Logo

নির্বাচিত

বাংলাদেশের পত্রিকা থেকে

রাশিয়ায় মৃত্যুমুখে আরও ১৮ যুদ্ধদাস

Icon

বাংলাদেশের খবর

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৩

প্রিয় পাঠক, পবিত্র ইজতেমার মহিমায় বিভাময় হোক আপনার দিন। স্বপ্নগুলো বাস্তবের পেখম মেলুক, উড়ুক মুক্ত দুনিয়ায়—এই প্রত্যাশায় চলুন একনজরে জেনে নিই আজকের দিনের বাংলাদেশকে। চোখ বুলাই দেশের শীর্ষ দৈনিকগুলোর প্রধান শিরোনামে

খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা
বাংলাদেশের খবরে লিড করা হয়েছে,দীর্ঘদিন ধরে খেলাপি ঋণে ধুঁকছে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত। বিশেষ করে খেলাপি হিসেবে শ্রেণিকৃত বিপুল ঋণের কারণে ব্যাংকগুলো এখন নাজুক পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন, ঋণ পুনঃতফসিলে বিশেষ সুবিধার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ছাড়ে পুনঃতফসিলের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা এ সুযোগ পাবে না 

এদিকে বিতরণকৃত ঋণের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদে পরিণত হওয়ায়, ব্যাংকগুলো তীব্র তারল্য সংকটের মধ্যে রয়েছে। এরপর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে যে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে, তা এখন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করেছে। ফলে ব্যাংক থেকে বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশই বর্তমানে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বিগত সরকারের সময় ঢালাওভাবে ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। বিভিন্ন নীতি ছাড়ের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হচ্ছিল। আবার প্রভাবশালীরা কিন্তুি না দিলেও খেলাপি দেখানো হচ্ছিল না। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আবারও ৫০ কোটি টাকা বা তার বেশি ঋণে বিশেষ পুনঃতফসিল সুবিধা দিতে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নেওয়া অনেক ঋণ এখন খেলাপি হতে শুরু করেছে। আগের মতো বিশেষ সুবিধা বন্ধ হয়েছে এসব কারণে খেলাপি ঋণ দ্রুত বাড়ছে। গত বছরের ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতের মোট ঋণের যা প্রায় ১৭ শতাংশ। 


খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণ হিসাবের জন্য নতুন একটি পদ্ধতি ব্যবহার করছে, যেটি বিশ্বব্যাপী সর্বোত্তম পদ্ধতি বলে গৃহীত হয়েছে। নতুন পদ্ধতিতে মেয়াদি ঋণের গ্রেস পিরিয়ড আগের ছয় মাস থেকে কমিয়ে তিন মাস করা হয়েছে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পিছনে এটি একটি কারণ। এ ছাড়া, কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের খেলাপি ঋণ নিয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিল। এসব ঋণের একটি অংশ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এটাও আরেকটি কারণ হতে পারে। এসব খেলাপি ঋণের চাপ কমাতে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

অন্যদিকে, খেলাপি ঋণ হু-হু করে বৃদ্ধির মধ্যে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন ঋণ পুনঃতফসিলে বিশেষ সুবিধার আবেদন জানিয়ে আসছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ছাড়ে পুনঃতফসিলের উদ্যোগ নিয়েছে। জানা গেছে, বিশেষ সুবিধার মাধ্যমে ডাউন পেমেন্টের শর্ত শিথিল, সুদ মওকুফ ও ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া হবে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা এই সুযোগ পাবে না বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পুরো প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছভাবে করতে বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের একটি যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি সাম্প্রতিক আন্দোলন, অগ্নিকাণ্ড, করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ প্রকৃত ক্ষতির মুখে পড়া ৫০ কোটি টাকা বা তার বেশি ঋণে বিশেষ পুনঃতফসিলের বিষয়গুলো কার্যপরিধির মধ্যে থাকবে। 

ধনীদের কাছ থেকে বেশি কর আদায়ের সুপারিশ
প্রথম আলো লিড করেছে, আয় ও সম্পদবৈষম্য কমাতে ধনীদের কাছ থেকে বাড়তি কর আদায়ের সুপারিশ করেছে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত টাস্কফোর্স। তারা দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রগতিশীল করব্যবস্থা চালুর পরামর্শ দিয়েছে, যে ব্যবস্থায় ধনীদের ওপর বেশি কর আরোপ করা হয়।

বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে গত ১১ সেপ্টেম্বর টাস্কফোর্স গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে টাস্কফোর্স বলেছে, ব্যক্তির নিজস্ব ও উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পদের ওপর সম্পদ কর আরোপে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। এর উদ্দেশ্য হবে কিছু লোকের হাতে বেশি সম্পদ চলে যাওয়া ঠেকানো, অর্থাৎ সম্পদ কেন্দ্রীভূত হতে দেওয়া যাবে না। ধনীদের কাছ থেকে বাড়তি কর আদায় ও ফাঁকি রোধ করতে সক্ষমতা বাড়ানো দরকার।

টাস্কফোর্স এমন একটা সময়ে ধনীদের ওপর কর বাড়ানোর কথা বলল, যখন দেশে আয়বৈষম্য বিপজ্জনক পর্যায় ছুঁই ছুঁই করছে। আয়বৈষম্য বৃদ্ধির পাশাপাশি মোট জাতীয় আয়ে ধনীদের হিস্যা বাড়ছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি থেকে সুফল ধনীরা বেশি পেয়েছেন উল্লেখ করে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিম্ন আয় ও দরিদ্র মানুষেরা জীবনমানের উন্নতি ঘটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

বৈষম্য কমাতে প্রগতিশীল করব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়। জানতে চাইলে টাস্কফোর্সের প্রধান ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ প্রথম আলোকে বলেন, অনেক দিন ধরেই প্রগতিশীল করব্যবস্থা চালুর কথা বলা হচ্ছে; কিন্তু সাফল্য আসেনি। মানুষের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে প্রগতিশীল করব্যবস্থা চালুর বিষয়টি জোরালো করা দরকার। তবে এ করব্যবস্থা স্বল্প মেয়াদে চালু করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, সাধারণত মানুষ করজালে আসতে চায় না। তাই সহজে কর আদায় করা যায়, এমন খাতে সরকার কর বসিয়ে দেয়। ভ্যাটের মতো কর ধনী-গরিব সবাইকে সমান হারে দিতে হয়। তাই বৈষম্যহীন করব্যবস্থা চালু করা কঠিন হয়ে যায়।

হেফাজতে মৃত্যুতে তোলপাড়
বাংলাদেশ প্রতিদিন লিড করেছে, কুমিল্লায় গভীর রাতে যৌথ বাহিনীর হাতে আটক এক যুবদল নেতার মৃত্যুর ঘটনায় সারা দেশ তোলপাড়। নিরাপত্তা হেফাজতে বেসামরিক নাগরিকের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি-পেশার মানুষ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। নিহতের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন, অমানবিক নির্যাতনের ফলে মো. তৌহিদুল ইসলাম (৪০) নামে ওই যুবদল নেতা মারা গেছেন। শুক্রবার দুপুরে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় স্থানীয় সেনা ক্যাম্পের কমান্ডারকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার এবং মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে একটি উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্তদের বিরুদ্ধে সেনা আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার এ মৃত্যুর ঘটনায় জরুরি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস যে কোনো ধরনের হেফাজতে নির্যাতন ও হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জরুরি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বিবৃতিতে যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর যুবদল নেতার মৃত্যুতে উদ্বেগ জানিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

নিরাপত্তা হেফাজতে নিহত তৌহিদুল ইসলাম কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি ইটাল্লা গ্রামের বাসিন্দা। চট্টগ্রাম বন্দরে একটি শিপিং এজেন্ট কোম্পানিতে চাকরি করতেন। রবিবার তাঁর বাবা মোখলেছুর রহমানের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়ি ফেরেন। শুক্রবার বাবার কুলখানির কথা ছিল। তিনি চার কন্যাসন্তানের জনক।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ সাইফুল মালিক বলেন, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পুলিশকে জানানো হয় তৌহিদুল ইসলামকে নিয়ে যেতে। পুলিশ তাঁকে হস্তান্তরের সময় তিনি অচেতন অবস্থায় ছিলেন। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তবে তাঁকে কেন আটক করা হয়েছিল বা কীভাবে মৃত্যু ঘটেছে, তা এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তৌহিদুলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা অভিযোগ নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ফের বিচারবহির্ভূত হত্যা
যুগান্তর লিড করেছে, যৌথবাহিনীর হেফাজতে কুমিল্লায় যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। ঘটনার পর থেকে নগরীতে ক্ষোভ-বিক্ষোভে উত্তাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও এলাকাবাসী, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংগঠন হেফাজতে থাকাবস্থায় যুবদল নেতার মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পরও ফের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিস্ময় প্রকাশসহ নানামুখী প্রশ্ন তুলছেন। বলা হচ্ছে, এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটত পতিত স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের সময়ে। কিন্তু এখন আবার কেন? প্রত্যেকে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। 

হেফাজতে মৃত্যুর শিকার তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার কান্নাজড়িত কণ্ঠে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কেন তাকে এভাবে হত্যা করা হলো? সে তো কোনো সন্ত্রাসী ছিল না। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে শনিবার দফায় দফায় কুমিল্লা শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। এদিন দুপুরে কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সামনে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী।

এদিকে যুবদল নেতার মৃত্যুর ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে আইএসপিআর। এতে ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার আশ্বাস দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সেনাক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডারকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অপরদিকে তদন্তসাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকেও পৃথক বিবৃতি দেওয়া হয়। 

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের বাসিন্দা এবং ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম চট্টগ্রামের একটি শিপিং কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। গত ২৬ জানুয়ারি তার বাবা মারা যায়। ৩১ জানুয়ারি শুক্রবার বাবার কুলখানিতে অংশ নেওয়ার জন্য বাড়িতে আসেন তৌহিদুল। এলাকার লোকজন তাকে অত্যন্ত বিনয়ী হিসাবে জানে। 

গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের তীব্র সংকটের আশঙ্কা
আমার দেশ লিড করেছে, আসন্ন সেচ ও গ্রীষ্ম মৌসুমে তীব্র বিদ্যুৎ সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশ। পাশাপাশি মার্চে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। ওই সময় ১৮ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে ১৪ হাজার মেগাওয়াটের মতো। চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি মেটানোর আপাতত কোনো ব্যবস্থা নেই। 

এদিকে শীত শেষ হওয়ার আগেই শহরের কিছু এলাকা ও গ্রামে লোডশেডিং শুর হয়েছে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে সারাদেশে শুরু হচ্ছে কৃষকদের সেচ কার্যক্রম। মার্চ থেকে গ্রীষ্ম শুরু হচ্ছে। এসব কারণে গোটা দেশ তীব্র বিদ্যুৎ সংকটে পড়তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংশ্লিষ্টরা। 

বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞ এবং ভোক্তা পর্যায়ের সর্বত্র আগাম লোডশেডিং নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। তাদের মতে, গতবারের মতো এবারও ভোগান্তিতে পড়বে সাধারণ মানুষ। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান সরকার বিদ্যুৎখাতের পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছে। 

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির তীব্র সংকটের জন্য পতিত হাসিনা সরকারের সীমাহীন লুটপাট, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি জানান, সংকট উত্তরণে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। 

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্পকারখানাসহ বিভিন্ন খাতে গ্যাসের চাহিদা বাড়লেও উত্তোলন ও সরবরাহ বাড়েনি। গত ১৮ বছরে দেশে নতুন কূপও খনন হয়নি। উপরন্তু বিদ্যুৎখাতে বিগত হাসিনা সরকারের রেখে যাওয়া ৪০ হাজার কোটি টাকার দায়দেনা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছ থেকে বকেয়া না পেয়ে নতুন করে জ্বালানি আমদানির এলসিও খুলতে পারছে না বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। কর্মকর্তারা জানান, আসন্ন রমজান মাসে বাড়তি বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে, এর জন্য এখনো প্রস্তুতি নেওয়া যায়নি। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগত হাসিনা সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কোনো সিস্টেম (পদ্ধতি) বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেনি। এ সরকারও অভিজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে আসন্ন সংকট মোকাবিলায় কোনো রোডম্যাপ তৈরি করতে পারেনি। এতে দেনার পরিমাণ দিনদিন আরো বাড়ছে। এখনো পিডিবিকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে চার টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। 

উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বিদ্যুতের বকেয়া বিল না পাওয়ার কারণে তারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রাথমিক জ্বালানি আমদানি করতে পারছেন না। দিনদিন সরকারের কাছে বকেয়া অর্থের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। গ্যাসের সংকট তীব্র হওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে উচ্চদামের ডিজেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো চালাতে হবে। এতে সরকারের ব্যয় ও লোকসান আরো বাড়বে। লোডশেডিং হলে তৃণমূল পর্যায়ে সেচেও ডিজেলচালিত সেচপাম্পের আশ্রয় নেবেন প্রান্তিক কৃষকরা। এতেও তাদের কৃষি উৎপাদন খরচ বাড়বে।

ধান আবাদের সুসময়ে চাষির দুঃসময়
সমকাল লিড করেছে, চাল উৎপাদনের সবচেয়ে বড় মৌসুমে বোরো আবাদে মাঠে নেমেছেন কৃষক। বোরো থেকে আসে দেশের ৬০ শতাংশ চালের জোগান। এ ধান চাষে নেমেই কৃষক মেলাতে পারছেন না উৎপাদন খরচের হিসাব। সার-সেচসহ কৃষির সব উপকরণে টানতে হচ্ছে বাড়তি খরচের বোঝা। এ কারণে মৌসুমের শুরুতেই দুশ্চিন্তা দানা বাঁধছে কৃষকের ঘরে ঘরে। উৎপাদিত ধান বেচে খরচ তুলতে না পারার ঘোরে আছেন তারা। রাজনৈতিক ডামাডোলে কৃষকের কষ্টের রোদন সরকারের কানে পৌঁছে না। দুঃসময়ে দেশের মানুষকে যারা ফসলের জোগান দিয়ে বাঁচিয়ে রাখেন, সেই কৃষকের কথা ভাবছে না কেউ। ফলে ক্রমবর্ধমান উৎপাদন খরচের চোটে ধান আবাদ টিকিয়ে রাখা দরিদ্র কৃষকের কাছে দুঃসাধ্য ঠেকছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বোরো মৌসুমে কৃষিতে বাড়তি মনোযোগ না দিলে কৃষি অর্থনীতিতে দেখা দিতে পারে দুই ধরনের সংকট। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে এক ধরনের চাপ তৈরি হতে পারে। আবার বাজারে চালের দাম বাড়লে দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষের খরচ বাড়বে। কারণ, ‘দিন আনে দিন খায়’ মানুষের আয়ের বড় অংশ খরচ হয় চালের পেছনে, যা মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দেবে।


বোরো ধান চাষে যে পরিমাণ সার প্রয়োজন হয়, এর প্রায় ৬০ শতাংশ প্রয়োগ হয় ডিসেম্বর থেকে মার্চে। সারের এই বাড়তি চাহিদাকে মওকা হিসেবে নেয় কিছু অসৎ ডিলার। কৃষকরা বলছেন, ডিলাররা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। অন্যদিকে ডিলারদের দাবি, সারের সরবরাহ আগের চেয়ে কম থাকায় তারা বিক্রি করছেন বেশি দামে।

এ ছাড়া বোরো আবাদ পুরোটাই সেচনির্ভর। বছরজুড়ে ধান উৎপাদনে যে সেচের প্রয়োজন হয়, এর ৯৩ শতাংশই লাগে বোরো মৌসুমে। সেচ প্রকল্পের অব্যবস্থাপনা ও খাল-বিল এখন পানিশূন্য থাকায় সময়মতো চারা রোপণ করতে পারছেন না কৃষক।  

তেল-চিনির বাজার অস্থির হওয়ার শঙ্কা
মানবজমিন লিড করেছে,রমজানের মাসখানেক আগে ভোজ্য তেল ও চিনির বাজার অস্থির হওয়ার আশঙ্কা করছেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। এরমধ্যে ছোলা ও চিনিসহ অন্যান্য পণ্যের পর্যাপ্ত আমদানির খবর এলেও বাজার নিয়ে আস্থা রাখতে পারছেন না অনেকে। তাই সংকটের আগেভাগে দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কঠোর পদক্ষেপ চান সংশ্লিষ্টরা। 

রাজধানীর পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা আসছে রমজানে বাড়তি চাহিদার প্রস্তুতি হিসেবে চিনির মজুত করেছেন। পাইকারিতে ১১৪ টাকা কেজিতে চিনি বিক্রি করলেও খুচরায় যা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ২৫ টাকা। সরবারহ সংকট না থাকলেও সব কোম্পানির চিনি পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন তারা। চিনির পাশাপাশি রমজানের মাস খানেক আগে ভোজ্য তেলেরও মজুতের প্রস্তুতি চলছে। তবে অনেক মুদি দোকানে মিলছে না রান্নার এ জরুরি উপকরণটি। এতে খুচরা পর্যায়ে দামের প্রভাব পড়ছে। 

খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে, রমজানের আগেই দাম বাড়াতে চান ব্যবসায়ীরা। রোজার আগে বা শুরুতে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর ঘটনা ভোক্তাদের কাছে নতুন নয়। ২০২৪ সালেও রোজা শুরু হওয়ার আগে এপ্রিল মাসে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দাবি ওঠে। তখন সরকার মূল্য সমন্বয় করে। ওই বছর ?জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অক্টোবরে আমদানি পর্যায়ে ভোজ্য তেলের মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ৫ শতাংশ কমানোর পাশাপাশি উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ের ভ্যাট পুরোপুরি প্রত্যাহার করে সরকার। সর্বশেষ ৯ই ডিসেম্বর ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানো হয়। তখনো দাম বাড়ানোর আগ দিয়ে বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলের সয়াবিন তেল। তখন খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার বোতলের সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ ৮ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ১৭৫ টাকা। দুই লিটারের বোতলে তা ৩৮০ টাকা এবং ৫ লিটার ৮৫২ টাকা। খোলা সয়াবিনের খুচরা বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৫৭ টাকা। তার আগে বোতলের সয়াবিনের দাম ১৬৭ টাকা এবং খোলা তেল ১৪৯ টাকা ছিল।

সূত্র বলছে, রমজানের আগে আরেক দফা সয়াবিন তেলের দাম বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিয়েছে ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। হিসাব করে ১১ টাকা বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি-তর্ক চলছে।

সর্বশেষ ২৩শে জানুয়ারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশীরউদ্দিনের বৈঠক হয়। তবে সে বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের মতামত চেয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

রাশিয়ায় মৃত্যুমুখে আরও ১৮ যুদ্ধদাস
কালের কণ্ঠ লিড করেছে, ইউরোপের উন্নত দেশে পা ফেললেই ঘুরে যাবে ভাগ্যের চাকা—দালালের এমন প্রলোভনে পড়েন নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুলহুলিয়া গ্রামের হুমায়ুন কবির। জমি বন্ধক রেখে ১৮ লাখ টাকা তুলে দেন দালালের হাতে। ভাগ্যবদলের যে স্বপ্ন বুকে নিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন, তা স্বপ্নই থেকে গেল। ইউরোপে পা ফেলার আগেই দালালচক্র তাঁকে বিক্রি করে দেয় রাশিয়ায়।

সে দেশে গিয়ে তাঁকে বরণ করতে হয় যুদ্ধদাসের জীবন। শেষ পর্যন্ত আর প্রাণে বাঁচতে পারেননি। কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এই নির্মম তথ্য। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কবিরের সঙ্গে গিয়েছিলেন তাঁর ভগ্নিপতি রহমত আলী।

তিনিও ইউরোপের স্বপ্নযাত্রী ছিলেন। দালালচক্রের কাছে ‘পণ্য’ হয়ে তিনিও বিক্রি হয়ে যান রাশিয়ার চক্রের কাছে। একইভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যেকোনো দিন তাঁকেও পাঠানো হবে যুদ্ধের মাঠে।

গত ২৮ জানুয়ারি কালের কণ্ঠে ‘রাশিয়ায় যুদ্ধে আট বাংলাদেশি’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ খবর দেখার পর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক অভিযোগ আসতে শুরু করে। চার দিন ধরে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করেছে কালের কণ্ঠের অনুসন্ধান বিভাগ। এ পর্যন্ত ছয় জেলার অন্তত ১৮ জন যুদ্ধদাসের বিস্তারিত তথ্য মিলেছে। ভুক্তভোগী কয়েকজনের সঙ্গেও কথা বলেছে কালের কণ্ঠ।

যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়েছে। ইউরোপের স্বপ্ন দেখা ব্যক্তিরা কিভাবে রাশিয়ায় বিক্রি হয়ে যুদ্ধদাসের জীবন বরণ করে নিয়েছেন, তা সবিস্তারে উঠে এসেছে সবার বক্তব্যে।

তাঁদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় মানবপাচারের একটি বড় ধরনের ফাঁদ পেতেছে ড্রিম হোম ট্রাভেলস নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান। গ্রাম পর্যায় থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্তরে তাদের একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রায় প্রতিটি পয়েন্টে এই চক্রের সদস্যরা কাজ করছেন।

পাচারের রুট সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রাথমিক সমঝোতার পর দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়। এর মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যায় আর্থিক লেনদেন। বেশির ভাগ ব্যক্তিকেই বলা হয় পাঠানো হবে ইতালি বা সাইপ্রাস। সৌদি আরবে ওমরাহ ভিসার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইউরোপযাত্রা।

তথ্য মতে, সৌদি আরবে ভুক্তভোগীদের এক মাস রাখা হয়। এর মধ্যে রাশিয়ার চক্রের সঙ্গে বেচাকেনার সমঝোতা হয়ে যায়। আকাশপথে রাশিয়ায় পাঠাতে তাঁদের জন্য এক মাস মেয়াদি ভ্রমণ ভিসা ইস্যু করা হয়। তখনো ভুক্তভোগীরা জানতে পারেন না কী নির্মমতা অপেক্ষা করছে তাঁদের সামনে। ওমরাহ শেষে তাঁদের বিমানে করে নেওয়া হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। দুবাই হয়ে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে পাঠানো হয়। এর পরই মূলত তাঁদের জীবনে ধেয়ে আসতে শুরু করে অনিশ্চিত অন্ধকার। বিমানবন্দর থেকে দেড় ঘণ্টার সড়কপথে ট্যাক্সিতে করে তাঁদের নেওয়া হয় ক্যাম্পে।

এটিআর/এনজে 


Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর