বাংলাদেশের পত্রিকা থেকে
গুম-খুনে হাসিনা ও সেনাচক্র

বাংলাদেশের খবর
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৬

ছবি : বাংলাদেশের খবর
প্রিয় পাঠক, পবিত্র জুমা ও ইজতেমার মহিমায় বিভাময় হোক আপনার দিন। স্বপ্নগুলো বাস্তবের পেখম মেলুক, উড়ুক মুক্ত দুনিয়ায়—এই প্রত্যাশায় চলুন একনজরে জেনে নিই আজকের দিনের বাংলাদেশকে। চোখ বুলাই দেশের শীর্ষ দৈনিকগুলোর প্রধান শিরোনামে—
নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দলগুলো
বাংলাদেশের খবরের লিড করেছে, রাজনীতিতে এক ধরনের নির্বাচনী হাওয়া বইছে। সরকারও নির্বাচন আয়োজনের অপেক্ষায়। কয়েকদিন আগে প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি ক্লিয়ার করেছেন বলেই শেষ নয়, এর আগেও বিভিন্ন মহল থেকে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব আভাস পেয়েছেন, সেই সূত্র ধরেই ভোটের মাঠে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এখন রাজনৈতিক দলগুলোর।
এর মধ্যে উকিঝুঁকি দিচ্ছে আওয়ামী লীগও। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আভাস দিচ্ছেন তারা। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকারটা যাতে লাভ করতে পারেন, সে দাবিও আছে তাদের। আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে কি না সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে তাদের জোট রেডি। ১৬ বছর যাদের নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছে, তারাও নির্বাসিত আওয়ামী লীগের মতো। ফলে ভোট করার ক্ষমতা পেলে তারাই থাকছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে, এটাই বাস্তবতা।
এদিকে, সহসাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এ সূত্র ধরেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত থাকা ছাত্র ও ছাত্র নেতৃবৃন্দ নতুন প্ল্যাটফরম খোঁজার চেষ্টায় মত্ত। এরইমধ্যে নতুন করে আলোচনায়, জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-জনতার নতুন একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। দল ঘোষণার আগে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকার থেকে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
আর আগামী জুন মাসে পদত্যাগ করতে পারেন সরকারের আরেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। জানা গেছে, নতুন দল প্রথমে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করবে। কমিটির সদস্য সচিব হতে যাচ্ছেন নাহিদ ইসলাম। ছাত্রদের নতুন দলের গঠনতন্ত্রের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর অল্পসময়ের মধ্যে গঠিত হয় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। নানা চ্যালেঞ্জ ও সংস্কার কাজে সরকারকে সহায়তা করেছে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। তবে পাঁচ মাসের মাথায় এই সরকারকে সংস্কার কাজে আর সময় দিতে চায় না বড় রাজনৈতিক দলগুলো। তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবিতে মাঠে নামছে।
সব বিভাগে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ হতে পারে
প্রথম আলোর প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, রাজধানীর বাইরে প্রশাসনিক বিভাগীয় সদরে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের কার্যক্রম সম্প্রসারণের প্রস্তাব করতে যাচ্ছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে সুনির্দিষ্ট কিছু জেলা আদালতে প্রয়োজন অনুসারে এক বা একাধিক বাণিজ্যিক আদালত স্থাপন করা যেতে পারে। কমিশনের সুপারিশের খসড়া সারসংক্ষেপে এ কথা বলা হয়েছে।
এর আগে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ করে দেশের সব বিভাগে হাইকোর্টের স্থায়ী আসন চালুর কথা বলা হয়। এ কমিশন ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।
একটি পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা আইনজীবীসহ অংশীজনদের দীর্ঘদিনের দাবি। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশের খসড়ায় বলা হয়েছে, বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ এবং সর্বোপরি নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথক্করণে আলাদা সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন করতে হবে। এ জন্য একটি স্বতন্ত্র আইন বা অধ্যাদেশ প্রণয়ন করতে হবে।
অবশ্য গত ২৭ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে একটি ধারণাপত্রসহ বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠনের প্রস্তাব আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কমিশনের খসড়া প্রস্তাবে সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ, শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা এবং অপসারণ; সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন এবং বিচার বিভাগের প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ; বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ ও সম্প্রসারণ, স্থায়ী ও স্বতন্ত্র সরকারি অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন; স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সংস্থা; জমা থাকা মামলার নিষ্পত্তি বা মামলাজট কমানো; বিচারকাজে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার; বিচার বিভাগের দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত করাসহ আরও বেশ কিছু বিষয় রয়েছে।
অজ্ঞাত লাশ নিয়ে নানা প্রশ্ন
বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর পার্শ্ববর্তী টঙ্গীর বাসিন্দা সোহেল শেখ। অটোরিকশা চালাতেন উত্তরায়। কাজের ফাঁকে অংশ নিতেন গণ আন্দোলনে। ৫ আগস্ট থেকে নিখোঁজ তিনি। সোহেল অবুঝ দুই সন্তানের জনক। দুই বছরের শিশু সায়মন শেখ এবং সাত বছরের সুমাইয়াকে প্রবোধ দেওয়া হয়।
বলা হয়, তাদের বাবা কাজের জন্য বাইরে গেছেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে গতকাল কথা বলতেই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন স্ত্রী আয়েশা আক্তার। বলেন, সন্তানদের কোনো উত্তর দিতে পারি না। অর্থাভাবে টঙ্গী থেকে বাবার বাড়ি পিরোজপুরে চলে আসতে হয়েছে। স্বামীর সন্ধান চেয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় জিডি করেছিলাম। কেউ আমাদের খোঁজ করেনি।
গাজীপুর কোনাবাড়ি শরীফ মেডিকেলের সামনে ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন হৃদয় (২০)। নিখোঁজ হৃদয়ের বোনের স্বামী ইব্রাহীম বলেন, কলেজে পড়ার পাশাপাশি অটোরিকশা চালাত হৃদয়। কাজের ফাঁকে আন্দোলনে অংশ নিত। তাকে গুলি করে মেরে ফেলার দৃশ্য দেখেছেন অনেকে। তার হতভাগা বাবা লাল মিয়া কিংবা তার কোনো স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ তো দূরে থাক, কারও ডিএনএ স্যাম্পল নেওয়ারও প্রয়োজনবোধ করেনি কোনো হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ।
সোহেল শেখ এবং হৃদয়ের স্বজনদের মতো অনেক নিখোঁজ পরিবারের স্বজনদের ডিএনএ নমুনা নেওয়া হয়নি ঢাকা মেডিকেল কলেজ কিংবা অন্য কোনো হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ থেকে। তাদের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো সংস্থাও।
বেওয়ারিশ লাশ দাফনকারী দাতব্য সংস্থা আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের লাশ দাফনের প্রক্রিয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কবরে দেওয়া হচ্ছে না কোনো চিহ্ন, যা দেখে লাশ এবং স্বজনের ডিএনএ স্যাম্পল মিললে কবর শনাক্ত করা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য আদালত কবর থেকে লাশ উত্তোলনের আদেশ দিলে কীভাবে এর বাস্তবায়ন হবে?
সবার দৃষ্টি নতুন দলে
যুগান্তর লিড করেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বে দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শিগগির নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে। এ দল গঠনকে কেন্দ্র করে রাজনীতির মাঠ সরগরম হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ সবার মধ্যে এ নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের জাতীয় নাগরিক কমিটির তত্ত্বাবধানে নতুন দল গঠন করাকে সাধুবাদ জানালেও এ ব্যাপারে জাতীয় নির্বাচনের সময় অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। এমনকি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে নতুন দল গঠিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন রাজনৈতিক দলগুলোর কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা।
এদিকে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন এ দলটি আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে-সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী জনপ্রত্যাশা পূরণের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসছে জাতীয় নাগরিক কমিটির এ রাজনৈতিক দল। যার গঠনতন্ত্র ও নির্বাচনি ইশতেহারেও থাকবে বৈচিত্র্য। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে। প্রয়োজনে তারা নির্বাচনি জোটও করতে পারে। এ অবস্থায় সবার দৃষ্টি এখন নতুন এ দলের দিকে।
প্রসঙ্গত, গণ-অভ্যুত্থানের মুখে টিকতে না পেরে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এর তিন দিনের মাথায় ৮ আগস্ট ফ্রান্স থেকে দেশে ফিরে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের।
প্রথম দিনই এই সরকারে উপদেষ্টা হিসাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথমসারির প্রতিনিধি হিসাবে যুক্ত হন মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী থেকে উপদেষ্টা হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কারিগরদের একজন মাহফুজ আলম। এরপর থেকেই ছাত্রদের নেতৃত্বে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের আলোচনা ব্যাপকতা পায়। অভ্যুত্থানের এক মাস পর সেপ্টেম্বরে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া নেতাদের নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা বলে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। প্রায় চার মাস ধরে সারা দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কমিটি গঠন করে সংগঠনের বিস্তৃতিও ঘটিয়েছে তারা।
উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তৃণমূলে সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি হলে দলও দাঁড়িয়ে যাবে। গত কয়েক দিন থেকে জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে দল গঠনের সর্বশেষ প্রস্তুতি সম্পর্কে জানান দেওয়া হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্যতা মাথায় রেখে দ্রুত দল গঠনের প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় নেপথ্যের কারিগররা।
গুম-খুনে হাসিনা ও সেনাচক্র
দৈনিক আমার দেশ লিড করেছে, সেনাবাহিনীর বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ তিন কর্মকর্তার সমন্বয়ে শেখ হাসিনা বলপূর্বক গুম ও গুপ্তহত্যার নৃশংস একটি চক্র গড়ে তুলেছিলেন। এই চক্রে ছিলেন তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন এবং বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে গুম ও গুপ্তহত্যা হতো। তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং সরকার ও ভারতের স্বার্থের বিপক্ষে যারা সোচ্চার ও প্রতিবাদী হতেন তারাই গুমের শিকার হতেন। গুম ও গুপ্তহত্যার জন্য শেখ হাসিনা তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিককে নিয়ে পরিকল্পনা করতেন। কোন গুম কে করবে তা নির্ধারণ করতেন তারিক সিদ্দিক। এভাবেই বাস্তবায়ন হতো গুমের পরিকল্পনা।
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনও এ বিষয়ে অনেক প্রমাণ পেয়েছে। শেখ হাসিনাই যে গুম-খুনের নির্দেশদাতা, তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে। এ রিপোর্টে উদাহরণ হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমীর গুমের ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়, শেখ হাসিনা আযমীকে হত্যা করারও নির্দেশ দিয়েছিলেন।
হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে গত পনেরো বছরে এভাবেই গুম করা হয়েছে বহু মানুষকে। গুম সংক্রান্ত কমিশন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের ঘটনা তদন্ত করে সর্বশেষ যে রিপোর্ট প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে তাতেও বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, গুমের সঙ্গে রাষ্ট্রের পাঁচটি বাহিনীর কিছু কর্মকর্তাকে নিয়োজিত করা হয়। রাষ্ট্রীয় পাঁচ বাহিনীর মধ্যে ডিজিএফআইয়ের সাবেক একাধিক ডিজির নামও অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছে।
জোরপূর্বক গুম ও খুনসহ বিভিন্ন জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকায় ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট জিয়াউল আহসানকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। চক্রের প্রধান শেখ হাসিনা ও তারিক সিদ্দিক গত ৫ আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়েছেন। ‘বুচার অব বাংলাদেশ’ হিসেবে কুখ্যাতি পাওয়া জিয়া এখন কারাগারে এবং মোহাম্মদ আকবর হোসেন দেশেই লোকচক্ষুর আড়ালে রয়েছেন। কয়েকটি সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, আকবর হোসেনও পালিয়েছেন। গুম হওয়া একাধিক ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরাও দায়ী চক্রের নৃশংসতার তথ্য তুলে ধরেছেন।
খেলাধুলা-অনুষ্ঠান করতে নারীদের বাধা, জড়িতরা নিয়ন্ত্রণহীন
সমকালের লিড প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাধা ও হুমকির মুখে একের পর এক বন্ধ হচ্ছে নারীকেন্দ্রিক আয়োজন। এরই মধ্যে একাধিক অভিনেত্রী উপস্থিত হতে পারেননি তাদের পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠানে। এমনকি দিনাজপুর ও জয়পুরহাটে নারীদের ফুটবল খেলা বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে হাঙ্গামা বাধে স্থানীয় ‘তৌহিদি জনতা’ ও আয়োজকদের মধ্যে। খেলা বন্ধ করতে হামলা-ভাঙচুর করা হয় মাঠে। নারীর প্রতি এমন বিদ্বেষপূর্ণ কর্মকাণ্ডে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বয়ে যাচ্ছে প্রতিবাদের ঘূর্ণি।
এদিকে ঢাকায় কওমি উদ্যোক্তাদের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এক নারী সাংবাদিককে সংবাদ সংগ্রহে অনুষ্ঠানস্থলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ‘কওমি উদ্যোক্তা সম্মেলন ২০২৫’ নামে ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। এ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
এদিকে, দিনাজপুর ও জয়পুরহাটে হামলায় পণ্ড নারীদের ফুটবল ম্যাচ ফের আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। নারীদের খেলায় বাধা দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে গতকাল সরকারপ্রধানের কার্যালয় জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার যে কোনো গোষ্ঠীর নাগরিকের প্রতি বৈষম্য বা নিপীড়নের চেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বলছে, নারীরা বাংলাদেশের নাগরিক এবং পুরুষের মতোই সমানভাবে মানবিক ও নাগরিক অধিকার ভোগ করেন। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশি নাগরিকের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে ‘বিক্ষুব্ধ মুসল্লি’ ও ‘তৌহিদি জনতা’র নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজার ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ধরনের অন্তত ৮০টি মাজার-দরবারে হামলা, লুটপাট হয়েছে। এরপর বেশ কয়েকজন অভিনেত্রীকে তাদের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ‘মুসল্লি’র চাপে চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস একটি অনুষ্ঠানে যেতে পারেননি। বিভিন্ন স্থানে নারীকেন্দ্রিক অনুষ্ঠান বাধা, মাজারে হামলার ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হলেও থেমে নেই ঘটনা। ‘মব জাস্টিস’-এর মাধ্যমে যারা এসব করে যাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে শক্ত আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
শহীদ সেনা পরিবার ব্যথিত, আতঙ্কিত
কালের কণ্ঠের প্রধান খবরে বলা হয়েছে, ‘আমি যদি দেখি, যারা পিলখানায় আমার স্বামীসহ সেনা কর্মকর্তাদের পৈশাচিকভাবে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে, গুলি করে হত্যা করেছে, তাঁদের লাশ ড্রেনে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে, পুড়িয়ে ফেলেছে, গর্ত খুঁড়ে মাটিচাপা দিয়েছে, আমাদের বাসায় লুটপাট চালিয়েছে, আমাদের পরিবারের নারী ও শিশুদের কোয়ার্টার গার্ডে আটকে রেখে চরম নির্যাতন চালিয়েছে, সেই অপরাধীরা কারামুক্ত হয়ে আমাদের চোখের সামনে বুক ফুলিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে—তাহলে ভাবব এই দেশ আমার না, আমাদের সন্তানদের না, আমাদের সেনা পরিবারগুলোর না।’
এই কথাগুলো ২০০৯ সালে পিলখানায় বিপথগামী বিডিআর সদস্যদের হাতে নিহত শহীদ কর্নেল মো. মুজিবুল হকের স্ত্রী নেহরীন ফেরদৌসীর।
কর্নেল মো. মুজিবুল হক সে সময় বিডিআরের ঢাকা সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। নেহরীন ফেরদৌসী গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মুজিবুল হকের লাশ ড্রেনে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ড্রেনে ভেসে সেই লাশ কামরাঙ্গীর চরে চলে যায়। লাশটি ছিল ক্ষতবিক্ষত। মাথার খুলি ভাঙা। একাধিক ক্ষত ছিল শরীরে।
বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে এবং গুলি করে তিনতলা থেকে তাঁকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সংশ্লিষ্ট বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় সম্প্রতি অনেক বিডিআর জওয়ান জামিনে মুক্ত হয়েছেন। যদিও তাঁরা এখনো অভিযোগমুক্ত নন। কিন্তু তাঁদের কারামুক্তি নিয়ে যে ধরনের আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ হয়েছে তাতে আমরা ব্যথিত এবং আতঙ্কিত।
এটিআর/