মক্কা প্রতিনিধি ইয়াহইয়া আল মাহবুবের তোলা ছবি
ইসলাম ধর্মের পাঁচ স্তম্ভের একটি হজ। সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (কাবা শরিফ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, তাদের ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এ ঘরের হজ করা ফরজ।’ (সুরা আল-ইমরান, আয়াত: ৯৭)
এটা তো গেলো স্বাভাবিক পরিস্থিতি। কিন্তু অনেকে এমন আছেন, যারা একত্রে এ পরিমাণ নগদ টাকা জমা করতে পারেন না, যা দিয়ে হজের খরচ নির্বাহ করবেন। কিন্তু ঋণ নিয়ে হজ করার পর তারা ধীরে ধীরে তা পরিশোধ করার সামর্থ্য রাখেন, এমন ব্যক্তি এবং যারা পূর্ব থেকেই ঋণগ্রস্ত- তাদের হজ করার হুকুম কী?
মূলত, হজ ফরজ হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো অর্থনৈতিক সামর্থ্য। যদি কেউ ঋণ নিয়ে হজ করতে চান, তবে তা নির্ভর করবে ঋণ পরিশোধের সম্ভাবনার ওপর। যদি ঋণ গ্রহণের পর তা পরিশোধ করার নির্ভরযোগ্য উপায় থাকে এবং যার কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হবে তিনি তাগাদা না দেন, তাহলে ঋণ নিয়ে হজ করা বৈধ।
যদি ঋণ পরিশোধের নিশ্চিত ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে ঋণ নিয়ে হজ করা মাকরুহ হিসেবে গণ্য হবে। কারণ ঋণ অপরিশোধিত অবস্থায় মৃত্যু হলে তা উত্তরাধিকারীদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
আর হজের শুদ্ধতা সম্পদের মালিকানা কিংবা ঋণের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তবে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য হজ না করাই উত্তম। কারণ হজের খরচ ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করাই শরীয়তের দৃষ্টিতে অধিক প্রশংসনীয়। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘ধনী ব্যক্তির (ঋণ আদায়ে) গড়িমসি করা জুলুম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৪০০)
আলেমরা এ বিষয়ে একমত যে, ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ঋণ রেখে হজ করা শরীয়তসম্মত হলেও এটি উত্তম নয়। যদি হজের রোকন ও শর্তগুলো যথাযথভাবে পালন করা হয়, তাহলে হজ তো শুদ্ধ হবে। কিন্তু ফকিহ আলেমদের মধ্যে কেউ কেউ ঋণ রেখে হজ করাকে মাকরুহ বলেছেন। (ফাতাওয়া কাজিখান: ১/৩১৩)
ঋণ করে হজ করার আগে নিজের আর্থিক অবস্থার গভীর মূল্যায়ন করা উচিৎ। শরিয়ত এমন ইবাদত করতে উৎসাহিত করে, যা কোনো ধরনের দায়বদ্ধতা বা জটিলতা সৃষ্টি করে না। তাই পূর্ণ সামর্থ্য অর্জন করার আগ পর্যন্ত হজ করার জন্য অপেক্ষা করাই উত্তম। এক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সতর্কবাণী স্মরণ রাখা উচিৎ।
বিএইচ/