Logo

ধর্ম

পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত। পারা-২২

Icon

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ১৫:২৮

পবিত্র কোরআনের ১১৪টি সুরাকে ৩০ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পরিভাষায় যেগুলোকে পারা বলা হয়। মাহে রমজানে বাংলাদেশের খবরের পাঠক-শ্রোতাদের দিনে এক পারা করে তিলাওয়াত উপহার দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ। তিলাওয়াত করেছেন রাজধানী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত মাদরাসাতুল মারওয়াহর প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম হাফেজ মাওলানা কারী মাঈনুদ্দীন ওয়াদুদ। 

রোববার (২২ রমজান, ২৩ মার্চ) রইল ২২তম পারার তিলাওয়াত। আজকের তিলাওয়াতে রয়েছে সুরা আহজাবের ৩১ আয়াত থেকে শেষ পর্যন্ত, সুরা সাবা, সুরা ফাতির ও সুরা ইয়াসিনের প্রথম ২১ আয়াত।

সুরা সাবার সারমর্ম
কোরআনের ৩৪তম সুরা সাবা মক্কায় অবতীর্ণ। এর আয়াত সংখ্যা ৫৪টি। এ সুরায় সাবাবাসীর ঘটনা থাকায় এর নাম সুরা সাবা রাখা হয়েছে। এতে আখেরাত ও পুনরুত্থান, দাউদ ও সুলাইমান (আ.) এবং সাবাবাসীকে প্রদত্ত আল্লাহর নেয়ামত, নবিদের কৃতজ্ঞতা আর কওমে সাবার অকৃতজ্ঞতা, তাদের পরিণাম, অবিশ্বাসীদের কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাসের খণ্ডন, রিজিকের মালিক আল্লাহ ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়েছে। 

এ সুরার ১৫ থেকে ২২ নম্বর আয়াতে সাবাবাসীর প্রতি আল্লাহর নেয়ামত, নবীদের দাওয়াত, তাদের অকৃতজ্ঞতা ও ধ্বংসের বিবরণ রয়েছে। প্রাচীন নগরী মাআরিবে সাবা জাতির বসবাস ছিল। ইয়েমেনের সানা থেকে কিছু দূরে এ নগরীর অবস্থান। আল্লাহর নেয়ামতে ভরপুর ছিল সেই জনপদ। তেমন গরম ছিল না, ক্ষুধায় মানুষ অস্থির হতো না। সেখানে ছিল স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও আবহাওয়া, উর্বর জমি। তাদের ছিল দুটি বাগান—একটি ডান দিকে, আরেকটি বাম দিকে। পানি জমা করার জন্য ছিল বিরাট জলাধার। কিন্তু তারা ছিল অকৃতজ্ঞ জাতি। নবিদের মাধ্যমে আল্লাহ তাদের কৃতজ্ঞতা আদায়ের আদেশ দিলেন। কিন্তু তারা অবাধ্য হলো। ফলে বন্যা দিয়ে আল্লাহ তাদের সুন্দর বাগান ধ্বংস করে দিলেন। ফলে বাগানে বিস্বাদ ফলমূল হতো। কিছু হতো কুলগাছ। ঝাউগাছে ভরে গিয়েছিল বাগান। আল্লাহ অকৃজ্ঞতার কারণে তাদের এ শাস্তি দিয়েছিলেন। 

আবুল আলা মওদুদি লিখেছেন, ‘সাবা সাম্রাজ্যের উত্থান মূলত দুটি বুনিয়াদের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। একটি হচ্ছে কৃষি, অপরটি বাণিজ্য। তারা পানি সিঞ্চনের একটি সর্বোৎকৃষ্ট সিস্টেম তৈরি করে কৃষিখাতে নানাবিধ উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছিল। প্রাচীন ইতিহাসে বাবেল ছাড়া এ ধরনের জল সরবরাহের অন্য কোনো দৃষ্টান্ত কোথাও পাওয়া যায়নি। তাদের ভূখণ্ডে কোনো প্রাকৃতিক জলাধার ছিল না। বৃষ্টির মৌসুমে আশপাশের পাহাড় থেকে বর্ষাকালীন নালা বেরিয়ে আসত। সেই নালাগুলো কেন্দ্র করে তারা সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ দিয়ে সেগুলোকে ঝিলে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করত। এরপর সেই ঝিলগুলো থেকে খাল বের করে পুরো দেশকে এমনভাবে জলতৃপ্ত করত যে, কোরআন কারিমের ভাষায় চতুর্দিকে শুধু বাগান আর বাগান দেখা যেত। জল সরবরাহের এই ব্যবস্থাপনার অধীনে সর্ববৃহৎ জলসমৃদ্ধ জলাধারটি ছিল মাআরিব শহরের সন্নিকটস্থ বালাক পাহাড়ের মধ্যবর্তী নদী। তারা চতুর্দিকে বাঁধ দিয়ে এই জলাধারটি তৈরি করেছিল।

এই সম্প্রদায়ের ওপর থেকে যখন আল্লাহর দয়ার দৃষ্টি উঠে যায়, তখন ঈসায়ি পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যভাগে এই বিশাল বাঁধ ভেঙে যায়। সেই জলাধার থেকে বেরিয়ে আসা প্রচণ্ড স্রোত, পথিমধ্যে যতগুলো বাঁধ পেয়েছিল সবগুলো ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলে। ফলে পুরো দেশে জল ব্যবস্থাপনা প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ে। পরবর্তীকালে তাদের পক্ষে সেই সিস্টেম পুনর্বহাল করা সম্ভব হয়নি। (সিরাত বিশ্বকোষ, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৪২৬)। বাঁধটি বর্তমান মাআরিব প্রদেশের বালাখ হিলস এলাকার ওয়াদি আল-আজানায় অবস্থিত বলে ধারণা করা হয়। এই বাঁধের কিছু ধ্বংসাবশেষ এখনো সেখানে রয়েছে। (আল মুনজিদ ফিল আলা, পৃষ্ঠা : ৫১০, আল মুফাসসাল ফি তারিখিল আরব কবলাল ইসলাম, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ১৮৫)

ডিআর/বিএইচ

  

পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত

আরও পড়ুন
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর