বাংলাদেশের পত্রিকা থেকে
হাসিনার দম্ভে চূর্ণ ৩২ নম্বর

বাংলাদেশের খবর
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৩
-67a577f8df3a8.png)
ছবি : সংগৃহীত
প্রিয় পাঠক, বিশ্ব জুমাবের মহিমায় পবিত্র হোক আপনার দিন। সব ক্লান্তি মুছে প্রভাতরাঙা সূর্যের মতো হেসে উঠুক জীবন। নয়া সকালে নতুন পরিচয়ে হাতের মুঠোয় আসুক সাফল্যসোপান— এই প্রত্যাশায় চলুন জেনে নিই আজকের দিনের বাংলাদেশকে। চোখ বুলাই দেশের প্রথম সারির দৈনিকগুলোর প্রধান প্রতিবেদনে—
হাসিনা ফাঁদে ক্ষয়ে যাচ্ছে আ.লীগ
বাংলাদেশের খবরে লিড করা হয়েছে,পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারকে কেন্দ্র করে বুধবার থেকে উত্তাল সারা দেশ। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ডাক দেয় ‘লংমার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’।
তারা হাসিনাবিরোধী স্লোগান দিয়ে ওইদিন রাত সাড়ে ৮টা থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। ছাত্র-জনতার এ আহ্বান মুহূর্তের মধ্যে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন চুপ্পুর পদত্যাগের দাবিতে স্লোগানে উত্তাল থাকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়ক। উপস্থিত ছাত্র-জনতা জানায়; গণহত্যার পরও অনুশোচনা নেই শেখ হাসিনার, তার বক্তব্যের কথা শুনে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে আবার রাস্তায় নেমে এসেছে।
এদিকে, রাত ৯টায় ফেসবুক লাইভে শেখ হাসিনা বক্তব্য দেওয়া শুরু করলেই, বিক্ষুব্ধ জনতা ৩২-এর বাড়িটি ভাংচুর করে। বিক্ষুব্ধরা হাসিনার বাসভবন 'সুধা সদন'-এও আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তারা বুধবার সারা রাত ও গতকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি। একইভাবে সারা দেশে রাতভর চলে ফ্যাসিস্টদের চিহ্ন উৎখাতের বন্দোবস্ত।
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের ছয় মাস পূর্ণ হলো বুধবার। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ঘোষণা দেয়, রাতে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা, যিনি ৫ আগস্টের পর থেকে ভারতে পালিয়ে আছেন। বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে, যাদের নেতৃত্বে গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছিল।
গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো ৩২ নম্বরের বাড়ি
প্রথম আলো লিড করেছে, ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটির অর্ধেকের বেশি অংশ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। গত বুধবার রাত ৮টা থেকে গতকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র), ক্রেন ও বুলডোজার দিয়ে বাড়িটির অর্ধেকের বেশি অংশ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর ভাঙার কাজ বন্ধ থাকলেও দিনভর ওই বাড়ি ঘিরে ছিল বিক্ষুব্ধ ও উৎসুক জনতার ভিড়।
ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা গত বুধবার রাতে ধানমন্ডির ওই বাড়ি ঘিরে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে বাড়িটিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বুধবার রাতেই ক্রেন, এক্সকাভেটর এনে বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হয়। রাতে যুক্ত হয় একটি বুলডোজার।
বুধবার সন্ধ্যা থেকে বিক্ষোভ-ভাঙচুরের পর রাত পৌনে ১১টার দিকে একটি ক্রেন আনা হয়। এরপর সেখানে আনা হয় একটি এক্সকাভেটর। মাঝরাত থেকে শুরু হয় বাড়ি ভাঙার কাজ। পরে রাত পৌনে দুইটার দিকে বাড়ি ভাঙার কাজে একটি বুলডোজারও যুক্ত হয়। রাত সাড়ে তিনটার দিকে আরেকটি এক্সকাভেটর আনা হলে আগের এক্সকাভেটর ও বুলডোজার সরিয়ে নেওয়া হয়। সর্বশেষ গতকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত নীল রঙের ওই এক্সকাভেটর দিয়েই ভাঙার কাজ করা হয়।
গতকাল সকাল আটটার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এক্সকাভেটর দিয়ে ভাঙা হচ্ছে বাড়ির পূর্ব অংশ। সকালে সেখানে হাজারখানেক বিক্ষুব্ধ ও উৎসুক জনতার ভিড় ছিল। তাঁদের কেউ কেউ জটলা পাকিয়ে শেখ হাসিনা ও স্বৈরাচারবিরোধী নানা স্লোগান দেন। কাউকে কাউকে নিজেদের মুঠোফোনে ভাঙা বাড়ির ছবি কিংবা ভিডিও ধারণ করতে দেখা গেছে।
গতকাল ৩২ নম্বরের বাড়িটি ভাঙার কাজ যখন চলছিল, তখন ওই বাড়ির পেছনে (উত্তর পাশে) থাকা ছয়তলা একটি ভবনেও ভাঙচুর চালান বিক্ষুব্ধ মানুষ। ওই সময় ভবন থেকে যে যাঁর মতো বইপত্রের পাশাপাশি স্টিল, রড, লোহা ও কাঠের জিনিসপত্র নিয়ে যেতে থাকেন। কেউ কেউ শেখ মুজিব ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রকাশিত বইপত্র আগুনে পুড়িয়ে দেন। সকাল ১০টার দিকে স্টিল ও লোহার কাঠামো ভবন থেকে ভেঙে ভেঙে কয়েকজনকে নিচে ফেলতে দেখা যায়। নিচে থাকা কয়েকজন এগুলো রিকশায় করে অন্যত্র সরিয়ে নেন। তাঁদের অনেকেই নিম্ন আয়ের মানুষ।
দিনভর শুধুই ভাঙার শব্দ
বাংলাদেশ প্রতিদিন লিড করেছে, রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। গতকাল সকালেও ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ওই বাড়ি ঘিরে শত শত উৎসুক মানুষের ভিড় দেখা গেছে। নারী, শিশুসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ওই বাড়ির পুরো এলাকা ঘুরে দেখে। পেছনের দিকে অর্থাৎ উত্তর দিকে ছয় তলা ভবনটিও ভাঙতে দেখা গেছে। ভিতরে পুড়ে যাওয়া তিনটি গাড়ির লোহাও কেউ কেউ নিয়ে যাচ্ছেন। তিন তলা প্রধান ভবনটির অর্ধেক গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুব দিকের ছোট তিন তলা ভবনটিও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে দিনভর প্রতিটি ভবনের ভিতর থেকে হাতুড়ির আঘাতে নানা কিছু ভাঙার শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
ভবনগুলোর প্রতিটি কক্ষে আগুন ও ভাঙচুরের চিহ্ন দেখা যায়। কোথাও কোথাও টাইলসও খুলে ফেলা হয়েছে। পোড়া গন্ধ চারদিকে। বিকালে সেখানে উৎসবের অংশ হিসেবে একটি গরু জবাই দেওয়া হয়।
এর আগে ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির ছয় মাস পূর্তির দিন বুধবার রাতে বুলডোজার মিছিল কর্মসূচি থেকে এ ভাঙচুর শুরু হয়। রাতেই একটি ক্রেন ও দুটি এক্সকেভেটর দিয়ে ওই বাড়ি ভাঙা শুরু হলেও গতকাল সকালে দেখা যায় একটি এক্সকেভেটর। যান্ত্রিক ত্রুটির কথা বলে সকাল সাড়ে ১০টায় সেটিও সরিয়ে নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। বাড়ি ভাঙার মধ্যেই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উৎসুক জনতার ভিড়ে আওয়ামী লীগের সদস্য সন্দেহে এক নারীসহ দুজনকে পিটুনি দেয় ছাত্র-জনতা। প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা বলছেন, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় এক নারীকে এবং কথা বলার সময় ‘আপার বাড়ি’ বলায় এক পুরুষের ওপর হামলা চালিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের মারতে মারতে ধানমন্ডি ৩২ থেকে প্রধান সড়কে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে এক ফটোসাংবাদিকসহ কিছু লোক তাদের রিকশায় উঠিয়ে দেন।
এ সময় ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য দেখা যায়নি। তাৎক্ষণিকভাবে ওই নারীর বাসা ফার্মগেটে জানা গেলেও তাঁর নাম-পরিচয় জানা যায়নি। বাড়ি ভাঙার দৃশ্য দেখতে আসেন শেখ মুজিবুর রহমানকে খুনের অভিযোগে মৃত্যুদে দি ত মেজর (অব.) বজলুল হুদার ছোট ভাই নুরুল হুদা ডিউক। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিপ্লবী জনতা প্রমাণ করে দিয়েছে এ দেশে স্বৈরাচারের কোনো স্তম্ভ থাকবে না। এ স্বৈরাচারের চিহ্ন থাকলে তারা আবার ফিরে আসবে। তারা হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে। তাদের কোনো স্মৃতি এ দেশে রাখা যাবে না। আমার ভাই জাতীয় বীর ও মুক্তিযোদ্ধা মেজর বজলুল হুদা বাকশাল হটিয়েছিল। আমার ভাইকে খুনি হাসিনা জেলখানায় হত্যা করেছিল। তারা আমার পরিবারের অনেককে হত্যা করেছে। সেই হত্যার বিচার চাই।’
হাসিনার দম্ভে চূর্ণ ৩২ নম্বর
যুগান্তর লিড করেছে, ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দম্ভের কারণেই মূলত চূর্ণ হয়েছে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ভবন। তিনি ভারতে অবস্থান করে উসকানিমূলক বক্তব্য না দিলে এরকম ঘটনা ঘটত না। পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে পতিত এ স্বৈরাচার অব্যাহতভাবে প্রতিশোধপরায়ণ বক্তব্য দিয়ে আসছেন। সবশেষ তিনি বুধবার রাতেও অডিও লাইভে এসে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন। এর ফলে বিক্ষুব্ধ জনতার ক্রোধ হামলে পড়ে ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বাসভবনে। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার অনেকের পক্ষ থেকে ঘোষিত হয় ‘বুলডোজার মিছিল’ এবং ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’।
রাত ৮টা থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার মিছিল যখন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ঢেউ তোলে, তখন খুলনার আলোচিত ‘শেখবাড়ি’ এবং কুষ্টিয়া, নোয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, রাজশাহী, কুমিল্লা, পিরোজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের প্রথমসারির বেশ কয়েকজন বিতর্কিত নেতার বাড়িতেও বুলডোজার মিছিল পৌঁছে যায়। এরপর একদিকে রাতভর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে হাজার হাজার জনতার হাতুড়ি-শাবলে চলছিল ক্ষোভের আঘাত, অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিস্টদের শেষ চিহ্ন মুছে দিতে চলে ভাঙচুর। এভাবে বিপ্লবের রাত যখন ভোর হয়, ততক্ষণে প্রায় কঙ্কালসার হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ৩২ নম্বরের বাড়িটি। আর এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত ৮টায় ধানমন্ডিতে অবস্থিত আওয়ামী লীগের এ ঐতিহাসিক সূতিকাগার মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার শেষ প্রস্তুতি চলছিল। সবার চোখে-মুখে একটাই শপথ-ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শেষ চিহ্ন মুছে না যাওয়া পর্যন্ত বুলডোজার কর্মসূচি চলবে।
যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধিরা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের বাসাবাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ হাসিনাসহ শেখ পরিবারের সদস্যদের নামফলকও ভেঙে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ওবায়দুল কাদের, ভোলায় তোফায়েল আহমেদ, বরিশালে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, রাজশাহীতে সাবেক মেয়র লিটন, রাজশাহীর বাঘায় শাহরিয়ার আলম, খুলনায় শেখ হেলাল উদ্দিন, কুমিল্লায় বাহাউদ্দীন বাহার, ফেনীতে শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার ও ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, পিরোজপুরে একেএমএ আউয়াল, নাটোরে শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ আওয়ামী লীগের অন্তত ২৭ নেতার বাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লা, যশোর, রাজশাহী, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পাবনা, মাদারীপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, ঝিনাইদহ, বাগেরহাট, টাঙ্গাইল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী কলেজে বঙ্গবন্ধুর ৩৭টি ম্যুরাল, আওয়ামী লীগের ১০টি কার্যালয় এবং বেশ কয়েকটি নামফলক ভেঙে ফেলা হয়েছে।
ক্ষোভে পুড়ছে আওয়ামী স্থাপনা
আমার দেশ লিড করেছে, রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে ফ্যাসিবাদের আঁতুড়ঘরখ্যাত শেখ মুজিবের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখতে গতকাল বৃহস্পতিবার সেখানে ঢল নামে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের। শুধু রাজধানী নয়, আশপাশের নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ এসেছেন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকতে।
চার বছরের শিশু আফিয়া থেকে শুরু করে ৭০ বছরের বৃদ্ধ, সে গণশের ২.এ থেকে শুর করে স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীব গৃহিণী, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাদ যাননি কেউই।
এদিকে বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কিশোরগঞ্জ শহরের খরমপট্টি এলাকার বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর শেষে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এহাড়া নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ তাহমেদের গ্রামের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। রাত আনুমানিক ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল দিনভর ধানমন্ডি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এখানে যারা এসেছেন তাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। সবাই চান ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকতে। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে জানালেন তাদের অনুভতির কথা। আবার কেউ কেউ নাম প্রকাশ করেননি কিংবা ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন।
কেউ বলেছেন, ‘শয়তানের শেষ পরিণতি দেখার জন্যে এখানে এসেছি।’ কেউবা বলেছেন, ‘ফেরাউনের মৃত্যুস্থান দেখতে এসেছি।’ অভিভাবকদের অনেকে বলেছেন, ছোট সন্তানকে নিয়ে এসেছেন ইতিহাসের স্বাক্ষী বানাতে। নিজ চোখে ফ্যাসিবাদের ধ্বংসাবশেষ দেখুক পরবর্তী প্রজন্ম।
হামলা-আগুন ৩৫ জেলায়
সমকাল লিড করেছে, রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবারও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ও কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও আওয়ামী লীগবিরোধী স্লোগান দিয়ে হাতুড়ি-শাবলে চালানো হয় ভাঙচুর। দেওয়া হয় আগুন। অনেক স্থানে ভেঙে দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও নামফলক। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহসহ অন্তত ৩৫ জেলায় বিভিন্ন স্থাপনা আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
গত বুধবার রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিল ছাত্র-জনতা। বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ওই ভবন। ওই বাড়ির বিভিন্ন আসবাব, লোহা, ভাঙা গ্রিল, কাঠ– যে যেভাবে পেরেছে, লুট করে নিয়ে গেছে।
গতকাল সকালে গিয়ে সেখানে ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন দেখা যায়। বুধবার রাতে আগুন দেওয়া হয় ধানমন্ডি-৫-এর শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও। গতকাল সকালেও সেখানে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিস বলছে, আগুন লাগার খবর পেয়েও নিরাপত্তাহীনতার কারণে নির্বাপণ করতে যেতে পারেননি তারা। এদিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে হামলা-ভাঙচুরের পর একই ধরনের ঘটনা বাধাহীনভাবে বুধবার রাত থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘটতে থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল নিষ্ক্রিয়।
নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ভোলায় দলটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, ঝালকাঠি ও বরিশালে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, নওগাঁয় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, রাজশাহীতে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বরিশালে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় হামলা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় জামালপুর সদরের নরুন্দি রেলওয়ে স্টেশনসংলগ্ন এলাকায় অভিনেত্রী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওনের গ্রামের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
সারা দেশে সিরিজ ভাঙচুর, আগুন
মানবজমিন লিড করেছে, ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের জেরে গতকালও সিরিজ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে ভাঙচুর বৃহস্পতিবারও চলে। এস্কেভেটর দিয়ে ভবনের সামনের অংশ ভেঙে দেয়ার পর স্থানীয় লোকজন নিজেরাই হাতুড়ি-শাবল দিয়ে ভবন ভেঙে লোহার জিনিসপত্র নিয়ে যান।
রাতে ৩২ নম্বর বাড়ির সামনে গরু জবাই করে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয়। ওই ভবনের সামনে আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলায় নারীসহ দু’জনকে মারধর করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর গুঁড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি, দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য নেতাদের ম্যুরালও ভেঙে ফেলা হয়।
ধানমণ্ডি-৫ নম্বরের লেক পাড়ে অবস্থিত শেখ হাসিনার এক সময়ের বাসভবন সুধাসদনে বুধবার রাতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। গতকালও ওই ভবনে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। লুটপাট করা হয় বিভিন্ন জিনিসপত্র। খুলনায় শেখ হাসিনার চাচাতো ভাইদের ‘শেখ বাড়ি, বরিশালে আমীর হোসেন আমুর বাসভবন, সাদিক আব্দুল্লাহ’র বাড়ি, নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বাড়ি, কুষ্টিয়ায় মাহবুব-উল আলম হানিফের বাড়ি, নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানদের পুরনো বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়। শেখ হাসিনা পরিবারের নামে করা স্থাপনার নাম মুছে দেয়া হয়।
ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে যা দেখা গেল: বুধবার রাতে শেখ হাসিনা দলের ফেসবুক পেজে বক্তব্য দেবেন এই ঘোষণার পর বুধবার সন্ধ্যার পর থেকেই ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির সামনে জড়ো হতে থাকে ছাত্র-জনতা। শুরু হয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। রাত ৯টায় শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার করা হয়। এরপরই মানুষের বিক্ষোভ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে সেখানে ক্রেন এবং এস্কেভেটর আনা হয়। রাতেই এস্কেভেটর দিয়ে ভবন ভাঙা শুরু হয়, চলে গতকাল দুপুর পর্যন্ত।
দেশজুড়ে ভাঙচুর আগুন
কালের কণ্ঠ লিড করেছে, ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বুধবার রাতে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে ব্যাপক বিক্ষোভের এক পর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। রাত ১১টার দিকে একটি ক্রেন এবং পরে একটি এক্সকাভেটর এনে বাড়ি ভাঙা শুরু হয়। ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙা ছাড়াও একই রাতে ধানমণ্ডির ৫/এ-তে অবস্থিত শেখ হাসিনার বাড়ি সুধা সদনে আগুন দেওয়া হয়। রাতে সেখানে আগুন জ্বলছিল।
সরকারের পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে একজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি শেখ হাসিনা বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানো সম্ভব। গতকালও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতার বাড়িতে ভাঙচুর করে এবং আগুন লাগায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এদিকে দেশজুড়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ বন্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
কিশোরগঞ্জে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাসায় ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ কিশোরগঞ্জে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাসায় ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শহরের খরমপট্টি এলাকায় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গত বুধবার রাত থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের স্টেশন রোড, পাকুন্দিয়া উপজেলা সদর ও বাজিতপুর সদরে বিভিন্ন বাসা ও প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করা হয়। আর গতকাল দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর করে ছাত্র-জনতা। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে শেখ মুজিবুর রহমানের মু্যরাল ভেঙে ফেলা হয়। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বিন্নাটি চৌরাস্তা মোড়ে সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ চার নেতার ম্যুরালটি ভাঙচুর করা হয়।
এটিআর/