Logo

জাতীয়

দেশে এইচএমপিভির হানা : কারা কতটা ঝুঁকিতে

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩:৪১

দেশে এইচএমপিভির হানা : কারা কতটা ঝুঁকিতে

দেশে সংক্রামক ভাইরাসের তালিকায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস (এইচএমপিভি)। সম্প্রতি একজনের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার খবরের পর বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। চীন-ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই আতঙ্কিত।

মানুষ এখনও করোনার দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারেনি। এরই মধ্যে চোখ রাঙাচ্ছে এইচএমপিভি ভাইরাস। অনেকেই বিষয়টি সন্দিহান।

এইচএমপিভি ভাইরাস কি
এইচএমপিভি ভাইরাস সাধারণত আক্রান্ত মানুষের হাঁচি বা কাশি থেকে ছড়ায়। এছাড়া স্পর্শ বা করমর্দনের মতো ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এইচএমপিভি ছড়াতে পারে। আমেরিকার ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল’ সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, এইচএমপিভি রয়েছে এমন বস্তু বা স্থান স্পর্শ কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির ড্রপলেট লেগে থাকা স্থান যেমন- দরজার হাতল, লিফটের বাটন, চায়ের কাপ ইত্যাদি স্পর্শ করার পর সে হাত চোখে, নাকে বা মুখে ছোঁয়ালে এইচএমপিভি ছড়াতে পারে। অনেকটা কোভিডের মতো। এইচএমপিভির সংক্রমণ সাধারণত শীতের সময় বাড়ে, যখন মানুষ দীর্ঘ সময় ঘরের ভেতর সময় কাটায়। 

এদিকে চীনের সেন্ট্রার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশান বা সিডিসি'র তথ্য অনুযায়ী, এইচএমপিভি কোভিড-১৯ এর মতোই একটি আরএনএ ভাইরাস।নেদারল্যান্ডসের গবেষকরা শিশুদের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের নমুনা পরীক্ষা করার সময় প্রথম এই ভাইরাসের ব্যাপারে জানতে পারেন।সিডিসি তথ্য অনুযায়ী, ভাইরাসটি অন্তত ৬০ বছর আগেই ছড়িয়েছে।তবে ২০০১ সালে ভাইরাসটি কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। 

বাংলাদেশে এইচএমপিভি ভাইরাস
বাংলাদেশে এইচএমপিভি ভাইরাস ২০১৭ সালে প্রথম অস্তিত্ব পাওয়া যায়। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলছে, প্রতি বছরই কমবেশি মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আসছেন। এ পর্যন্ত অনেকের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হলেও জটিলতার ইতিহাস নেই। এ কারণে এইচএমপিভি ভাইরাস নিয়ে এই মুহূর্তে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই। 

শনিবার (১১ জানুয়ারি) বাংলাদেশে একজনের শরীরে এইচএমপিভি ভাইরাস শনাক্তের খবর পাওয়া যায়। তার গ্রামের বাড়ী কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব এলাকায়। তিনি কখনো বিদেশ ভ্রমণ করেননি। দেশেই তিনি এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানায় সংস্থাটি। আক্রান্ত ব্যক্তি বর্তমানে রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

চীন ও ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে
গতবছরের শেষ দিক থেকে চীনে এইচএমপিভি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। দেশটির গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, চীনে প্রতিনিয়ত এইচএমপিভি প্রকট হয়ে উঠলেও এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কিংবা দেশটির সরকার সতর্কতা জারি করেনি। যেভাবে ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে, তাতে করে যেকোনো সময়ে দেশটি জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে। 

ভারতেও এইচএমপিভি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতের বেঙ্গালুরু ও কলকাতায় শিশুদের মধ্যে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এইচএমপিভি ভাইরাস যাতে করোনার মতো ভারতে ছড়িয়ে না পড়ে, তাই আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে আছে দেশটি। চীন-ভারত ছাড়া জাপান ও মালয়েশিয়ায় এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। 

বাংলাদেশে এইচএমপিভি ঝুঁকি
এইচএমপিভি সংক্রামক রোগ হাওয়ায় জনবহুল দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সেদিক থেকে বাংলাদেশেও ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতোমধ্যে সতর্কতা জারি করেছে। 

যেখানে ভাইরাসটি থেকে সুরক্ষা পেতে কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যেমন- বাইরে গেলেই মাস্ক পরা। ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া। হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা। আক্রান্তদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা। জনসমাগম স্থল এড়িয়ে চলা। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় মুখ টিস্যু দিয়ে ঢেকে নেওয়া এবং ব্যবহৃত টিস্যুটি সাথে সাথে মুখবন্ধ করা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে হাত সাবান পানিতে ধুয়ে ফেলা। 

এছাড়াও যদি টিস্যু না থাকে তাহলে কনুই ভাঁজ করে সেখানে মুখ গুঁজে হাঁচি দেওয়া। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি ও শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করা। সর্দিকাশি, জ্বর হলেও অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, এইচএমপিভি একটি শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস। যা ওপরের ও নীচের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ ঘটায়। সাধারণত শীতকালে ভাইরাসটিতে বেশি আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এটি সব বয়সের ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। 

কারা ঝুঁকিতে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিশু, বয়স্ক ও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের জন্য ভাইরাসটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশে এ ভাইরাসটি নতুন কোনো রোগ নয়। জনবহুল দেশ হওয়ায় আমাদের ঝুঁকিও বেশি। ভাইরাসটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতে পর্যাপ্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে আমরা বুঝতে পারব আমাদের দেশে ভাইরাসটিতে কতজন আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তের সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে রোগটি নিয়ন্ত্রণ করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

এসআইবি/ওএফ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর