সৌদি যুবরাজকে নিয়ে মশকরা
ব্যাপক ধরপাকড়ের দাবি প্রবাসী বাংলাদেশিদের, যা জানাল দূতাবাস
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ২১:৪০

রাজধানীর ঐতিহাসিক ‘মার্চ ফর গাজা’র র্যালিতে সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ব্যঙ্গাত্মক ছবি ও জুতা নিক্ষেপের ঘটনায় দেশটিতে ব্যাপক ধড়পাকড় শুরু হয়েছে- এমন দাবি করেছেন প্রবাসীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশটিতে অবস্থানরত প্রবাসীদের এ ধরনের বিভিন্ন পোস্ট ভাইরাল হয়েছে।
তাদের দাবি, গাজায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক জনসমাবেশে মুহাম্মদ বিন সালমানকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কার্যকলাপের পর থেকে প্রবাসীরা আতঙ্কে রয়েছেন।
যদিও দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা বাংলাদেশের খবরকে বলছেন, এটি সম্পূর্ণ গুজব। দেশটিতে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। দূতাবাসের কাছে এ ধরনের কোনো তথ্যও নেই। তবে যারা অবৈধভাবে সৌদিতে অবস্থান করছেন তাদের ধরতে সবসময় অভিযান চালায় দেশটির প্রশাসন।
প্রবাসীরা বলছেন, অবৈধ প্রবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সৌদি সরকার। এ ঘটনার পর থেকে অবৈধদের সঙ্গে বৈধ প্রবাসীদেরও ধড়পাকড়ের ঘটনা ঘটছে। এমন আতঙ্কে এখন বাসা থেকেও বের হচ্ছে না অনেকেই।
উল্লেখ্য, গত ১২ এপ্রিল গাজায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গণজমায়েত গোটা বিশ্বের নজর কাড়ে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর (অব.) সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান।
ওই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আরব বিশ্ব যা করে দেখাতে পারেনি, বাংলাদেশ তা করে দেখিয়েছে।’
জানা গেছে, বাংলাদেশে যখন ফিলিস্তিনের সমর্থনে ঐতিহাসিক র্যালি হয়, এর দুয়েকদিন আগে সৌদির আল-উলায় চলে কনসার্ট, ডিজে পার্টি ও আলোক উৎসব। সৌদি আরবের এমন কাজ মেনে নিতে পারেননি দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কেউ কেউ। ফিলিস্তিনিদের হত্যার বিপরীতে গাজা ইস্যুতে সৌদির নিশ্চুপ থাকা ও উৎসবের বিষয়টি মানতে পারেনি। ফলে ঢাকার র্যালিতে দেশটির প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ছবি বিকৃত করে ইসরায়েলি শাড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়। আবার কোনো কোনো ছবিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মার্কিন ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সৌদি প্রিন্সকে রাখা হয়। সেসব ছবিতে জুতাও নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে।
ব্যঙ্গাত্মক ছবি ও জুতা নিক্ষেপের ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এক্সে (সাবেক টুইটার) এ ধরনের কয়েকটি পোস্ট ভাইরাল হয়। সেসব পোস্টে শেয়ার দিয়ে সৌদি নাগরিকদের নিন্দা জানাতেও দেখা যায়।
সৌদি প্রবাসীরা এসব বিষয়ে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, গত ৩-৪ দিন আগে রিয়াদের বাতা মার্কেট থেকে ২৬ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের মধ্য থেকে তিনজনকে কফিলের (মালিক) সুপারিশে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকিরা এখনো পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন। এছাড়াও দেশটির বিভিন্নস্থানে বিচ্ছিন্নভাবে ধরপাকড় চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত এইচ ই এম দেলোয়ার হোসেন বাংলাদেশের খবরকে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি দূতাবাসের প্রেস উইংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেকেন্ড সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহেই সৌদি প্রশাসন গড়ে ১৯-২১ হাজার অবৈধ প্রবাসী ধরে। বৈধ প্রবাসীদের সৌদি কর্তৃপক্ষ কখনোই ধরে না। শুধু অবৈধদেরই ধরা হয়। তবে কোন দেশের কতজন তারা সেটা উল্লেখ করে না। এরমধ্যে জুতা নিক্ষেপের ঘটনায় যেটি বলা হচ্ছে- সেটি শুধুমাত্র গুজব। কারণ সৌদি সরকার এসব ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় না। হুজুগে বাঙালিরা এটা প্রচার করছে।’
তিনি বলেন, ‘জুতা নিক্ষেপের ঘটনা শুধু বাংলাদেশেই নয়; বিভিন্ন জায়গায় ঘটেছে। আমেরিকায়ও জুতা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। একশ্রেণির মানুষ এসব নিয়ে রিউমার ছড়িয়ে মজা পায়।’
সেকেন্ড সেক্রেটারি বলেন, ‘বর্তমানে সৌদিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের এক তৃতীয়াংশই অবৈধ। এছাড়া আকামার রেট বেড়ে গেছে, কাজ নেই। আবার বাংলাদেশ থেকে ভুয়া ভিসায় অনেকে লোক নিয়ে আসে, কিন্তু এসে দেখে কাজকর্ম নেই। এ ধরনের ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে। কিন্তু কিছু লোক ভিউ পাওয়ার আশায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব গুজব ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আমরা সবই দেখি ও যাচাই করি। যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে অন্তত সৌদির কোনো না কোনো মিডিয়াতেও আসতো। এখনো এ ধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে আসেনি।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘সৌদি আরবের হারা ও বাছা নামক দুটি জায়গা দুটি অপরাধের প্রাণকেন্দ্র। এমন কোনো অপরাধ নেই যা এই এলাকায় হয় না। এই এলাকায় সৌদি নাগরিকরাও থাকেন না বাংলাদেশিদের অত্যাচারে। ওখান থেকেই যে যার মতো করে গুজব ছড়ায়।’
তিনি বাংলাদেশের খবরকে আবারো নিশ্চিত করেন, ‘এটি পুরোপুরি গুজব।’
প্রবাসী বাংলাদেশিদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের লোকজনের একটি বড় সমস্যা মিথ্যা বলা। পুলিশ তাদের ধরে এক অপরাধে, পরে তারা বলে আরেকটা। দায় চাপিয়ে বলা হয়, অ্যাম্বাসি এসব দেখে না। অথচ সৌদি আরবে মিছিল করা কিংবা ১০ জন লোক একসাথে হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখানে গোয়েন্দা নজরদারিও মারাত্মক। তারা নিশ্চিত কোনো তথ্য ছাড়া কাউকে ধরবে না। আর ভিসা-আকামা সবই আছে এমন বৈধ যদি কাউকে ধরা হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে সেও কোনো না কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত। যদিও ধরার পর নিজের দোষ এড়াতে সবাই মিথ্যা বলে।’
এনএমএম/ওএফ