কাতার বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা
সুরা ফাতিহা শুনেই কেউ কেউ কান্না করে মুসলিম হতে চাইতেন
মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:১৫
ছবি : সংগৃহীত
কাতার বিশ্বকাপের সময় আমাদের নানা রকম দাওয়াতি কার্যক্রম ছিল। বিভিন্ন দেশের প্রখ্যাত স্কলার-দাঈদের পাশাপাশি স্থানীয় ও প্রবাসী দাঈ-স্কলাররাও ছিলেন। তাদের সঙ্গে আমি ও মাহদি ভাই ‘কাতার গেস্ট সেন্টার’র তত্ত্বাবধানে অত্যন্ত গোছানো ও সুস্থ-সুন্দর পদ্ধতিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অংশ নিতাম।
আশ্চর্যের বিষয় হলো- এমন অনেক পর্যটকের সঙ্গে আমাদের কথা হতো— যারা জীবনেও কোনো মুসলিম দেশে সফর করেননি কিংবা মুসলমানদের জীবনশৈলী সম্পর্কে যাদের ন্যূনতম ধারণাও নেই, কিংবা যারা মনে করতেন— ইসলাম শুধু আফ্রো-এশিয়ার ধর্ম। কিন্তু তারা যখন আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন— তখন তাদের চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যেত।
আরও আশ্চর্যের কথা হলো- তাদের অনেকেই খুব সহজেই ইসলাম গ্রহণ করতেন। এমনকি কেউ কেউ তো কেবল সুরা ফাতিহা শুনেই কান্না করে মুসলিম হতে চাইতেন। এরচেয়েও অবাককরা বিষয় হলো- এদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা সিংহভাগ এবং ল্যাতিনদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি ছিল।
আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম সংগ্রহ করে ও অনুমতিসাপেক্ষে তারা যে দেশের বাসিন্দা— সে দেশের ইসলামিক সেন্টার বা দাঈদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। যেন তারা দেশে ফিরে যাওয়ার পরও তদারকি ও তারবিয়াত লাভ করেন।
এরপর বিশ্বকাপের সব আয়োজন শেষ হলো। কিন্তু পশ্চিমাবিশ্বে তখনো নানা আলোচনা। ওই সময় লন্ডন থেকে ব্রিটিশ সাংবাদিক ব্রাদার রবার্ট কার্টার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং আমার সাক্ষাৎকার নেন। ইংলিশ সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এটা আমার প্রথম সরাসরি ইন্টারভিউ ছিল।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালীন অমুসলিমদের অনেকেই দাওয়াতের নানা কর্মসূচি গ্রহণ করলেও এবং এর ইতিবাচক ও ভালো বহু ফলাফল পরিলক্ষিত হলেও ডা. জাকির নায়িক (হাফিজাহুল্লাহ)-এর দাওয়াতের সঙ্গে তুলনা করা অনুচিত ও অশোভনীয় ঠেকছে। কারণ, এতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও চিরায়ত দাওয়াহ-কর্মপদ্ধতিকে খাটো করা হয়ে যায়।
আমি ড. মিজানুর রহমান আজহারী সাহেবের সঙ্গে ঘরোয়া এক মজলিসে কথা বলেছি। তাকে অত্যন্ত আখলাকি ও আন্তরিক হিসেবে পেয়েছি। আমার প্রবল ধারণা— তিনি বিশ্বকাপ ও ডা. জাকির নায়েক সাহেবের বিষয়টা আবেগের বশে গুলিয়ে ফেলেছেন কিংবা অতিরঞ্জন করে ফেলেছেন। তবে তিনি ইচ্ছাপূর্বক ছোট করার উদ্দেশ্যে বলেননি— এটা বাহ্যত বোঝা যায়।
তবুও তার আরও সাবধান হওয়া জরুরি মনে হচ্ছে। কেননা, কিছু বিষয়ে তিনি মেপে মন্তব্য করলে তার ভক্তকুল, শুভানুধ্যায়ী ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরই লাভ। আশা করছি, তিনি আরও সচেতনতা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সামনের পথ-পরিক্রমা অতিক্রম করবেন। আল্লাহ তাআলা তাকে কবুল করুন এবং সাহায্য করুন।