
লাইলাতুল কদর। প্রাপ্তির রজনী। হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, রমজানের ওই পবিত্র রজনীকে কদরের রাত এ জন্য বলা হয়; যে ব্যক্তি গোনাহের কারণে প্রভুর নৈকট্য ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত ছিল, এ রজনীতে তাওবা ইসতিগফারের মাধ্যমে ইজ্জতওয়ালা ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়।
দ্বিতীয় অর্থে কদর হলো তাকদির। এ রজনীতে মানুষের ভাগ্যে যা লেখা হয়েছিল তা ফিরিশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ভাগ্যবান ওই ব্যক্তি, যে এ রজনীতে মাওলার ইবাদাতে মাশগুল থাকে। এই এক রজনীতে ইবাদত করলে তিরাশি বছর চার মাস থেকেও বেশি সময় ইবাদত করার সওয়াব অর্জন হয়। মহান আল্লাহ পবিত্র এ রজনীকে আমাদের জন্য বড় নিয়ামত হিসেবে দান করেছেন।
শবে কদর কেবলই উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য দান করা হয়েছে। কদরের ফজিলত বর্ণনাতীত। পবিত্র কোরআনে পূর্ণ একটি সুরা অবতীর্ণ হয়েছে কদরের রাতের ফজিলতের ওপর। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি শবে কদরের রাতে ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশে ইবাদত করবে; তার পিছনের জীবনের সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। এই প্রাপ্তির রজনীতে আমাদের ইবাদতে মাশগুল থাকা প্রয়োজন।
শবে কদর নির্দিষ্টকরণে ৪০টির অধিক মতামত রয়েছে। কিছু বর্ণনার ভিত্তিতে এ রাত রমজানের শেষ সাত দিনে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রাসুল (সা.) এক হাদিসে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শবে কদর অন্বেষণ করতে চায়, সে যেন রমজানের শেষ সাত রাতের মধ্য তা অন্বেষণ করে (বুখারি: ২০১৫; মুসলিম: ১১৬৫)’। শবে কদর সম্পর্কে বেশিভাগ আলেম বলেছেন, ২৭তম রাতই শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি যতদূর জানি রাসুল (সা.) আমাদের যে রাতকে শবে কদর হিসেবে কিয়ামুল্লাইল করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা হলো রমজানের ২৭তম রাত (মুসলিম: ৭৬২)’।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কদরের রাত অর্জন করতে ইচ্ছুক, সে যেন তা রমজানের ২৭তম রাতে অনুসন্ধান করে (আহমাদ: ২/১৫৭)’।
চিন্তা করুন, কত মানুষ গত রমজানে আমাদের মাঝে ছিল কিন্তু আজ পৃথিবীতে নেই। তবে আমি কি আগামী রমজান পর্যন্ত জীবিত থাকব? এই কারণে খেলতামাশায় লিপ্ত না হয়ে দুয়েক রাত জাগ্রত থেকে মনিবের দরবারে পড়ে থাকা জরুরি।
শবে কদরের দোয়া সম্পর্কে হজরত আয়িশা (রা.) নবিয়ে মোস্তফাকে (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি আমি শবে কদর পেয়ে যাই, তাহলে কী দোয়া করব?’ রাসুল (সা.) নিম্ন দোয়াটি করতে বললেন, ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﻋَﻔُﻮٌّ ﺗُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻲ ।
অর্থ : হে আল্লাহ, তুমি নিশ্চয় ক্ষমাশীল। ক্ষমা তোমার পছন্দের। সুতরাং আমাকে ক্ষমা কর (তিরমিজি, মিশকাত)।
পবিত্র এই প্রাপ্তির রজনীতে নিদ্রা বিসর্জন দিয়ে অধিকতর নামাজ আদায়, তিলাওয়াত, দরুদ শরীফ পড়া ও দোয়ার ইনতিযাম করা জরুরি। বদনসিব ওই ব্যক্তির, যে পুণ্যের উত্তম সময় পাওয়ার পরও গাফিলতির মধ্যে ডুবে থাকে।
হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘যখন পবিত্র রমজানের আগমন হয় তখন নবি (সা.) বলেন, তোমাদের জন্য এমন এক মাসের আগমন হয়েছে, যে মাসের মধ্যে এক রাত হাজার মাস থেকেও অধিক উত্তম। যে এ রাত থেকে মাহরুম থাকল, সে সমস্ত উত্তম কাজ থেকে বিরত থাকল। আর এই ভালো কাজ থেকে সেই মাহরুম হয়, যে সবসময় ভালো কাজ থেকে মাহরুম থাকে।’
লেখক : শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম কানাইঘাট, সিলেট।
এটিআর/