বাংলাদেশের হাফেজরা বিশ্বসেরা। আমার মনে হয়- আমরা কোরআন হিফজকে যেভাবে সিরিয়াসলি নেই, অন্যরা সেভাবে নেয় না। এজন্য এক্ষেত্রে আমরা অনন্যতা অর্জন করতে পেরেছি। গতকাল তায়েফের আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) মসজিদের তাহফিজের বাচ্চাদের দেখে এমনই মনে হলো।
আমরা দ্বিতীয়বার ওমরাহ করতে হুদুদে হারামের তায়েফ সীমানায় এলাম। মিকাতের এই স্থানটির নাম কারনে মানাঝিল। এখানকার মসজিদে মাগরিব পড়ে ইহরাম বাঁধলাম। এর আগে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর যে পথটিতে বুড়িটি কাঁটা বিছিয়ে রাখত, সেখানটা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। আরও বেশ কয়েকটি নির্দশনও জেয়ারত হলো। এ যাত্রায় উল্লেখযোগ্য স্থানটি বিখ্যাত সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের কবর ও তাঁর মসজিদ।
গাড়ি পার্কিংয়ে রাখার পর প্রথমেই আমরা আল্লাহর রাসুলের চাচাতো ভাই ইবনে আব্বাস (রা.)-এর কবর অতিক্রম করি। আসলে এখানে কবরটি দেখার সুযোগ নেই; সম্মুখভাগের দুটি দিক দেয়ালে ঘেরা। হয়ত কবর দেখে কেউ আবেগাপ্লুত হয়ে শিরকি কাজে লিপ্ত হতে পারে, সেদিকে খেয়াল রেখে দেয়ালবেষ্টন করা হয়েছে। এত সতর্কতার পরও মানুষকে নিবৃত করা যায়নি; এই দেয়ালের ওপরও নানা কথাবার্তা লিখে রাখা হয়েছে। এখানে জেয়ারত শেষে মসজিদে প্রবেশ করলাম আসর পড়তে।
দুই রাকাত ফরজ নামাজ সম্পন্ন করে মসজিদটির অভ্যন্তর ঘুরে ঘুরে দেখতে পায়চারি করছিলাম। চোখে পড়ল বাচ্চাদের দুটি হালকাহ। প্রতিটি গ্রুপে ২০-২৫ জন কোরআনের পাখি। তাদের সামনে বসা তাদের ওস্তাদ।
একজন ওস্তাদের সামনে হাজির হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 'ইউমকিনু লি আত-তাকাল্লুমু মাআকা?' সহাস্যে বললেন, 'আইওয়া, লা বা'ছা।' পরে তার সঙ্গে কথা হলো। জানালেন, হালকা দুটি তাহফিজের বাচ্চাদের। সৌদি আরবসহ একাধিক দেশের বাচ্চারা এখানে আছে। আর ওই ওস্তাদের আদিবাড়ি আফগানিস্তান কিন্তু তাঁর জন্ম এখানেই, সৌদিতে।
আমার যেহেতু সাংবাদিকতা পেশা। তাই ভিনদেদশিদের দেখলে তাদের দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জিজ্ঞেস করি। আর দেশটা যদি হয় ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মতো, তাহলে তো সেখানকার রাজনীতিতে আগ্রহ থাকবেই। এর আগে সেদিন আসরের পর কাশ্মিরি মা-মেয়ের সঙ্গে মসজিদুল হারামে সাক্ষাৎ। মেয়েটি আমার মাকে একটু খেজুর হাদিয়া দিলেন। আমি তাকে তার দেশ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, উত্তর দিলেন, 'কাশ্মির'। আমি জানতে চাইলাম, 'জুম্মু ইয়া আজাদ?' বললেন, 'জুম্মু'। আমি সদ্যনির্বাচিত সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহর কথা জিজ্ঞেস করতেই অবাক হয়ে বললেন, 'তুমি তাকে চেনো?' এটা ছাড়াও কাশ্মিরি মুসলিমদের হালহকিকত জিজ্ঞেস করেছিলাম।
আরেকবার দেখা হলো পাকিস্তানের খাইবারপাখতুনখোয়ার এক ভাইয়ের সঙ্গে। তাকেও রাজনীতির ব্যাপার জিজ্ঞেস করেছি। তিনি জানালেন, তার আগ্রহ আধ্যাত্মিকতা চর্চা নিয়ে, রাজনীতিতে নয়। ইমরান খান ক্ষমতায় ফের আসীন হতে পারবেন না, এটাও দাবি করলেন। মাওলানা ফজলুর রহমানকে নিয়ে তিনি আশাবাদী। আরও কয়েক পাকিস্তানির সঙ্গে সাক্ষাৎ হলেও তাদের দেশের রাজনীতি নিয়ে অল্পবিস্তর আলাপ করেছি। আমার ধারণা, দেশটির মডার্ন ইসলামপন্থীরা ইমরান খানকে চান আর সচেতন আলেম সমাজ খানকে পছন্দ করেন না।
ভারত-পাকিস্তানের মতো আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর মসজিদের ওই ওস্তাদকেও তার আদিবাড়ি আফগানিস্তান সম্পর্কেও জানতে চাইলাম। জানালেন, সৌদিতেই তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তবে আফগানের আর ফিরতে চান না। কারণ হিসেবে দাবি করলেন, সেখানে 'আমান' মানে নিরাপত্তা নেই। তার তত্ত্বাবধানে বাচ্চারা খেলাচ্ছলে পবিত্র কোরআন মুখস্থ করছিল। তাদের সঙ্গেও কথা হলো অল্প একটু। তারপর পরবর্তী গন্তব্যে ফিরে এলাম। আর মনে মনে তাদের বললাম, তোমরা আরব হলেও কোরআন হিফজে আমরা এগিয়ে। আমাদের এখানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে হিফজ পাঠদান করা হয়। তবে আমার মতামত হলো- আমাদের দেশের হিফজ বিভাগের রুটিন ছাত্র ও ওস্তাদদের দিকে তাকিয়ে আরেকটু সহজ করা যায়।
বেলায়েত হুসাইন : রিলিজিয়াস এডিটর, বাংলাদেশের খবর
এমএইচএস