বিশ্বনবি (সা.) আরবের প্রখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আর কুরাইশরা ছিল সে কালের খ্যাতনামা প্রাচীন ব্যবসায়ী গোত্র। তাই নবিজি (সা.) জন্মগতভাবেই বাণিজ্যিক পরিবেশে বেড়ে উঠেছিলেন। পরিবারের প্রকৃত পেশা ব্যবসা হওয়ায় দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করতেন রাহমাতুল্লিল আলামিন (সা.)।
রাসুল (সা.)-এর বয়স যখন ১২ বছর ২ মাস, তখন চাচা আবু তালিব কুরাইশের বাণিজ্যিক কাফেলার সঙ্গে সিরিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে সফরের কষ্টের কারণে রাসুলকে (সা.) তার সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু যাত্রা শুরুর মুহূর্তে প্রিয় চাচাকে জড়িয়ে ধরে নবিজি (সা.) বললেন, ‘হে চাচা, কার কাছে ছেড়ে যাচ্ছেন আমাকে? আমার বাবাও নেই, মা-ও নেই।’
মুহাম্মদ (সা.)-এর করুণ আবদার এড়াতে পারলেন না আবু তালিব। বাণিজ্য কাফেলায় শরিক করলেন ভাতিজাকে। যাত্রা হলো শুরু। শাম পানে চলল বাণিজ্য কাফেলা। যখন তারা বুসরা শহরে পৌঁছলেন, তখন সেখানে খ্রিষ্টান (কিছু ইহুদির মতে) পাদ্রি বুহায়রা সঙ্গে দেখা হলো। বুহায়রা নবিজি (সা.)-এর চেহারায় নবুওয়্যাতের আলামত দেখতে পায়। তাই সে হজরত আবু তালিবকে জোর দিয়ে বলল, এই ছেলে বড় হয়ে অনেক বড় মর্যাদার অধিকারী হবে, সেজন্য তাকে সিরিয়ার ইহুদি শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। অতঃপর হজরত আবু তালিব অবিলম্বে রাসুলকে (সা.) মক্কায় ফেরত পাঠান (তারীখে তাবারি)।
দ্বিতীয় বাণিজ্যিক সফর ও বিয়ে
তৎকালীন সময়ে মক্কার সবচেয়ে ধনী মহিলা ছিলেন হজরত খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ (রা.)। তিনি তাঁর পিতার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে বহু সম্পত্তি লাভ করেছিলেন এবং বাণিজ্যের প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন। ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে ও ত্বরান্বিত করতে তার এমন একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তির প্রয়োজন ছিল, যিনি ব্যবসায়িক দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার অধিকারী হবেন। যদিও রাসুল (সা.)-এর বয়স ছিল প্রায় ২৩ বছর; কিন্তু তার উত্তম চরিত্র ও গুণাবলি ইতোমধ্যে মক্কার অলিতে-গলিতে চর্চা শুরু হতে থাকে এবং ব্যবসায়িক বুদ্ধিমত্তাও প্রসিদ্ধির শিখরে আরোহণ করে (সিরাতে ইবনে হিশাম)।
আর নবিজি (সা.) বাণিজ্যিক কাফেলার সঙ্গে সিরিয়ায় গিয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যের অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছিলেন। তাই হজরত খাদিজা (রা.) ইচ্ছা প্রকাশ করলেন, রাসুল (সা.) তার বাণিজ্যিক পণ্য সিরিয়ায় নিয়ে যাবেন এবং অন্য লোকদের তুলনায় তাঁকে বেশি মুনাফা প্রদান করবেন। নবিজি (সা.) চাচা আবু তালিবের সঙ্গে পরামর্শ করার পর এ প্রস্তাবে রাজি হন এবং ২৩ অথবা ২৪ বছর বয়সে দ্বিতীয়বার বাণিজ্যিক সফরে সিরিয়ায় যান।
সিরিয়া থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় রাসূল (সা.) মক্কায় অবিলম্বে বিক্রি করা যেতে পারে এমন পণ্যগুলো খুঁজে খুঁজে সংগ্রহ করলেন এবং সেগুলো পরে মক্কায় এসে বিক্রি করে অধিক মুনাফা লাভ করলেন। হজরত খাদিজা (রা.) সিরিয়ায় যাওয়ার সময় তার সম্পদ যখন রাসুলকে (সা.)সোপর্দ করছিলেন, তখন তিনি তার বিশ্বস্ত গোলাম মাইসারাকেও সঙ্গে পাঠালেন, যাতে সে রাসুল (সা.)-এর খেদমত ও সেবা করে। তবে মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল এই, যাতে সে সম্পদের প্রতি নজর রাখে এবং মহানবি (সা.)-এর অভ্যাস-নৈতিকতার প্রতিও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে (হায়াতে মুহাম্মাদ সা.)।
এ সফর থেকে ফিরে মাইসারা শুধু রাসুল (সা.)-এর আমানতদারি ও বিশ্বস্ততারই প্রশংসা করে ক্ষান্ত হয়নি; বরং সে রাসুল (সা.)-এর সাধারণ নৈতিকতা ও চরিত্রের এমনভাবে প্রশংসা করেছে যে, হজরত খাদিজা (রা.) নবিজি (সা.)-এর সঙ্গে বিয়ের তামান্না করলেন। অতঃপর সিরিয়া থেকে ফেরার দুই মাস পঁচিশ দিন পর হজরত খাদিজা (রা.) রাসুলকে (সা.) বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেন এবং নবিজি (সা.) তার চাচার পরামর্শে তা কবুল করেন (সিরাতে ইবনে হিশাম)।
ডিআর/এটিআর