Logo

নির্বাচিত

বাংলাদেশের পত্রিকা থেকে

রোজার পণ্যের বিপুল আমদানি

Icon

বাংলাদেশের খবর

প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৫

প্রিয় পাঠক, মহিমান্বিত ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে আপনাকে শুভেচ্ছা। মুসলিমদের এই পবিত্র সম্মিলন জগতের সামগ্রিক কল্যাণ বয়ে আনুক। হানাহানি-মারামারি বিদূরিত হোক। স্নেহ-মমতা, সৌহার্দ-প্রীতিতে ভরে উঠুক বসুন্ধরা; এই প্রত্যাশায় চলুন জেনে নিই আজকের দিনের বাংলাদেশকে। চোখ বুলাই দেশের শীর্ষ দৈনিকগুলোর প্রধান প্রধান শিরোনামে—

রোজার পণ্যের বিপুল আমদানি
প্রথম আলোর লিড নিউজে বলা হয়েছে, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে নিত্যপণ্যের আমদানি দ্রুত বাড়ছে। গতকাল শুক্রবার শেষ হওয়া জানুয়ারি মাসে বিপুল পরিমাণ নিত্যপণ্য আমদানি হয়েছে, যা অনেক ক্ষেত্রে পুরো রোজার মাসের চাহিদার সমান। কিছু ক্ষেত্রে আমদানি রোজার চাহিদাকে ছাড়িয়ে গেছে।

আমদানিকারকেরা বলছেন, ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে আরও নিত্যপণ্য আমদানি হবে। ফলে সরবরাহ বাড়বে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বড় কয়েকটি শিল্প গ্রুপের আমদানি কমে যাওয়ায় বাজারে সরবরাহে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা ছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, পুরোনো আমদানিকারকদের কেউ কেউ নতুন করে সক্রিয় হয়েছেন। নতুন নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিত্যপণ্য আমদানিতে যুক্ত হয়েছে। ফলে কোনো সমস্যা হয়নি।

বাজারে দাম কমবে কি না, তা নির্ভর করছে পণ্যের আমদানি মূল্যের ওপর। বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, মূল্য যাতে বেড়ে না যায়, সে জন্য নিত্যপণ্যের সরবরাহব্যবস্থায় নিয়মিত তদারকি দরকার।

রোজার পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি ও দাম নিয়ে জানতে চাইলে এ খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান টি কে গ্রুপের পরিচালক মোস্তফা হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, জানুয়ারিতে আমদানি বেড়েছে। পাইপলাইনে (আমদানি পর্যায়ে) থাকা পণ্য ফেব্রুয়ারি মাসে আসবে, অর্থাৎ বাজারে সরবরাহে ঘাটতি হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারও মোটামুটি স্থিতিশীল। তাতে দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ দেখছি না।’


আমদানি কতটা বেড়েছে
আমদানি বাড়ানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ছাড় দিয়েছিল। পাশাপাশি ঋণপত্র খুলতে এখন মার্কিন ডলারের সংকটও অনেকটা কেটেছে। সব মিলিয়ে আমদানিতে উৎসাহ বেড়েছে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে রোজায় বাজারে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে প্রায় তিন লাখ টন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যে দেখা যায়, গতকাল শেষ হওয়া জানুয়ারি মাসের প্রথম ২৯ দিনে সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি হয়েছে প্রায় চার লাখ টন। আবার সয়াবিন তেল তৈরির কাঁচামাল সয়াবিনবীজ আমদানি হয়েছে তিন লাখ টন। এই বীজ মাড়াই করে পাওয়া যাবে প্রায় অর্ধলাখ টন সয়াবিন তেল, অর্থাৎ রোজার চাহিদার চেয়ে বাজারে সরবরাহ বেশি থাকবে।

রোজায় চিনির চাহিদাও তিন লাখ টনের মতো। বিগত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে জানুয়ারি মাসে, ১ লাখ ৫৩ হাজার টন। বন্দরে এসে ভিড়েছে আরও প্রায় এক লাখ টন চিনিসহ জাহাজ। ফেব্রুয়ারি মাসেও চিনি আমদানি হবে। বিশ্ববাজারে পণ্যটির দাম কমছে।

কবে হবে নির্বাচন
বাংলাদেশ প্রতিদিন লিড করেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বইছে নির্বাচনি হাওয়া। কেউ বলছেন সরকারের ইচ্ছা থাকলে এ বছরই সম্ভব।

কেউ বলছেন পূর্ণ সংস্কার শেষে ভোট হোক। আবার কেউ বলছেন চলতি বছরেই হতে পারে। যত দ্রুত নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে, ততই মঙ্গলজনক। এ অবস্থায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে-কবে হবে ভোট? কথা বলে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন- রফিকুল ইসলাম রনি, শফিকুল ইসলাম সোহাগ ও শরিফুল ইসলাম সীমান্ত—

৫ আগস্টই ভোট করা সম্ভব

ইচ্ছা থাকলে এ বছরই সম্ভব

সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে

ফ্যাসিবাদী কাঠামো সংস্কারের পর


রাজউকের প্লট বরাদ্দে নৈরাজ্য
তালিকায় হাসিনার পিওন ড্রাইভার
যুগান্তরের প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী আদর্শের রাজনীতিক নন। সরকারের বিশেষ কোটায় রাজউকের প্লট বরাদ্দপ্রাপ্তদের তালিকায় আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গাড়িচালক (ড্রাইভার) এবং আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের অফিস সহকারীরাও (পিওন)। এছাড়া হাসিনা সরকার বিশেষ আস্থাভাজন বিবেচনায় বিচারপতি, আমলাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিকে ইচ্ছামতো প্লট বরাদ্দ দেয়। রাষ্ট্রীয় বিশেষ অবদানের কোটায় প্লট দেওয়া হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায় ‘রাজনৈতিক আনুগত্যের বিবেচনা’। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, আওয়ামী লীগ আমলে রাজউকের অ্যালটমেন্ট অব ল্যান্ডস রুলসের ১৩/এ উপবিধির (অসামান্য অবদান) অধীনে এসব প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এতে বলা হয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ-সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, সমাজকর্মী, সরকারি চাকরিজীবী এবং রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তিরা অসামান্য অবদান কোটায় প্লটের আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া রাষ্ট্র বা সরকার যদি কাউকে বিশেষ অবদান রেখেছেন বলে নির্বাচন করে, তাহলে তিনি প্লট পাবেন। 

তবে আওয়ামী লীগ সরকারের আগেও ১৯৬৯ সাল থেকে বৈষম্যমূলক হিসাবে বিবেচিত ১৩ ধারা বিদ্যমান ছিল। ১৯৮৬ সালে এক দফা সংশোধনের পর এটি ১৩/এ ধারা এবং সর্বশেষ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার ২৫ আগস্ট সংশোধিত গেজেটে ১৩এ (১) এ, বি, সি বিধি প্রণয়ন করে। এর আগে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় বহু প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা নিয়ে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে। বর্তমান সরকার এর সবই তদন্তের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু রহস্যজনকভাবে বিএনপি জমানায় প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত ফাইল রাতারাতি রাজউক থেকে গায়েব হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। ইতঃপূর্বে রাজউকের আবাসন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও বাড্ডা। 

মোদ্দা কথা, সব সরকারের আমলে রাষ্ট্রের জন্য অসামান্য অবদান রাখার বিশেষ কোটায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের অভিযোগ রয়েছে। এজন্য শুরু থেকেই রাজউকের প্রতিটি আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে কমবেশি অনিয়ম হয়েছে।

১৫ বছরে চালু মাত্র একটি, কচ্ছপগতি বাকি পাঁচটির
আমার দেশের প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকার যানজট নিরসনে পরিবেশবান্ধব মেট্রোরেল নেটওয়ার্কের উদ্যোগ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের কথা মুখে বললেও এর উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। তিনটি জাতীয় নির্বাচনকে টার্গেট করেই এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপে প্রচার-প্রপাগান্ডা চালায় সরকার ও আওয়ামী লীগ। 

বিশেষ করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রথম মেট্রোরেলের (এমআরটি লাইন-৬) দুই অংশের উদ্বোধন করা হয় তড়িঘড়ি করে। তফসিল ঘোষণার সপ্তাহখানেক আগে ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর করা হয় একাংশের উদ্বোধন। আর বছরখানেক আগে আংশিক উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। ভবিষ্যৎ নির্বাচনের হিসাব কষে অন্য ৫টি লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করে আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে প্রথম পাতালরেলসহ দুটি লাইনের ডিপোর ভূমি উন্নয়নে কিছু অগ্রগতি থাকলেও মূল কাজের দরপত্র এখনো প্রক্রিয়াধীন। আরেকটি লাইন পরিকল্পনা কমিশনে পড়ে আছে বছরের পর বছর। আর দুটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর্যায়ে রয়েছে দীর্ঘদিন। 

এমআরটির ৬টি লাইন তৈরি করে ২০৩০ সালনাগাদ একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কথা বলেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু একটি মেট্রোরেল নিয়ে উন্মাদনায় ব্যস্ত ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। ফলে টানা সাড়ে ১৫ বছরে বাকি ৫টি লাইনই ছিল উপেক্ষিত, প্রকল্পের কাজ এগোয় কচ্ছপগতিতে। মেগা প্রকল্প মেগা দুর্নীতি এবং এ ধরনের মেট্রো লাইন নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ব্যাপক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ও মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বলছে, মেট্রো নেটওয়ার্ক তৈরির লক্ষ্যে এমআরটি লাইনগুলো নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়ায় তা নতুন করে বিবেচনার সুযোগ নেই। তবে প্রকল্প ব্যয় ও অর্থের অপচয় কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। 

এ বিষয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সূত্রমতে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ২০০৫ সালে তিনটি মেট্রোরেল নির্মাণসহ ২০ বছরমেয়াদি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসেবে ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) বা মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক তৈরির উদ্যোগ নেয়। ২০১৩ সালে ডিএমটিসিএল গঠন করে ৬টি লাইনের সমন্বয়ে ১৪০ দশমিক ৭০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রো নেটওয়ার্ক ২০৩০ সালনাগাদ গড়ে তোলার কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়। এমআরটি লাইন-৬ উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পরিকল্পনা করা হলেও পরে কমলাপুর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

পেশাদার নেতৃত্ব, ঘুষ রোধ ও কার্যকর সংস্কারে জোর
সমকাল লিড করেছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঘুষ-দুর্নীতি প্রতিরোধে ‘গুন্ডা প্রতিরোধ বাহিনী বা অ্যান্টিগুন স্কোয়াড’ গঠনের সুপারিশ করেছে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ টাস্কফোর্স। তাদের দীর্ঘ মেয়াদের সুপারিশে সরকারি প্রতিষ্ঠান কার্যকর করতে দক্ষ ও যোগ্য টেকনোক্র্যাট নিয়োগের মাধ্যমে পেশাদার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার কথাও বলা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে টাস্কফোর্সের ৫৫০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন তুলে দেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের হাত ধরে যে সংস্কার শুরু হয়েছে, তা কার্যকর ও টেকসই করতে তরুণ সমাজকে কাজে লাগানোরও সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে।

অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত বাস্তবতায় বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নে গত ১০ সেপ্টেম্বর ১২ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে সরকার। এর প্রধান করা হয় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদকে।

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা  হয়, সুন্দর আগামী বিনির্মাণে সরকারি কর্মকর্তা ও নাগরিকের মধ্যে অংশীদারিত্বমূলক দায়িত্ব পালনের বন্দোবস্ত দরকার। শক্তিশালী নেতৃত্ব, সঠিক কৌশল ও পরিকল্পনা নেওয়া গেলে চ্যালেঞ্জগুলোকে সুযোগে রূপান্তর সম্ভব হবে।

বিগত সরকারের সমালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৫০ বছরে সুবিধাবাদী দুর্বৃত্ত শ্রেণির উত্থান হয়েছে, যা অর্থনীতির মূল ভিত্তি দুর্বল করেছে। ব্যাংক ও আর্থিক খাতে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। বিগত সব সরকারকেই রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনিয়মের দায় নিতে হবে। তবে গত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্দ নীতির কারণে সুশাসনের ব্যাপক অবনতি হয়।

জানতে চাইলে টাস্কফোর্সের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান সমকালকে বলেন, জুলাই বিপ্লবে তরুণরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধ সক্ষমতা দেখিয়েছে। এখন রাষ্ট্রের প্রয়োজনে আর্থসামাজিক যে কোনো সংস্কার উদ্যোগেও তারা সাহসী এবং কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সংস্কার উদ্যোগ যাতে অতীতের মতো পরিণতি না পায়, সে জন্য তরুণদের কাজে লাগানোর সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স। সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

টেনশন বাড়ছে
মানবজমিন লিড করেছে, ইতিহাসে এমন সময় আসে। মনে হয় খুব একটা কিছু ঘটছে না। তারপরও চোখ-কান খোলা রাখতে হয়। কখন কী ঘটে? ‘৫ই আগস্টের’ পর বাংলাদেশ তেমন একটা সময়ই অতিক্রম  করছে। এর আগের দিনগুলো ছিল অভাবনীয় ও অকল্পনীয়। রক্তাক্ত, বেদনার এবং গৌরবের।

ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কীভাবে দায়িত্ব নিয়েছে তা সবারই জানা। ছয় মাসে সরকারকে নানা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়েছে। সমালোচনাও কম হয়নি। তবে আওয়ামী লীগ ছাড়া সব শক্তিরই একধরনের নিরঙ্কুশ সমর্থন পেয়ে এসেছে সরকার। এ দৃশ্যপটে কি বড় কোনো পরিবর্তন হতে চলেছে?  

খুব সম্ভবত নতুন একটি পর্বে প্রবেশ করতে যাচ্ছে রাজনীতি। ফেব্রুয়ারিতে ছাত্রদের দলের আত্মপ্রকাশ ঘটতে চলছে। এ দলের প্রধান কে হবেন তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট এক ছাত্রনেতা জানিয়েছেন, মূলত চার ক্যাটাগরি থেকে সমন্বয় করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নাগরিক কমিটি, সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠিত হবে। উপদেষ্টা পরিষদে থাকা ছাত্রনেতারা নবগঠিত দলে যোগ দেয়ার আগে সরকার থেকে পদত্যাগ করবেন। সবার আগে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করতে পারেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অন্য দুই উপদেষ্টা আরও কিছুটা সময় নিয়ে পদত্যাগ করবেন। 

২০শে ফেব্রুয়ারি কিংবা তারপর এই নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে। ছাত্রদের নতুন দলের বিষয়টি এরইমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও নিশ্চিত করেছেন। বৃটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দল গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যে হয়তো তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এটাও একটা বিপদ। কারণ, রাজনীতি শুরু করলে সব ধরনের রাজনীতিবিদ তাদের সঙ্গে মিশে যাবে। তাই আমরা জানি না তারা আমাদের দেশে যে রাজনীতি, তা থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারবে কি-না। তবে ছাত্ররা প্রস্তুত। তারা প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা দেশ জুড়ে  লোকজনকে সংগঠিত করছে।’

ছাত্রদের নতুন দলের এই উদ্যোগ এরইমধ্যে বিএনপি’র সঙ্গে তাদের একধরনের দূরত্ব তৈরি করেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের তীব্র প্রতিক্রিয়া আমরা দেখেছি। এ বাহাস আগামীদিনে আরও বাড়তে পারে। এটিই রাজনীতির রীতি। কারণ লড়াইটা মূলত ক্ষমতার। বিএনপি’র পক্ষ থেকে এরইমধ্যে সম্ভাব্য নতুন দলের প্রতি রাষ্ট্রীয় কোনো ইন্ধন থাকে কি-না সে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তবে নাহিদ ইসলাম ওয়ান-ইলেভেনের উল্লেখ করে যে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঢাকার একজন পরিচিত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তা নাকচ করেননি।

রাজনীতি তপ্ত হচ্ছে এ মাসেই
কালের কণ্ঠের প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দল গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে এই ফেব্রুয়ারিতে রাজনীতির মাঠ বেশ উত্তপ্ত থাকতে পারে। রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, নতুন দল গঠন করা হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মেরুকরণ হবে। আর আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে বিপক্ষের শক্তিগুলো সক্রিয় হলে রাজপথে উত্তেজনা ছড়াতে পারে। ফলে রাজনৈতিক নানা ঘটনার কারণে ফেব্রুয়ারি মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও মধ্য ফেব্রুয়ারিতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। আজ ১ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ঘোষণা না দিলেও আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঠেকাতে মাঠে থাকবে জামায়াত। প্রধান তিন রাজনৈতিক শক্তির পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন হওয়ারও কথা রয়েছে এই মাসে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ বিএনপি-জামায়াতের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধীরাও রাজপথে তাদের মোকাবেলা করবে। তবে বিএনপি মাঠে নামলে সেটি রাজপথকে উত্তপ্ত করবে, তা বলা যায়। আর বৈষম্যবিরোধীদের রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে এরই মধ্যে একধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে।

বিএনপি অবশ্য আওয়ামী লীগের কর্মসূচিকে অতটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। নতুন দল গঠনের বিষয়েও তারা তেমন চিন্তিত নয়। তবে এই দল গঠনে সরকারের সংশ্লিষ্টতা আছে—এমন ধারণা থেকে আপত্তি জানাচ্ছে দলটি। জামায়াত আনুষ্ঠানিক কোনো কর্মসূচি না দিলেও তারা গতকাল শুক্রবারও জুলাই গণহত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এর বাইরে ফ্যাসিবাদবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে খুবই সক্রিয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

ডিআর/এটিআর

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর