‘মাফ করে দিও মা’— কালেমা পাঠ করতে করতে শহীদ রিফাত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৮

কলিজার টুকরো সন্তানের জন্য রিফাতের বাবা-মায়ের হৃদয়বিদারক অপেক্ষার মুহূর্ত | ছবি : আল জাজিরা
‘মাফ করে দিও মা… আমি শুধু মানুষকে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম’— মৃত্যুর আগে এই কথাগুলো বলে গেছেন ২৪ বছরের তরুণ প্যারামেডিক রিফাত রাদওয়ান। ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে গিয়েও বারবার কালেমা পাঠ করছিলেন তিনি।
সেদিন ২৩ মার্চ। গাজার খান ইউনুস এলাকার আল-মাওয়াসি অঞ্চলে একটি উদ্ধার মিশনে ছিলেন রিফাত। সেখানেই ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান তিনি ও তার ১৪ সহকর্মী।
এদিন গুরুতর আহত অবস্থায় রিফাত নিজের মোবাইলে শেষ মুহূর্তের একটি ভিডিও রেকর্ড করেন। সেই ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ... মা, মাফ করে দিও মা।’
রিফাতের কণ্ঠ ভারী, চোখে পানি, কিন্তু বুকে সাহস! সেই মুহূর্তে তিনি শুধু মা’কে মনে রেখেছেন। তার মায়ের যেন কষ্ট না হয়, সেই চিন্তায় বিদায়ের আগে ক্ষমা চেয়েছেন।
ছেলে নিখোঁজের পর আট দিন অপেক্ষা করেছিলেন রিফাতের মা গালিয়া। প্রতিদিন রেড ক্রিসেন্টে ফোন করেছেন, প্রার্থনা করেছেন, কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। ঈদুল ফিতরের দিন সকালে রেড ক্রিসেন্ট জানায়, অবশেষে ইসরায়েলের অনুমতি মিলেছে মরদেহ উদ্ধারের। কিছুক্ষণ পরই খবর আসে, ছয়টি মরদেহের একটি তার কলিজার টুকরো রিফাতের।
রিফাতের মা গালিয়া বলেন, ‘ লাশের খবর শুনেই মনে হলো, বুকের ভেতর একটা ছুরি ঢুকে গেল। কিন্তু বললাম, আল্লাহ যা চায়, তাই হবে।’

হাসপাতালে পৌঁছার পর তিনি দেখেন, রিফাতের মরদেহ যখন অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানো হয় তখন কান্নার রোল পড়ে যায়। সহকর্মীরাও ভেঙে পড়েন আর্তনাদে।
ছোটবেলা থেকেই রিফাত অ্যাম্বুলেন্স-ফায়ার ট্রাকের পেছনে ছুটতেন। বড় হয়ে সে ইচ্ছা পূরণ করে প্যারামেডিক হন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে রেড ক্রিসেন্টের হয়ে কাজ করছিলেন তিনি। মা বলেন, ‘ও তখনই বলেছিল, মা, আমি শুধু মানুষকে সাহায্য করতে চাই।’
প্রতিদিন কাজে গিয়ে রিফাত ফিরতেন রক্তমাখা পোশাক পরে। মা গালিয়া সেই পোশাক নিজ হাতে ধুয়ে দিতেন। রিফাত বলতেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে শিশুর দেহ তুলে এনেছেন, নারীদের মৃতদেহ বের করেছেন। তবু থামেননি। চেয়েছিলেন বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করে আবার গাজায় ফিরে আসতে, মানুষকে আরও ভালোভাবে সাহায্য করতে।
রিফাতের ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, তাদের অ্যাম্বুলেন্স, পোশাক সব স্পষ্টভাবে চিহ্নিত ছিল। তবুও হাত থামে নি বর্বর ইসরায়েলি বাহিনীর। পাথর চুখে গুলি চালায় রিফাতদের উপর।
শহীদ রিফাতের পথেই হাঁটবেন তার ছোটো ভাইয়েরাও। মা গালিয়া বলেন, ‘আমার ছেলে শহীদ হয়েছে, কিন্তু ওর পথ থেমে যাবে না। আমি ওর ছোট দুই ভাইকেও (১৩ বছরের আবদুল জাওয়াদ ও ১১ বছরের সুলাইমান) প্যারামেডিক বানাব। ওর বেঁচে থাকার অর্থই ছিল— মানুষকে বাঁচানো।’
আল জাজিরা অবলম্বনে আবু তালহা রায়হান