Logo

রাজনীতি

একাত্তর নিয়ে জামায়াত-বিএনপি দ্বন্দ্ব চরমে

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:০০

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বেড়েই চলছে। গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোর কিছুদিন পরই শীর্ষ এই রাজনৈতিক দল দুটির দ্বন্দ্ব চরম রূপ লাভ করে।

বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দলের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়ে উঠে। সময়ের সাথে দুই দলের তৃণমূলেও এ দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান, সবখানেই এখন দল দুটির নেতাকর্মীদের মধ্যে বাগ্‌যুদ্ধ চলছে। সাধারণ দৃষ্টিতে এই দ্বন্দ্বকে আদর্শিক দ্বন্দ্ব মনে হলেও কার্যত দ্বন্দ্ব গিয়ে ঠেকেছে একাত্তরে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকার প্রশ্নে।

দ্বন্দ্বের শুরু নির্বাচন
ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ছাত্র-জনতার সিদ্ধান্তে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকার গঠনের পর রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে, বিশেষত বিএনপি। তারা সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ চায়। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা নির্বাচনের জন্য ‘প্রয়োজনীয় ও যৌক্তিক’ সময় দেওয়ার আহ্বান জানান। এতে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে অসন্তোষ দেখা দেয়। 

কেননা তাদের মতে, নির্বাচনের জন্য সময় বাড়ানো হলে তা জাতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে, গত বছরের শেষের দিকে ও চলতি বছরের শুরুতে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচনের দাবি জানায়। এতে দুই দলের দ্বন্দ্বের পরিস্থিতি কিছুটা প্রশমিত হয়।

দ্বন্দ্ব এখন একাত্তর প্রশ্নে
জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামীকে একাত্তরে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এবার বিএনপিও এই বিতর্কে যোগ দিয়েছে। যা দেশের দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে এক নতুন দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছে। 

দ্বন্দ্বের সূত্রপাত জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। রংপুরে এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘দেশে পরীক্ষিত দুটি দেশপ্রেমিক শক্তি আছে- একটি সেনাবাহিনী, আরেকটি জামায়াতে ইসলামী।’ 

তার এই বক্তব্যের পর বিএনপির শীর্ষ নেতারা তীব্র প্রতিবাদ জানান। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সিলেটে এক সমাবেশে বলেন, ‘দেশপ্রেমী শুধু সেনাবাহিনী, কারণ তারা স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখেছিল। জামায়াতে ইসলামী একাত্তরে কোথায় ছিল? আপনারা কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন? আপনারা কোন সেক্টর কমান্ডারের আন্ডারে যুদ্ধ করেছেন? বাংলাদেশে কেউ দেশপ্রেমী নেই, শুধু একটি রাজনৈতিক দল দেশপ্রেমী, এ ধরনের বিভ্রান্তি আপনারা তৈরি করলে মানুষ হাসবে। মানুষ হাসি ছাড়া আর কিছু দেবে না।’

এদিকে, জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে জামায়াতের আমিরের বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘জামায়াত একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে এখন জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করে, তার ভূমিকা জায়েজ করার চেষ্টা করছে, যা খুবই হতাশাজনক।’ বিএনপি নেতারা একই সাথে জামায়াতে ইসলামীর দুঃসময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে পাশে থাকার কথাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন।

বিএনপির বক্তব্যের জামায়াতের প্রতিক্রিয়া
বিএনপি নেতাদের জামায়াত বিরোধী বক্তব্যের পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জামায়াতের এক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াত দীর্ঘদিন একসাথে রাজনৈতিক জোটে ছিল এবং লড়াই সংগ্রাম করেছে। শেখ হাসিনার পতনের প্রশ্নেও একীভূত অবস্থানে ছিল দুই দল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নেতাদের জামায়াত বিরোধী বক্তব্য জাতীয় ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘যদি ঐক্য নষ্ট হয়, তবে আওয়ামী লীগ অবশ্যই এর সুযোগ নেবে। আওয়ামী লীগ নীরবে বসে নেই, তারা দেশ ও বিদেশে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা যা বলছেন
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জুলফিকার আলী সিদ্দিক মনে করেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের ঐতিহাসিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিশেষ করে স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক তো আছেই। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে জামায়াতের অবস্থান ও স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ে বিএনপি নেতারা বারবার প্রশ্ন তুলছেন।’

তিনি বলেন, ‘এটি তাদের মধ্যে এক কঠিন বিভেদ সৃষ্টি করেছে। যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। একাত্তরের প্রশ্ন বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব আরো তীব্র করেছে। ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে। রাজনৈতিক বক্তব্যে দুই দলের শীর্ষ নেতাদের সহনশীলতা প্রদর্শন করা উচিত।’

এসআইবি/ওএফ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর