পবিত্র কোরআনের ১১৪টি সুরাকে ৩০ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পরিভাষায় যেগুলোকে পারা বলা হয়। মাহে রমজানে বাংলাদেশের খবরের পাঠক-শ্রোতাদের দিনে এক পারা করে তিলাওয়াত উপহার দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ। তিলাওয়াত করেছেন রাজধানী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত মাদরাসাতুল মারওয়াহর প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম হাফেজ মাওলানা কারী মাঈনুদ্দীন ওয়াদুদ।
রোববার (১৫ রমজান, ১৬ মার্চ) রইল ১৫তম পারার তিলাওয়াত। আজকের তিলাওয়াতে রয়েছে সুরা বনি ইসরাঈল ও সুরা কাহফের প্রথম ৭৪ আয়াত।
সুরা বনি ইসরাঈলের সারমর্ম
এ সুরার সূচনা হয়েছে পবিত্র ইসরা ও মিরাজের ঘটনা বর্ণনার মাধ্যমে। ইসলামের ইতিহাসে ইসরা ও মিরাজ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন সব দিক থেকে মারাত্মক সংকট ও শোকের সম্মুখীন হয়েছিলেন, সেই দুঃসময়ে আল্লাহপাক তাঁর প্রিয় হাবিবকে তাঁর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ দিয়েছিলেন। পার্থিব জীবনের অভিভাবক চাচা আবু তালেবের মৃত্যু, প্রাণপ্রিয় সহধর্মিণী উম্মুল মুমিনিন খাদিজা (রা.)-এর ইন্তেকাল, তায়েফের হৃদয়বিদারক ঘটনা, মক্কার কাফিরদের অমানবিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোতে পবিত্র ইসরা ও মিরাজের মাধ্যমে মহানবী (সা.)-কে সান্ত্বনা দেওয়া হয়। তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে নিকষকালো আঁধার রাত শেষে প্রভাতের রক্তিম সূর্য উদিত হয়।
ইসরা ও মিরাজের পাশাপাশি বনি ইসরাঈলের কিছু ইতিহাসও আলোচিত হয়েছে এ সুরায়, যা মসজিদুল আকসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সেই সঙ্গে এ সুরায় আদিপিতা আদম (আ.) ও ইবলিসের কাহিনির অংশবিশেষ আলোচিত হয়েছে। এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে সম্মানিত করার বিষয়টিও আলোচিত হয়েছে। তবে সুরার প্রধান ও কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয় হলো মহানবী (সা.)-এর ব্যক্তিত্ব, তাঁর সঙ্গে কোরাইশদের আচরণ, কোরআনের বৈশিষ্ট্য ও অলৌকিকতা। প্রসঙ্গক্রমে আরও আলোচিত হয়েছে মহানবী (সা.)-এর নবুয়ত ও রিসালাতের প্রকৃতি, অলৌকিক ঘটনাবলি এবং নবীদের শিক্ষা অগ্রাহ্য করার পরিণতি।
এ সুরায় সতর্ক করা, বোঝানো ও শিক্ষা দেওয়া—এ তিনটি কাজই ক্রমান্বয়ে করা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে মক্কার কাফিরদের। বনি ইসরাঈল ও অন্য জাতিদের পরিণাম থেকে তাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। মানুষের সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য এবং কল্যাণ ও অকল্যাণের ভিত্তি আসলে প্রকৃতপক্ষে কোন জিনিসের ওপর, তা অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী পদ্ধতিতে বোঝানো হয়েছে।
এ সুরায় তাওহিদ (আল্লাহর একত্ববাদ), পরকাল, নবুয়ত ও কোরআনের সত্যতার প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। মক্কার কাফিররা যেসব ব্যাপারে সন্দেহ-সংশয় করেছিল, সেগুলো দূর করা হয়েছে। দলিল-প্রমাণ উপস্থাপনের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে অবিশ্বাসীদের অজ্ঞতার জন্য তাদের ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।
এ সুরায় তাওরাত গ্রন্থের মৌলিক বিধি-বিধান অতি সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে। নৈতিকতা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতিও এখানে বর্ণিত হয়েছে, ইসলামী সমাজ গঠনের জন্য যেগুলোর বিকল্প ছিল না। এগুলো ইসলামের ‘ঘোষণাপত্র’। মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এক বছর আগেই তা আরববাসীর সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
সুরার শেষ অধ্যায়ে মহানবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে মক্কার মুশরিকদের ষড়যন্ত্র ও তাঁকে মক্কা থেকে বিতাড়িত করার অপচেষ্টা বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে। এর সঙ্গে মহানবী (সা.)-কে নামাজ ও কোরআন পাঠ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মক্কা বিজয়ের টুকরা স্মৃতি, সত্যের জয় ও মিথ্যায় ক্ষয় বিষয়ে শাশ্বত মূলনীতি এ সুরায় বিবৃত হয়েছে। আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনার মাধ্যমে এ সুরার সূচনা হয়েছে। আর আল্লাহর প্রশংসাসূচক বাক্য দিয়ে এ সুরা সমাপ্ত হয়েছে।
ডিআর/বিএইচ