Logo

ধর্ম

পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত। পারা-১০

Icon

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ১৬:৫৬

পবিত্র কোরআনের ১১৪টি সুরাকে ৩০ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পরিভাষায় যেগুলোকে পারা বলা হয়। মাহে রমজানে বাংলাদেশের খবরের পাঠক-শ্রোতাদের দিনে এক পারা করে তিলাওয়াত উপহার দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ। তিলাওয়াত করেছেন রাজধানী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত মাদরাসাতুল মারওয়াহর প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম হাফেজ মাওলানা কারী মাঈনুদ্দীন ওয়াদুদ। 

মঙ্গলবার (১০ রমজান, ১১ মার্চ) রইল দশম পারার তিলাওয়াত। আজকের তিলাওয়াতে রয়েছে সুরা আনফালের ৪১ আয়াত থেকে শেষ পর্যন্ত এবং সুরা তাওবার প্রথম ৯৩ আয়াত। 

সুরা তাওবার সারমর্ম
সম্পর্কচ্ছেদ করা হলো আল্লাহ ও তাঁর পক্ষ থেকে সেই মুশরিকদের সঙ্গে, যাদের সঙ্গে তোমরা পারস্পরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলে। (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১)

এই আয়াতের মাধ্যমে সুরা তাওবা শুরু। এই সুরাটি মদিনায় অবতীর্ণ। এতে ১২৯টি আয়াত ও ১৬টি রুকু রয়েছে। তাফসিরে কাশশাফে এ সুরার ১২টি নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে দুটি নাম সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। তাওবা ও বারাআত।

এই সুরাকে ‘তাওবা’ বলার কারণ, এতে মুসলমানদের তাওবা কবুল হওয়ার বর্ণনা আছে। আর ‘বারাআত’ বলা হয় এ জন্য যে এখানে কাফিরদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ ও দায়িত্ব মুক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আলোচ্য আয়াতে সেই মুশরিকদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যারা চুক্তি ভঙ্গ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছে। এই সুরার প্রথম অংশ মহানবী (সা.) তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর অবতীর্ণ হয়েছে।

সুরা তাওবার বৈশিষ্ট্য: সুরা তাওবার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এই সুরার আগে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা হয় না। অথচ অন্য সব সুরার আগে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা হয়। এখানে ‘বিসমিল্লাহ’ না লেখার কয়েকটি কারণ পাওয়া যায় তাফসিরের কিতাবগুলোতে। 

১. মহানবী (সা.)-এর জীবনে ২৩ বছরের দীর্ঘ পরিসরে অল্প অল্প করে কোরআন অবতীর্ণ হয়। এমনকি একই সুরার বিভিন্ন আয়াত বিভিন্ন সময়ে অবতীর্ণ হয়। ওহি আসার পর কোন সুরা কোথায় স্থান পাবে তা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলে দিতেন, ওহি লেখকরা তা সেভাবেই লিখে নিতেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) এই সুরার আগে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখার নির্দেশ দেননি। এ অবস্থায় তাঁর ইন্তেকাল হয়। ফলে হজরত উসমান (রা.)-এর আমলে নতুনভাবে কোরআন সংকলন করার সময়ও এই সুরার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা হয়নি। এর মাধ্যমে এটাও প্রমাণিত হয় যে কোরআন সব সংশয়, সন্দেহ, পরিবর্তন-পরিবর্ধনের ঊর্ধ্বে। অবতীর্ণ হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি অবিকল ধারায় কোরআন বিদ্যমান।

২. হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) আলী (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে ‘বিসমিল্লাহ’র মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তার বার্তা আছে। কিন্তু সুরা তাওবায় চুক্তিভঙ্গকারী কাফিরদের জন্য শাস্তি ও নিরাপত্তা চুক্তিগুলো নাকচ করা হয়েছে। তাই এই সুরার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা হয়নি (তাফসিরে কাবির)।

৩. জাহেলি যুগে আরবদের নিয়ম ছিল, চুক্তিভঙ্গের ঘোষণাপত্রে তারা ‘বিসমিল্লাহ’ লিখত না। তাই এখানেও তাদের সঙ্গে একই নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে।

এই সুরার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, যেসব সুরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের শেষ দিকে অবতীর্ণ হয়েছে, এটি সেগুলোর অন্যতম। তা ছাড়া এই সুরার বিধানগুলো অপরিবর্তনীয়, অলঙ্ঘনীয়। বিষয়বস্তুতে মিল থাকার কারণে সুরা আনআম ও সুরা তাওবাকে একসঙ্গে মিলিয়ে কোরআনের দীর্ঘতম সাতটি সুরার মধ্যে স্থান দেওয়া হয়েছে।

সুরা তাওবায় বিসমিল্লাহ পড়ার বিধান: ইসলামী ফিকাহবিদগণ বলেন, যে ব্যক্তি সুরা আনফালের তেলাওয়াত সমাপ্ত করে সুরা তাওবা শুরু করে, সে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করবে না। কিন্তু যে ব্যক্তি প্রথমেই সুরা তাওবা থেকে তিলাওয়াত শুরু করে কিংবা এর মাঝখান থেকে শুরু করে, তাকে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করতে হবে। অনেকে মনে করেন, সুরা তাওবা পাঠ করার সময় কোনো অবস্থাতেই ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করা যায় না, এ ধারণা সঠিক নয়।

সুরা তাওবার বিষয়বস্তু: এই সুরায় মূলত ইসলামের দৃষ্টিতে যুদ্ধবিগ্রহ, জিহাদের আহকাম, স্বরূপ ও প্রেক্ষাপট বর্ণিত হয়েছে। বিশেষত কাফিরদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল, মক্কা বিজয়, তাবুক ও হুনাইনের যুদ্ধের বর্ণনা রয়েছে এখানে। মুনাফিকদের চরিত্র ও পাপাচারের আলোচনা রয়েছে। মুহাজির ও আনসারদের প্রশংসা করা হয়েছে। ইসলাম গ্রহণ ও মহানবী (সা.)-এর হাতে 'বাইআত' গ্রহণের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এই সুরায়।

ডিআর/বিএইচ

পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত

আরও পড়ুন
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর