বাংলাদেশের পত্রিকা থেকে
ফ্যাসিবাদমুক্ত পহেলা বৈশাখ

ডিজিটাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:১০

বাঙালির বাঁধভাঙা উল্লাসের দিন
বাংলাদেশের খবরের প্রথম পাতায় বলা হয়েছে, পয়লা বৈশাখ আজ। বাংলা নববর্ষ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হবে নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ। বাঙালি তার অস্তিত্বের জানান দেয় প্রাণে প্রাণে, উৎসবে। বিশ্বকে বলে ক বলে দেয়-আমি বাঙালি; আমার আছে গর্বের ইতিহাস। সংকল্প জানাতে পারি নতুন আগামীর। নতুন আলোয় অবগাহনের দিন। হাজার বছরের ঐতিহ্যের বহমানতায় বাংলার ঘরে ঘরে আজ উৎসবের আমেজ।
অন্যদিকে পয়লা বৈশাখ বাঙালির একটি সর্বজনীন লোকউৎসব। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেওয়া হয় বাংলা নতুন বছরকে। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ।
'বাংলা নববর্ষ ১৪৩২' জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে। ছায়ানট ভোরে রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে।
'নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান' প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ সোমবার সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে 'বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা' বের করা হবে। সকাল ৮টা
থেকে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলবে। শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে।
শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা শুধু নীলক্ষেত ও পলাশী মোড় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। শোভাযাত্রা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রবেশ পথ ও সংলগ্ন সড়ক বন্ধ থাকবে।
বাঙালির প্রাণের উৎসব আজ
প্রথম আলোর প্রথম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রৌদ্রকরোজ্জ্বল বৈশাখী দিন ফিরে এল আবার। সুরে-বাণীতে, সাজসজ্জায়, আহারে-বিহারে, আনন্দ-উল্লাসে আজ সোমবার বাংলার নতুন বছর ১৪৩২ বরণ করে নেবে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে দেশের সব মানুষ। পুরোনো ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে সবার কল্যাণ কামনায় উদ্যাপিত হবে নববর্ষের উৎসব। নববর্ষকে আবাহন জানিয়ে বহুকণ্ঠে ধ্বনিত হবে ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো...।’
বাংলা নববর্ষের চেয়ে বড় কোনো সর্বজনীন উৎসব দেশে আর নেই। এ কারণে মানুষে মানুষে মহাপ্রাণের মিলন ঘটানোর বর্ষবরণের এই উৎসব গভীর তাৎপর্যময় হয়ে আছে আমাদের জীবনে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর এবার নতুন পরিবেশে বর্ষবরণ উৎসব বিশেষ মাত্রা পেয়েছে। উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য তাই ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’।
মূল প্রতিপাদ্য সামনে রেখে জাতীয়ভাবে রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে নববর্ষ উদ্যাপনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলে আগেই জানিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। উৎসব অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে সব জাতিসত্তার প্রতিনিধিদের নিজ নিজ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রমনার বটমূলে বর্ষবরণের ঐতিহ্যবাহী অন্যতম প্রধান অনুষ্ঠান আয়োজন করবে ছায়ানট।
রাজধানীর বর্ষবরণের অন্যতম বর্ণাঢ্য আয়োজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শোভাযাত্রা। ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র বদলে এবার ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামকরণ করা হয়েছে।
২০ ফুট উচ্চতার ‘স্বৈরাচারের মুখাকৃতি’ নামের মোটিফটি শনিবার ভোররাতে কে বা কারা আগুনে পুড়িয়ে দেয়। চারুকলা অনুষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ঘটনার পরও তাদের শোভাযাত্রা বর্ণাঢ্যভাবেই পথে নামবে পয়লা বৈশাখ সকালে।
পয়লা বৈশাখের উৎসব গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতীয়তাবোধের যে উন্মেষ ঘটেছিল, তার বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে সাংস্কৃতিক আন্দোলন। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে তার প্রতিবাদে বিপুল উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বৈশাখী উৎসব উদ্যাপিত হয়। রমনার বটমূলে ১৯৬৭ সালে ছায়ানট প্রথমবারের মতো আয়োজন করে তাদের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান। কালক্রমে বর্ষবরণ উৎসবে যুক্ত হয় আরও অনেক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। চারুকলার শোভাযাত্রা বর্ণাঢ্য করে তোলে আয়োজন। বহু সংগঠনের অংশগ্রহণে বর্ষবরণ বহু প্রাণের বিপুল উৎসবে পরিণত হয়।
শোনাও নতুন গান
আমার দেশ পত্রিকার প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, 'মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।' আজ পহেলা বৈশাখ। আজ নববর্ষ। স্বাগত ১৪৩২।
বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি ও গর্বিত ঐতিহ্যের রূপময় ছটায় উদ্ভাসিত সর্বজনীন উৎসবের দিন আজ। আনন্দ-হিল্লোল, উচ্ছ্বাস-উষ্ণতায় দেশবাসী আবাহন করবে নতুন বছরকে। 'নব আনন্দে জাগো আজি'। অর্থ-সঙ্গতি থাকুক আর না-ই থাকুক, সবার হৃদয়ে আজ রবীন্দ্র-নজরুলের সুর জেগে উঠবে- 'এসো হে বৈশাখ, এসো এসো....' কিংবা '...ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখীর ঝড়, তোরা সব জয়ধ্বনি কর।'
বাংলা নববর্ষের শুভ এই দিনটি এবার উদযাপন করা হচ্ছে ভিন্ন আমেজে। বিগত পনেরো বছরের দুঃশাসন দূর হয়েছে। অন্ধকার সেই সময়ের গ্লানি, দুঃখ-বেদনা অসুন্দর ও অশুভকে ভুলে গিয়ে আমরা নতুন উদ্যম ও প্রত্যয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। জুলাই বিপ্লব আমাদের সামনে বৈষম্যহীন দেশ গড়ে তোলার সুযোগ এনে দিয়েছে।
একটি ভিন্ন পরিবেশে আগত নতুন স্বপ্নের আবির ছড়ানো নববর্ষকে স্বাগত। বাংলা নববর্ষের শুভ এই দিনটি জনজোয়ারে প্রাণময় উৎসবে উদ্ভাসিত, হিল্লোলিত। যার যার সাধ্যমতো আনন্দ আয়োজনে উজ্জ্বল, অন্যরকম একটা দিন পহেলা বৈশাখ। নতুন এই দিনটি পুরোনো সব ব্যর্থতা-গ্লানি, বঞ্চনা, দুঃখ-কষ্ট ও আবর্জনার জঞ্জাল সরিয়ে নতুন আশা, কর্মোদ্দীপনা, স্বপ্ন, প্রত্যয় ও প্রাণশক্তিতে উজ্জীবিত হওয়ার ডাক দিচ্ছে।
নববর্ষের আনন্দে ভাসছে সারা দেশ
ফ্যাসিবাদমুক্ত পহেলা বৈশাখ
দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, পাহাড় থেকে সমতল। মেঠোপথ থেকে রাজপথ। নববর্ষের আনন্দে ভাসছে সারা দেশ। আজকের দিনটি শুধুই বাঙালির। এই দিনে সে তার অস্তিত্বের জানান দেয় প্রাণে প্রাণে, উৎসবে। বিশ্বকে বলে দেয়-আমি বাংলাদেশি, আমি বাঙালি; আমার আছে গর্বের ইতিহাস।
সংকল্প জানায় এক নতুন আগামীর; অতীত বেদনাকে ভুলে প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাওয়ার। এ জাতির সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব পহেলা বৈশাখ। বিগত বছরের জরাকে দূরে ঠেলে আজ বাংলাভাষীদের স্বপ্ন দেখার দিন, নতুন আলোয় অবগাহনের দিন, আনন্দে মেতে উঠারও দিন। হাজার বছরের ঐতিহ্যের বহমানতায় বাংলাদেশের ঘরে ঘরে আজ উৎসবের আমেজ। এ দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছে প্রায় ১৬ বছর। এ সময়ে আনন্দ, উচ্ছ্বাস আর ভাবের প্রকাশ করতে হয়েছে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত এক পরিবেশে। ফ্যাসিবাদী সরকারের মর্জিমতো। বাঁধভাঙা উল্লাসে সবাই তখন ভাসতে পারেনি। সেই ফ্যাসিবাদের নাগপাশ কাটিয়ে এ বছর এক মুক্ত আবহে, মুক্ত বাতাসে বাঙালির জীবনে এসেছে পহেলা বৈশাখ।
আর তাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন করতে আজ লাখো মানুষ ঘরের বাইরে ছুটবে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মানুষ পহেলা বৈশাখ উদযাপন করবে। বঙ্গাব্দ ১৪৩১-এর আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্নার হিসাব চুকিয়ে নতুন পথচলা শুরু হবে। জাতিধর্ম নির্বিশেষে সর্বজনীন উৎসবে নববর্ষ উদযাপনে একসঙ্গে গাইবে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো।’ বাংলার গ্রাম, শহর-বন্দর, পথঘাট সব জায়গায় দোলা দেবে পহেলা বৈশাখ।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
সম্প্রতি সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জানিয়েছিলেন, এবার পহেলা বৈশাখের আয়োজন হবে সর্বজনীন। আর তাই এবার পহেলা বৈশাখের আয়োজনও দুই দিন, যার শুরুটা হয় গতকাল চৈত্রসংক্রান্তিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কনসার্টসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে। বারোটি জেলায় চৈত্রসংক্রান্তি ও বৈশাখী সাধুমেলার আয়োজন শুরু হয়েছে শনিবার থেকে।
স্বাগত ১৪৩২
নতুন বাংলাদেশে এলো বৈশাখ
বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, ভিন্ন এক পরিবেশে নতুন বাংলা বছরকে স্বাগত জানাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের প্রথম নববর্ষ। বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ১৪৩২ বঙ্গাব্দকে প্রত্যাশা করা হচ্ছে সম্প্রীতির বন্ধনের বছর হিসেবে। সব মত, পথ ও সম্প্রদায়ের ভেদাভেদ ভুলে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা সর্বত্র। এবার পরিবর্তন আনা হয়েছে উদযাপনের ঢঙে।
‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’- এ প্রতিপাদ্য নিয়ে দেশব্যাপী আয়োজন করা হয়েছে নানান আয়োজনের। প্রথমবারের মতো সরকারও সম্পৃক্ত হয়েছে একডজনের বেশি আয়োজনে। তবে প্রতিবছরের মতো এবারও বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিনটি পালন করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদ। এ শোভাযাত্রায় থাকবে নতুন শুভদিনের প্রত্যাশা ও অশুভ শক্তিকে বধ করার প্রত্যয়।
বিশিষ্টজনরা বলছেন, স্বাধীন বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় যে বৈষম্য ছিল তা নিরসনে কাজ করবে গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারগুলো। অন্তর্বর্তী সরকারের হাত ধরে শুরু হওয়া সংস্কারের কার্যক্রম দেশের গণতন্ত্রকে দেবে নতুন মাত্রা। নতুন বছর ১৪৩২-এ স্পষ্ট হবে অনেক কিছুই। প্রত্যাশা আছে এবছরই স্বাধীন পরিবেশে মুক্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে দেশবাসী। ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশে আসবে সুশাসন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক পালাবদলের প্রেক্ষাপটে যে জগদ্দল পাথর বিদায় নিয়েছে তেমন পরিবেশে আর ভুগতে হবে না দেশবাসীকে। তাই নতুন বছরকে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য বিশেষ তাৎপর্যময় মনে করা হচ্ছে।
সরকার ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে এবারের পয়লা বৈশাখে অনেক অনুষ্ঠান হবে একেবারেই আনকোরা। আগে কখনো বাংলাদেশে এভাবে নববর্ষ উদযাপন হয়নি। যার প্রথম প্রতিফলন দেখা যাবে আনন্দ শোভাযাত্রায়। আগে মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে আয়োজন করা হলেও এবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে প্রথম শোভাযাত্রার নাম। এবার বিশেষভাবে চাকমা, মারমা, সাঁওতাল ও গারোসহ ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে অন্তর্ভুক্তিমূলক শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদ থেকে শুরু হবে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। শুধু নীলক্ষেত-পলাশী ফটক দিয়ে জনসাধারণ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন। বাকি ফটকগুলো বন্ধ থাকবে। শোভাযাত্রার শেষ অংশ যখন শাহবাগ মোড়ে পৌঁছাবে তখন জনসাধারণ শাহবাগ অংশের প্রবেশ পথ দিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এবার শোভাযাত্রার সামনে কোনো পুলিশ বা সোয়াত সদস্য থাকবে না। তার পরিবর্তে শোভাযাত্রার দুই পাশে থাকবে পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের ৮ ঘোড়ার পর শোভাযাত্রায় পর্যায়ক্রমে ২৮টি ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ৪৬৪ জন সদস্য, চারুকলা অনুষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বান্দরবানের কিশোর ব্যান্ডদল, বামবা ব্যান্ডসংগীত শিল্পীর দল, বাউল সাধু, কৃষকদল ও মূলধারা শিল্পীগোষ্ঠী, সাধনা নৃত্য সংগঠন, রংধনু পোশাকশ্রমিক শিল্পী সংগঠন, নারী ফুটবলার, অ্যাক্রোবেটিক শিল্পী, রিকশা র? র্যালি, ঘোড়ার গাড়ির বহর এবং সব শেষে থাকবে সাধারণ মানুষ।
শোভাযাত্রার অনুষঙ্গ হিসেবে বড়, মাঝারি ও ছোট- এই তিন শ্রেণির মোটিফ থাকবে। বড় মোটিফ হিসেবে থাকবে- ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, শহীদ মুগ্ধর পানির বোতল, শান্তির পায়রা, পালকি এবং তরমুজের ফালি। মাঝারি মোটিফ হিসেবে থাকবে- সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ, রঙিন চরকি, তালপাতার সেপাই, তুহিন পাখি, পাখা, ঘোড়া, লাঙল এবং ১০০ ফুট লোকজ চিত্রাবলির ক্যানভাস। ছোট মোটিফ হিসেবে থাকবে- ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, মাছের ডোলা, বাঘের মাথা, পলো, মাছের চাই, মাথাল এবং লাঙল।
এদিকে রমনা বটমূলে দিনভর অনুষ্ঠিত হবে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন ও নববর্ষবরণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সকাল সোয়া ৬টা থেকে শুরু হবে মূল পরিবেশনা। এতে অংশগ্রহণ করবেন নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রায় দেড় শত শিল্পী। থাকবে বৈশাখী গান ও কবিতা। মোট ২৪টি পরিবেশনার মধ্যে ৯টি সম্মিলিত গান, ১২টি একক গান ও কবিতা থাকবে তিনটি। এবারের নববর্ষের মূল কথন পাঠ করবেন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীকে নিজ নিজ উপায়ে, নিজেদের রীতি অনুযায়ী পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে সম্প্রীতি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘পয়লা বৈশাখ আমাদের এই সম্প্রীতির অন্যতম প্রতীক। নানা মত-ধর্ম-রীতিনীতির মধ্যেও আমরা সবাই এক পরিবারের সদস্য। এ দেশের হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠী- সব মিলিয়ে এ দেশের মানুষের বিচিত্র ভাষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য।’
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশ-বিদেশে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘নববর্ষের প্রথম দিনে আমি সবার কল্যাণ ও শান্তি কামনা করছি। বৈশাখের বহ্নিতাপে সমাজ থেকে মুছে যাক অসত্য, অন্যায়, অনাচার ও অশান্তি। চারিদিকে প্রবাহিত হোক শান্তির সুবাতাস, সুশীলা নদী, সমস্ত জগৎ হোক অমৃতময়।’
নানা আয়োজনে বর্ষবরণ : চারুকলা অনুষদ, ছায়ানট, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস)সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বর্ণিল আয়োজনে আজ দিনব্যাপী বৈশাখ বরণ করবে বলে জানিয়েছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। শেকড়ের কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসবে রাজধানীর ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। পান্তা, ইলিশ, মুড়ি, মুড়কি দিয়ে আপ্যায়নের পাশাপাশি আবহমান বাংলা সংস্কৃতি জারি, সারি, ভাটিয়ালি, পুথি, পালাসহ নানা বর্ণাঢ্য আয়োজনে বৈশাখ উদ্যাপনে মেতে উঠবে রাজধানীসহ সারা দেশ।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে আজ বৈশাখ উদযাপনে থাকছে নানা আয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ আয়োজিত ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’য় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর জাতীয় নাট্যশালায় অনুষ্ঠিত হবে বৈশাখী আয়োজনের নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দেশব্যাপী বৈশাখী অনুষ্ঠানমালার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে শিল্পকলা একাডেমি।
বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ : বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ। সকাল ১০টায় আনন্দ র্যালি, বেলা ১১টায় মেলা শুরু, সাড়ে ১১টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষকে বরণ করা হবে।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) : সংগঠনটির সভাপতি কামরুল হাসান দর্পণ ও সাধারণ সম্পাদক রাহাত সাইফুল জানান, বর্ষবরণের পাশাপাশি সংগঠনের স্থায়ী কার্যালয়ও উদ্বোধন করা হবে। এনিগমা মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের সহযোগিতায় এ আয়োজন সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা মতিহার।
ছায়ানট : বরাবরের মতো এবারও রমনার বটমূলে প্রভাতি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বৈশাখ উদ্যাপন করবে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। প্রতিষ্ঠানটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। পয়লা বৈশাখের ভোরের আলো ফুটতে ফুটতে ভৈরবীতে রাগালাপ দিয়ে শুরু হবে প্রতিষ্ঠানটির বাংলা নববর্ষ বরণের সূচনা।
শিল্পে বাড়তি ব্যয়ের বোঝা
কালের কণ্ঠের প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, চলমান গ্যাসসংকটসহ নানা কারণে ক্ষতির মুখে রয়েছে দেশের শিল্প খাত। দীর্ঘদিন ধরেই চাহিদামতো গ্যাস মিলছে না শিল্প-কারখানাগুলোতে। গ্যাসসংকটের কারণে তাদের উৎপাদন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। শিল্প-কারখানার পাশাপাশি সিএনজি স্টেশন, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও আবাসিক খাতসহ সব ক্ষেত্রে এখন গ্যাসের সংকট চলছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই নতুন শিল্প-কারখানায় এবং ক্যাপটিভ পাওয়ারে (শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র) গ্যাসের দাম আরো ৩৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে শিল্প গ্রাহকদের প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের বিল ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকা এবং ক্যাপটিভ গ্যাসের দাম ৩১.৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪২ টাকা করা হয়েছে। এই অবস্থার মধ্যেই নতুন করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি শিল্পে নতুন বিনিয়োগে বাধাগ্রস্ত করাসহ শিল্পের সংকট আরো বাড়িয়ে তুলবে বলে শিল্পের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন।
শিল্পে বাড়তি ব্যয়ের বোঝাখাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা, বাজার অস্থিতিশীলতা, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার, ঋণপত্র খোলার অভাবে কাঁচামালের অপর্যাপ্ততা, শ্রমিক অসন্তোষ ও উৎপাদন অপ্রতুলতায় প্রায় দুই শতাধিক কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
যেগুলো টিকে আছে সেগুলোও অস্তিত্বের সংকটে ধুঁকছে। এমতাবস্থায় নতুন করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে শিল্প খাতকে আরো ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে জানিয়েছেন তাঁরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার গ্যাসের দাম বাড়ালেও সরবরাহ তেমন বাড়াতে পারবে না। কারণ ধারাবাহিকভাবে দেশীয় কূপগুলো থেকে গ্যাসের উৎপাদন কমে আসছে।
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) থেকে সর্বোচ্চ আমদানির সক্ষমতা ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট। নতুন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ না হলে আমদানি আর বাড়ানো যাবে না। আগামী দুই বছরেও নতুন টার্মিনাল চালুর তেমন সম্ভাবনা নেই। টার্মিনাল নির্মাণে কোনো চুক্তি হয়নি। আওয়ামী লীগ আমলে হওয়া দুটি চুক্তি বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
তাই যেভাবেই হোক অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে শিল্পে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর জোরালো উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে প্রায় চার হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গতকাল রবিবার গ্যাস সরবরাহ করা হয় দুই হাজার ৬৯৬ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে গতকাল ঘাটতি ছিল প্রায় দেড় হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। মোট দুই হাজার ৬৯৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে এক হাজার ৮৭৩ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আমদানীকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) থেকে ৮২২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়।
ঢাকার সাভার, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী এলাকার শিল্প-কারখানাগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ায় উৎপাদন ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। গ্যাসের চাপ কম থাকায় এসব এলাকার বেশ কিছু শিল্প-কারখানা কখনো চলছে, কখনো বন্ধ থাকছে। গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিজস্ব ব্যবস্থা থাকলেও গ্যাসের সংকটে শিল্প-কারখানাগুলো সেগুলোও চালাতে পারছে না। এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছেন শিল্পোদ্যোক্তারা।
এমআই