মসজিদুল হারামে প্রতি রাকাত নামাজে ১ লাখ রাকাতের সওয়াব। এজন্য পবিত্র ভূমিতে সমাগত মুসাফিররা কষ্ট হলেও এখানে নামাজের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়। আমরাও তাদেরই অনুসরণ করছি; প্রতি ওয়াক্তেই জামাতে উপস্থিত থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ। তবে এখানে যে বিষয়টি, বিশেষত আমার জন্য বোনাস প্রাপ্তি মনে হচ্ছে, তা হলো- পছন্দের ইমামের পেছনে নামাজ আদায়ের সৌভাগ্য।
আসলে বাইতুল্লাহ আমাদের সকলেরই হৃদস্পন্দন। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সবকিছুও তেমনই। এরপরও বিশেষ কিছুর প্রতি আলাদাভাবে বাড়তি টান থাকে। যেমন- এখানের ইমামদের মধ্যে আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় শায়খ আব্দুর রহমান আল-সুদাইস। আমি তার ভক্ত সেই শৈশব থেকে।
হিফজ বিভাগের শুরুর দিকে আমার প্রাণপ্রিয় ওস্তাদ হাফেজ আনোয়ার হুসাইন মিশরীয় কারী শায়খ সিদ্দিক আল মিনশাবির তিলাওয়াতের মশক শোনাতেন। সে সময় ক্যাসেটের প্রচলন। তার কাছে কাবার ইমাম শায়খ আস-সুদাইসের তিলাওয়াতের ফিতাও ছিল। এটাই আমাদের কাছে শুনতে মধুর লাগতো। কতবার যে তার সুরা আর-রহমান তিলাওয়াত শুনেছি আর মুগ্ধ হয়েছি- আল্লাহই ভালো জানেন।
ফিতার ওই তিলাওয়াত সম্ভবত তারাবির নামাজ থেকে রেকর্ড করা হত। কারণ, ‘বাসমালাহ’ পড়া হতো ভিন্ন কণ্ঠ ও সুরে। আর তিলাওয়াতের মাঝে মাঝে শায়খ আস-সুদাইসের কণ্ঠের ওঠানামা ও কান্নাভাব হৃদয়ে ঝড় তুলত। শপথ মহান স্রষ্টার! আজও তার তিলাওয়াতে সেই মুগ্ধতা, আবেগ ও আকর্ষণ একইরকম এবং অভিন্নভাবেই অবশিষ্ট আছে।
মক্কা মুকাররমায় আমাদের সফরের চতুর্থ দিন আজ। আমাদের মুয়াল্লিম শ্রদ্ধেয় ভাই হাফেজ মাওলানা ফিরোজ আলম। শুরুর দিনই তাকে মনের এই ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলাম যে, শায়খ আব্দুর রহমান আস-সুদাইসের পেছনে নামাজ পড়ার বড় আশা আমার। তিনি জানিয়েছিলেন- সপ্তাহে এক-দুইবার তিনি ইমামতি করেন। আর তিনি বেশিরভাগ সময়ে ইশার নামাজের ইমাম হন। ফিরোজ ভাইয়ের কথার পর আমি বিশেষত ইশার নামাজের অপেক্ষা করছিলাম। আল্লাহর কী অনুগ্রহ; পর পর তিন দিন ইশা পড়ালেন আমার প্রিয় শায়খ আস-সুদাইস। তার তিলাওয়াত আমাকে শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে গেল এবং তার প্রতি মুগ্ধতার স্মৃতি মনে করিয়ে দিল। আমরা আরও দুইটি ইশার পর মক্কা থেকে হয়ত এবারের মতো বিদায় নেব ইনশাআল্লাহ। আর আল্লাহ চাইলে আবারো শায়খকে ইমাম হিসেবে পেতে পারি। আল্লাহই উত্তম পরিকল্পনাকারী।
ইমামদের মধ্যে জনপ্রিয়তায় আমার কাছে দ্বিতীয়তম হলেন- তরুণ ইমাম শায়খ ইয়াসির আদ-দোসারি। তাকেও দুদিন পেলাম মাগরিব ও ফজরে। আহ কী মিষ্টি ও ভাবগম্ভীর তিলাওয়াত। মনে হয়- রাকাতটি শেষ না হোক, চলতে থাকুক মন তৃপ্ত হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। আর কোরআনের রবের রহমত বর্ষিত হোক আমাদের সবার ওপরে।
শায়খ বালিলাহর পেছনেও নামাজ পড়েছি। মুগ্ধ হয়েছি। আসলে বাইতুল্লাহতে নামাজ পড়ে মুগ্ধ না হয়ে কি পারা যায়। সবার তিলাওয়াতই মনকাড়া, শ্রুতিমধুর। প্রিয় পাঠক! তুমিও কি তোমার অশান্ত হৃদয় বিগলিত করতে চাও, কঠোর দিলটাকে কোমল বানাতে চাও, রহমানের কৃপায় ধন্য হতে চাও!, তাহলে কেন অলসভাবে বসে আছো? একবার হাজিরা দাও না মহান রবের দরবারে!
এমএইচএস