীতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী সংসদ কাঠামো পুনর্বহালে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হবে।

৮. ছাত্র-নাগরিক সংহতি রক্ষার মধ্য দিয়ে ছাত্র-নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

  • মোহাইমিনুল ইসলাম/এমজে
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর