Logo

অন্যান্য

বাংলাদেশের পত্রিকা থেকে

মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কে

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩:০৬

মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কে

ছবি : সংগৃহীত

জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৬-৭ শতাংশে নামবে 

মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কে 

বাংলাদেশের খবর প্রধান প্রতিবেদন করেছে, গত কয়েক বছর ধরে মূল্যস্ফীতির কষাঘাতে জর্জরিত নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, বিগত ১৫ বছরের মূল্যস্ফীতির প্রকৃত তথ্য লুকানো হয়েছে। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে সরকারি পরিসংখ্যানের সঙ্গে বাস্তবতার অনেক বেশি ফারাক ছিল। এতে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হারেও প্রভাব পড়েছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নানা পদক্ষেপের কারণে মূল্যস্ফীতি অনেকটা কমে এসেছে। আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৬-৭ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। 


অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক মূল্যস্ফীতির পারদ খানিকটা নেমেছে। সরকারি হিসাবে নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে এক অঙ্কের ঘরে (সিঙ্গেল ডিজিট) ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে নেমে এসেছে। চার মাস পর এই সূচক সিঙ্গেল ডিজিটে নামল। 

গত বছরের জুন মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। জুলাইয়ে তা বেড়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে ওঠে। আগস্টে তা কিছুটা কমে হয় ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। পরের মাস সেপ্টেম্বরে তা আরও কমে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ হয়। এরপর থেকে তা ১০ শতাংশের উপরেই অবস্থান করছিল। 

প্রত্যাশিত বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয় 

আসছে নতুন রাজনৈতিক দল 

বাংলাদেশের খবরের দ্বিতীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  নতুন রাজনৈতিক দল আসছে বলে ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। 

এ সময় জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্দেশ্যে সারা দেশের নাগরিকদের মতামত গ্রহণের কর্মসূচিও দেন। তারা দুজনই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তৃণমূল ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে এই উদীয়মান রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে সমস্ত নাগরিকের আশা ও আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন। 



নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয় ব্যক্ত করে লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মুখে গণহত্যাকারী আওয়ামী ফ্যাসিবাদী লীগের পতন ঘটে এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের পতন ঘটলেও রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী উপাদানের বিলোপ ঘটেনি। গণঅভ্যুত্থানের এক দফা তথা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়ন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদান এবং সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের বাংলাদেশ গড়ার কাজ এখনো অসমাপ্ত রয়ে গেছে। এই জনপদের মানুষ ১৯৪৭-এর পাকিস্তান আন্দোলন, ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ এর অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি জুলুম-শোষণহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা বারবার ব্যক্ত করেছে।

বিক্ষোভের পর ভাঙা হলো ৩২ নম্বর 

প্রথম আলো প্রধান প্রতিবেদন করেছে, ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বুধবার রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছেন। একপর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

রাত ১১টার দিকে একটি ক্রেন ও একটি এক্সকেভেটর এনে বাড়ি ভাঙা শুরু হয়। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ বাড়িটির একটি পাশ ভাঙা শেষ হয়। রাত ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভাঙা চলছিল। সেখানে বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারী স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ, মুজিববাদ ও আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।


৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙা ছাড়াও বুধবার রাতে ধানমন্ডির ৫ এ-তে অবস্থিত শেখ হাসিনার বাড়ি সুধা সদনে আগুন দেওয়া হয়। রাত ১টা পর্যন্ত খবর অনুযায়ী সেখানে আগুন জ্বলছিল। সাড়ে ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সাড়ে ১১টার দিকে তাঁরা আগুনের খবর পেয়েছেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। অভ্যুত্থানের ছয় মাস ছিল গতকাল। এদিন রাত ৯টায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচার করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গতকাল দিনভরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তেজনা চলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেক ছাত্র-জনতা ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফেসবুকে ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে ‘বুলডোজার মিছিল’ এবং ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ কর্মসূচির ডাক দেন। তাঁরা ঘোষণা দেন, রাত ৯টায় শাহবাগে জড়ো হয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে যাত্রা শুরু করবেন।

অবশ্য এর আগেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা জড়ো হতে থাকেন। তাঁরা সেখানে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো ৩২ নম্বরের বাড়ি

বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রধান প্রতিবেদন করেছে, রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি, জাদুঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। গতকাল রাত ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভাঙচুর কার্যক্রমের একপর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ধানমন্ডিতে বাসভবন সুধা সদনও ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।


জুলাই গণ অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে অবস্থান নেওয়া ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বুধবার রাতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ভাষণ দেন। এর আগে জুলাই রেভল্যুশনারি এলায়েন্স এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ৩২’-এর ডাকে সন্ধ্যা ৭টা থেকেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের আশপাশে জমায়েত হতে থাকে ছাত্র-জনতা। ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য শরিফ ওসমান হাদি। আর সন্ধ্যা ৭টার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।’

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল আসতে থাকে। রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত হয় ৩২ নম্বর সড়কসহ এর আশপাশের এলাকা। ‘দিল্লি না ঢাকা’ ... ঢাকা, ঢাকা এই স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে চারপাশ। তবে আশপাশে আগে থেকেই সতর্ক অবস্থান নেওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছিল অসহায়ের মতো।

৩২ নম্বর বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল ছাত্র-জনতা

কালের কণ্ঠ প্রধান প্রতিবেদন করেছে, ৩২ নম্বর সড়কের প্রবেশ মুখেই লোহার ব্রিজের সামনে জায়ান্ট স্ক্রিনে প্রদর্শন করা হয় জুলাই আগস্ট ম্যাসাকারের প্রামাণ্য চিত্র। তাতে ছাত্র আন্দোলন, অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশনের তৈরি প্রামাণ্যচিত্রে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ও পুলিশের টানা হত্যাযজ্ঞের নির্মম ঘটনার ভিডিও প্রচার করা হয়।

রাত ৮টায় কয়েক শ বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ভাঙতে শুরু করে ৩২ নম্বর সড়কের ১৪ নম্বর তিন তলা ১৬ নম্বর নির্মাণাধীন পাঁচ তলা বাড়ি। রাত ৯টা ১৫ মিনিটে সেখানে আসে সেনাবাহিনীর একটি দল। তবে উত্তেজিত ছাত্র-জনতার তীব্র প্রতিবাদের মুখে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কিছু সময় পর ওই এলাকা ত্যাগ করছিলেন। 

এক সময় বাড়িটির সীমানা প্রাচীর পেরিয়ে ভবনের ভিতর প্রবেশ করে ছাত্র-জনতা। অনেকে হাতুড়ি বা লাঠি দিয়ে বাড়িটির সীমানা দেয়াল ভাঙছিলেন। কিছু সময় পর অনেককে জানালার গ্রিল, কাঠ এসব নিয়ে যেতে দেখা গেছে। উৎসুক জনতার অনেকে বাড়িটির সামনে আসছেন। পরিস্থিতি কিছুক্ষণ দেখে, ছবি তুলে ও ভিডিও করে কেউ কেউ চলে যাচ্ছেন।

রাত ১১টায় চারদিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা দুটো ভবনেই আগুন ধরিয়ে দেয়। রাত সোয়া ১০টার দিকে ছাত্র-জনতার আনা বুলডোজার সংবলিত ক্রেন আটকে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে রাত ১১টার দিকে ছাত্র-জনতার প্রতিবাদের মুখে তারা বুলডোজার ক্রেন প্রবেশ করতে দেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে দুটো ভবনই বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল।

রাজধানীর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর এক্সকাভেটর-ক্রেন দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। আগুন দেওয়া হয়েছে ধানমণ্ডি ৫/এ সড়কে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও। খুলনায় এক্সকাভেটর-ক্রেন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাইয়ের বাড়ি, যা ‘শেখবাড়ি’ নামে পরিচিত। বরিশালে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বাসভবন। সাদিক আবদুল্লাহ শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে। 

একইভাবে এক্সকাভেটর-ক্রেন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবউল আলম হানিফের পরিত্যক্ত বাড়ি এবং সিলেটে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। বরিশাল নগরে বুলডোজার দিয়ে ভাঙচুর করা হয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর বাসভবন। ভোলা সদরে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বাড়িতে আগুন দেয় ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

অন্যদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মীয়মাণ দুটি হলসহ মোট চারটি হলে শেখ মুজিব এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম থাকা ফলকগুলো ভেঙে নতুন নাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ এবং নগরের জামাল খান এলাকায় শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে। রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামফলক থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি তুলে ফেলা হয়েছে। শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে রংপুরেও।

৩২ নম্বরে ভাঙচুর আগুনের পর ভেকু-বুলডোজার

সমকাল প্রধান প্রতিবেদন করেছে, রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে আবারও হামলা, ভাঙচুর এবং আগুন দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের দিকে জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা।

স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। এ সময় শাবল, হাতুড়ি ও রড দিয়ে বাড়ির দেয়ালসহ বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করা হয়। কেউ খুলে নিয়ে যান জানালা, কেউ আবার স্মৃতি হিসেবে খুলে নিয়ে যান ইট। ভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য রাত পৌনে ১১টার দিকে সেখানে বড় একটি ক্রেন আনা হয়। কিন্তু ক্রেন দিয়ে পিলার ভাঙা সম্ভব না হওয়ায় আনা হয় ভেকু। ক্রেন সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। পরে বুলডোজার ও   ভেকু দিয়ে ভাঙতে থাকে ভবনের পিলার। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু ভবনের একটি অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষ রাত দেড়টার দিকেও এ ভাঙচুর চলতে থাকে। এ সময় উল্লাস করতে থাকেন উপস্থিত ছাত্র-জনতা।

এদিকে রাত পৌনে ১১টার দিকে ধানমন্ডি এলাকার ৫ নম্বর সড়কে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও ভাঙচুর চালানো হয়। পরে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষুব্ধরা। 

রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের মুখে জায়ান্ট স্ক্রিনে জুলাই অভ্যুত্থানের নৃশংসতার প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশনের তৈরি প্রামাণ্যচিত্রে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ও পুলিশের টানা হত্যাযজ্ঞের নির্মম ঘটনার ভিডিও প্রচার করা হয়।

পুলিশের দুটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও ভাঙচুরের সময় তারা বাড়িটির দিকে এগোয়নি। সেনাবাহিনীর একটি দল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাড়িটির ভেতরে ঢুকলে উপস্থিত ছাত্র-জনতার বাধার মুখে তারা সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। এ ঘটনার পর ওই এলাকার ট্রাফিক পুলিশও রাতে রাস্তায় ছিল না। 

এ সময় ছাত্র-জনতা ‘ভুয়া ভুয়া’, ‘খুনি হাসিনার বিচার চাই’, ‘দলে দলে যোগ দিন, মুজিববাদের কবর দিন’, ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’, ‘ধুলায় মেশাও তাড়াতাড়ি, বত্রিশের দালানবাড়ি’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। 

এদিকে  বুধবার শেখ হাসিনার বক্তৃতা ইস্যুতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ছাত্র-জনতা। এর জের ধরেই সিলেট, খুলনা, রাজশাহীসহ দেশের কয়েকটি স্থানে রাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বাসা ও স্থাপনায় হামলার খবর পাওয়া গেছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিল বিক্ষুব্ধ জনতা। এর পর থেকে বাড়িটি অনেকটা পরিত্যক্ত ছিল।

সর্বগ্রাসী দুর্নীতির পেছনে ছিল মাফিয়া চক্র

শেয়ারখেকো রাক্ষস শিবলী

যুগান্তর প্রধান প্রতিবেদন করেছে, দেশের আর্থিক খাতে বেপরোয়া দুর্নীতি ও জালিয়াতি করেছেন সদ্য গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। যিনি ছিলেন শেয়ারবাজারে অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক। কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ আত্মসাৎ, বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচার, জালিয়াতির মাধ্যমে বিএসইসিতে ১২৭ জনকে নিয়োগ, পর্ষদ ভেঙে দিয়ে কোম্পানি দখল, ভুয়া বাড়িভাড়া ও রপ্তানি দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আয়, ক্ষমতার অপব্যবহার নিশ্চিত করতে সাবেক আইজিপিকে ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতাদের ভুয়া ভর্তি করান এই অধ্যাপক। এরকম সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কারণে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের কাছে তিনি ‘রাক্ষস শিবলী’ হিসাবে বেশি পরিচিত। আর তার এই দুর্নীতি করার পেছনে সহায়তাকারী হিসাবে ছিল মাফিয়া চক্র। জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন যুগান্তরকে বলেন, শিবলী রুবাইয়াতের মেয়াদকাল শেয়ারবাজারে সবচেয়ে অন্ধকার সময় ছিল। এই বাজারে এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তিনি করেননি। দুর্নীতি, জালিয়াতি এবং প্রতারণার মাধ্যমে পুরো শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক শৃঙ্খলা ধ্বংস করে দিয়েছেন। বিনিয়োগকারীরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখতে চান। তার মতে, শিবলী রুবাইয়াতের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিতের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে সুশাসনের বার্তা দেওয়া উচিত।


সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ ক্ষমতাবানদের ম্যানেজ করে এসব কাজ করেছেন শিবলী রুবাইয়াত। এক্ষেত্রে তাকে সরাসরি সহায়তা করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল (বরখাস্ত) মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান, পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী চৌধুরী নাফিস সরাফাত এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. নাহিদ হোসেন অন্যতম। বিভিন্ন সংস্থার প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে যুগান্তরের দীর্ঘ অনুসন্ধানে এসব বিষয় উঠে এসেছে।

এসব বিষয় নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে তৎকালীন সরকারের চক্ষুশূলে পরিণত হয় যুগান্তর। এদিকে দুদকের মামলায় আজ শিবলী রুবাইয়াতের রিমান্ড শুনানির কথা রয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার রাতে তাকে ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। বুধবার আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। তবে আদালত রিমান্ড শুনানির তারিখ নির্ধারণ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। যুগান্তরের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে শেয়ারবাজারে অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল এবং ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কের নাম শিবলী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের এই অধ্যাপক। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বিরোধিতা সত্যেও গত বছরের ২৮ মে শিবলী রুবাইয়াতকে ৪ বছরের জন্য বিএসইসিতে পুনঃনিয়োগ দেন শেখ হাসিনা। এর আগে ২০২০ সালের ১৭ মে তাকে প্রথমবার বিএসইসির চেয়ারম্যান করা হয়। প্রথম মেয়াদেই বিভিন্ন অপরাধ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত বেপরোয়া ছিলেন। শেয়ারবাজারে কারসাজিসহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে গড়েন সম্পদের পাহাড়। কারসাজির চক্রকে সঙ্গে নিয়ে বাজারে বিশাল অসাধু সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এই সিন্ডিকেটে ছিলেন কমিশনের ভেতরের কর্মকর্তা, স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদের সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আলোচিত গ্যাম্বলার, ব্যবসায়ী, প্রভাবশালী আমলা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী।

যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা গেছে-ঋণখেলাপি থাকাবস্থায় ২০২০ সালে বিএসইসিতে নিয়োগ পান শিবলী। তবে বিএসইসিতে আসার পর অবৈধ টাকায় সেই ঋণ শোধ করেন। কোম্পানির আগের মামলা বাতিল করে তাদের দায়মুক্তি দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের ভুয়া ভর্তি এবং ব্যাপক সমালোচিত পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি দিয়ে সমালোচিত হন তিনি। এছাড়াও ছাগলকাণ্ডে চাকরি হারানো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মতিউর রহমানকে শেয়ারবাজারে সব ধরনের সহায়তা করেন শিবলী রুবাইয়াত। ৫ আগস্টের পর দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর তার বিরুদ্ধে তদন্তের উদ্যোগ নেয় দুদক। এক্ষেত্রে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ এবং সম্প্রতি তার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়।

গ্রেফতার : মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে শিবলী রুবাইয়াতকে গ্রেফতার করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এরপর তাকে দুদকের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বুধবার তাকে আদালতে তোলা হয়। এ সময়ে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান।

আজ রিমান্ড শুনানি : দুদকের মামলায় শিবলী রুবাইয়াতকে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালতে তোলা হয়। এ সময়ে তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। তবে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বৃহস্পতিবার রিমান্ডের বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ঠিক করেছেন আদালত।

মামলা : ৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ঘুস গ্রহণের অভিযোগে শিবলী রুবাইয়াতসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে বুধবার মামলা করেছে দুদক। দুদকের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান বাদী হয়ে ঢাকার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন। মামলায় অন্যান্য আসামিরা হলেন-মোনার্ক হোল্ডিং ইনকরপোরেশনের চেয়ারম্যান জাবেদ এ. মতিন, ঝিন বাংলা ফেব্রিক্সের মালিক আরিফুল ইসলাম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এফএভিপি ইসরাত জাহান, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখার অপারেশন ম্যানেজার ইকবাল হোসেন ও ব্যাংকটির অডিট অ্যান্ড ইনস্পেকশন ডিপার্টমেন্টের এসইভিপি সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ। এজাহার থেকে জানা গেছে, শিবলী রুবাইয়াত বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ঘুস গ্রহণ করেন। এরমধ্যে ভুয়া বাড়ি ভাড়া চুক্তি দেখিয়ে শিবলী রুবাইয়াত ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা এবং ভুয়া পণ্য বিক্রয় চুক্তি দেখিয়ে ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।

এমআই

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর