বাংলাদেশের পত্রিকা থেকে
ভারতের স্বার্থে সীমান্ত হাট

বাংলাদেশের খবর
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫১

ছবি : বাংলাদেশের খবর
প্রিয় পাঠক, রাঙা সকালে চায়ের ধোঁয়ার সঙ্গে উড়ে যাক আপনার সকল গ্লানি। প্রতিটি চুমুকে সুখ নামুক। আজকের বিপরীতে আগামীদিন আরও প্রশান্তিময় হোক— এই প্রত্যাশায় চলুন জেনে নিই আজকের দিনের বাংলাদেশকে। চোখ বুলাই দেশের শীর্ষ দৈনিকগুলোর প্রধান প্রতিবেদনে—
ভাঙচুর সমর্থনযোগ্য নয়, ক্ষুণ্ণ হতে পারে সরকারের ভাবমূর্তি
বাংলাদেশের খবরে লিড করা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনসহ দেশজুড়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা সমর্থনযোগ্য নয়। চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা।
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সরকারকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বিতাড়িত পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের উসকানিমূলক আচরণ, জুলাই আগস্টের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে অশালীন এবং আপত্তিকর বক্তব্য-মন্তব্য দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভএবং ক্রোধের জন্ম দিয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে বুধবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত স্বৈরাচারের স্মৃতি, মূর্তি, স্থাপনা ও নামফলকসমূহ ভেঙে ফেলার মতো জনস্পৃহা দৃশ্যমান হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলেন, বিএনপির উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা প্রকাশ করতে না পারলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। এ পরিস্থিতিতে উগ্র নৈরাজ্যবাদী গণতন্ত্রবিরোধী দেশি-বিদেশি অপশক্তির পাশাপাশি পরাজিত ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে যার উপসর্গ এরই মধ্যে দৃশ্যমান।
সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করুন। অন্যথায় দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রসার ঘটবে। সুতরাং কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা দৃশ্যমান করা এখন সময়ের দাবি।
বিভিন্ন জেলায় হামলা, ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনায় উদ্বেগ
প্রথম আলো লিড করেছে, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তিন দিন ধরে বিভিন্ন স্থাপনা ও বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও ভীতির সঞ্চার হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে দুই দিনে তিনটি বিবৃতি দিতে হয়েছে।
দেশে এমন একটা পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসের মাথায়, যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও জনগণকে শান্ত হওয়ার জন্য এবং সরকারকে কাজ করতে দিতে আহ্বান জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তবে ঘটনা পুরোপুরি থামানো যায়নি।
এমন পরিস্থিতির জন্য গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যমূলক ও উসকানিমূলক বক্তব্যকে দায়ী করা হয়। নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার ভাষণ প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতার মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। যার জেরে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ছয় মাস পূর্তির দিন ৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ শুরু করেন। এর আগে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ থেকে ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ ও ‘বুলডোজার মিছিল’-এর ডাক দেওয়া হয়। রাত আটটা থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ওই রাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ধানমন্ডি ৫ নম্বরে সুধা সদনে। সেটি শেখ হাসিনার স্বামী প্রয়াত এম এ ওয়াজেদ মিয়ার বাড়ি।
এর পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের কার্যালয়, দলটির কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের বাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ পরিবারের সদস্যদের অর্ধশত ম্যুরাল ভাঙা হয়। এসব ঘটনা ঘটেছে ৩৫টির বেশি জেলায়। গতকাল নড়াইলের কালিয়ায় সাবেক সংসদ সদস্য কবিরুল হকের বাগানবাড়িতে ও জামালপুরের মেলান্দহে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
তিন দিন ধরে সংঘটিত এসব ঘটনা বন্ধে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বা নিতে পারেনি। এ নিয়ে নানা স্তরের মানুষের মধ্যে নানা রকম প্রশ্নও তৈরি হয়েছে।
যদিও এ ধরনের ঘটনা থেকে মানুষকে নিবৃত্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গণমাধ্যমে প্রথম বিবৃতি পাঠান বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে। এতে বলা হয়, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় বিবৃতি আসে।
সময়ের সঙ্গে বেড়েছে চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশ প্রতিদিন লিড করেছে, শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স যত বাড়ছে, ততই নানামুখী চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। আজ ৮ ফেব্রুয়ারি সরকার গঠনের ছয় মাস পূর্ণ হচ্ছে। সেই সঙ্গে এ সরকারকে ব্যর্থ করতে ভিতরে-বাইরে চলছে ষড়যন্ত্র। আশার কথা, এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অর্ধবছরে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনায় ১১টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি কমিশন চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। আরও চারটি কমিশনের রিপোর্ট দেওয়ার কথা রয়েছে আজ। সব কমিশনের রিপোর্টের পর শুরু হবে নির্বাচন অভিমুখে যাত্রা।
সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে বিশ্বনেতাদের সহায়তা চাইছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও পরিচয়ের সূত্র ধরে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করছেন তিনি। অভ্যুত্থান-পরবর্তী ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষা অনুসারে দেশের সংস্কার কর্মসূচি ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠন নিয়েও তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভা ছাড়াও সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে ড. ইউনূস একের পর এক নেতার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন।
জাতিসংঘ, আইএলও, ইউরোপীয় কমিশন, বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থাপ্রধানদের কাছে দেশের সংকট সমাধানে সহায়তা চেয়েছেন। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে আরও বেশি সোচ্চার হতে জাতিসংঘ শরণার্থী কমিশনারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এত সব উদ্যোগের পরও সরকারের চ্যালেঞ্জ কমছে না। সরকার গঠনের পর থেকেই একের পর এক দাবিদাওয়ার মুখে পড়তে হচ্ছে। এর ফলে সরকারের লক্ষ্যপূরণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অর্থনৈতিক স্থবিরতাও সংকট তৈরি করেছে। দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেট ভাঙা যায়নি। বেড়েছে চাঁদাবাজি, ছিনতাই। শিক্ষার্থীদের হাতে এখনো সব বই পৌঁছে দেওয়া যায়নি। প্রশাসনিক কাজেও স্থবিরতা বিরাজ করছে। জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের উপযুক্ত চিকিৎসা সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাওয়ের মতো ঘটনাও ঘটেছে। তবে এসব পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই জুলাই-আগস্টে গণহত্যার বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সরকার গঠনের পর ছয় মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে মাঠে নামানোর চেষ্টা করছে সরকার। তবে জনবল, অস্ত্র, যানবাহনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে সে প্রচেষ্টা খুব একটা সাফল্য পাচ্ছে না। এরই মধ্যে পুলিশের মনোবল ফেরত আনতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর যানজট নিরসনেও ট্রাফিক পুলিশ চেষ্টা করছে। পুলিশে নতুন জনবল নিয়োগ হলে যানজট নিরসন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে আশা করছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা।
ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়েও ক্ষোভ
যুগান্তর লিড করেছে, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়িটি ঘিরে এখন উৎসুক আর বিক্ষুব্ধ মানুষের ভিড়। কেউ করছেন ভিডিও, কেউ তুলছেন সেলফি। কারও মুখে শোনা যাচ্ছে শেখ হাসিনার প্রতি তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণা। বাড়িটিকে জাদুঘর করার দাবিও করছেন কেউ কেউ। তৃতীয় দিনে অনেককে বড় বড় হাতুড়ি নিয়ে দেওয়াল ভেঙে রড ও ইট বের করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এছাড়া পোড়া সুধা সদনেও দেওয়াল ছাড়া অবশিষ্ট কিছুই নেই। বৃহস্পতিবার রাতে শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিমের (শেখ সেলিম) বনানীর বাসায়ও আগুন দেয় জনতা। একপর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে আশপাশের বাসিন্দারা পাইপের পানি দিয়ে আগুন নেভান।
এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের বাসা-বাড়িতেও হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। কিশোরগঞ্জে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাসভবনে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে।
নোয়াখালীতে সাবেক সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ এবং ফেনীর সোনাগাজীতে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতেও হামলা হয়েছে। এছাড়া রাজশাহীর বাঘা, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, ঝালকাঠির রাজাপুর, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, পিরোজপুরের নাজিরপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, ভোলাসহ অন্তত ১৬ জেলায় আওয়ামী লীগের ২৫ নেতার বাসা-বাড়ি, আওয়ামী লীগের ৮টি কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর এবং শেখ মুজিবুর রহমানের ১১টি ম্যুরাল ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটির অল্পকিছু কঙ্কালসার অংশ পড়ে আছে। বাতাসে পোড়া গন্ধ। এরই মধ্যে চলছে বড় বড় হাতুড়ি দিয়ে দেওয়াল ভেঙে রড, লোহা ও ইট সরানোর যজ্ঞ। এ ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শেখ হাসিনার প্রতি, কেউ জানাচ্ছেন স্বৈরাচারের প্রতি ঘৃণা।
ভারতের স্বার্থে সীমান্ত হাট
আমার দেশ লিড করেছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবার দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘ভারতকে যা দিয়েছি তা সারা জীবন মনে রাখবে।’ তার এ উক্তির আরেকটি নজির সীমান্ত হাট। গত ১৪ বছরে দেশের বিভিন্ন সীমান্তে চালু করা হয়েছে ৮টি বাজার। এতে একতরফা লাভবান হয়েছেন শুধু ভারতীয় ব্যবসায়ীরাই।
দিল্লির আবদার রক্ষায় সাধারণ মানুষের জমি দখল করে এসব বাজার বানিয়ে দেয় হাসিনা সরকার। তবে যেসব জমির মালিক এতে তাদের শেষ সম্বলটুকু দান করেছিলেন, তাদের অনেকেই এখনো ক্ষতিপূরণ পাননি। স্থানীয়রা বলছেন, সীমান্ত হাটের মাধ্যমে ভারতীয় পণ্যের আরও সম্প্রসারণ ঘটেছে বাংলাদেশে। এ বাজারে ভারতীয় ক্রেতাদের ৫ কেজির বেশি পণ্য কিনতে দেওয়া হতো না। তবে বাংলাদেশি ক্রেতাদের ক্ষেত্রে কোনো সীমা ছিল না। সীমান্ত হাটের মাধ্যমে ভারতের চোরাই পণ্য ও মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে পুরো এলাকা।
৫ আগস্ট হাসিনার পলায়নের পর সীমান্ত হাট বন্ধ থাকলেও ফের খোলার প্রক্রিয়া চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় অর্থনীতিকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে হলে এ জাতীয় বাণিজ্য কেন্দ্রের চিন্তা এখন থেকেই বাদ দিতে হবে সরকারকে।
ভারতের আগ্রহে এই কথিত সীমান্ত হাট প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করা হয়। ২০১১ সালে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার বালিয়ামারি সীমান্তে প্রথম সীমান্ত হাট চালু হয়। এর পরের বছর সুনামগঞ্জের ডলুরায়, ২০১৫ সালের ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার পূর্ব মধুগ্রাম ও ভারতের ছয়ঘরিয়ার মধ্যবর্তীস্থানে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার তারাপুর সীমান্তে স্থাপিত হয় সীমান্ত হাট।
তখন বলা হয়েছিল, এই হাটের মাধ্যমে দুই দেশের সীমান্তের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন আরো দৃঢ় হবে। স্থানীয় পর্যায়ের উৎপাদিত পণ্যের আদান-প্রদানে সীমান্তের প্রান্তিক মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে। দু'দেশের অর্থনীতির চাকা আরো সচল হবে। এমন চটকদার সব স্বপ্ন দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সীমান্ত হাট বসানো হয়। আরো ১৬টি বাজার নির্মাণাধীন। জুলাই বিপ্লবে আওয়ামী লীগের পতন হলে বর্তমানে বাজারগুলোর কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। তবে একটি পক্ষ ফের বাজারগুলো চালু করার তৎপরতা শুরু করেছে।
রপ্তানি রেমিট্যান্স ছাড়া সবকিছুতেই অস্বস্তি
সমকাল লিড করেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর টালমাটাল পরিস্থিতিতে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসে স্বাভাবিক হয়নি জনজীবন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি নেই। মূল্যস্ফীতি আগের মাসগুলোর তুলনায় সামান্য কমলেও, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষকে ভোগাচ্ছে।
ছাত্রদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলগুলো এবং সরকার জাতীয় ঐকমত্যের কথা বললেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসেনি। সরকারের কাজে গতিহীনতার জন্য একাধিক উপদেষ্টাসহ অনেকেই দায়ী করছেন জনপ্রশাসনের স্থবিরতাকে। অন্যদিকে বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতি, চাকরি স্থায়ীকরণ, নিয়োগসহ সরকারি চাকরিজীবীদের নানা দাবি নিয়ে আন্দোলন মোকাবিলা করতে হচ্ছে সরকারকে।
গত ছয় মাসে অন্তত দেড়শ আন্দোলন হয়েছে। যৌক্তিক, অযৌক্তিক দাবি নিয়ে সড়ক বন্ধ করে আন্দোলন সাধারণ মানুষকে ভোগালেও, তা নিরসনে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। জুলাই গণহত্যা ও আওয়ামী লীগ শাসনামলের অনিয়মের বিচারের গতি ধীর বলে অভিযোগ অভ্যুত্থানের অংশীজনের। রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ, সংস্কারের গতিও ধীর।
স্বাভাবিক হয়নি আইনশৃঙ্খলা
ছয় মাসেও পুলিশ-র্যাবের কার্যক্রমে আশানুরূপ গতি আসেনি। অপরাধ দমন বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শক্ত ভূমিকা চোখে পড়ছে না। ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি ছাড়াও গত ছয় মাসে সবচেয়ে উদ্বেগের কারণ ‘মব জাস্টিস’। পলাতক শেখ হাসিনা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের আয়োজনে ভাষণ দেওয়ার ‘প্রতিবাদে’ গত বুধবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া শুরু হয়। সারাদেশে অন্তত ৫০ আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িঘরে হামলা হয় পরের দুই দিনে।
বিএনপিসহ রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজ সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় উদ্বেগ জানালেও ঢাকাসহ কোথাও এসব হামলা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর হতে দেখা যায়নি। ধানমন্ডিতে ভাঙচুর শুরু হওয়ার প্রায় ২৭ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, হামলার চেষ্টা দমন করা হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল শুক্রবার বিবৃতিতে শেখ হাসিনার পরিবারের সম্পত্তি ধ্বংস থেকে বিরত থাকা এবং ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি কিংবা অন্য কোনো অজুহাতে কোনো নাগরিকের ওপর আক্রমণ না করার আহ্বান জানান।
অস্থির সময়, দেশটা যাচ্ছে কোথায়?
মানবজমিন লিড করেছে, এমনিতেই সময়টা অস্থির। প্রতিদিনই কিছু না কিছু ঘটছে। পুলিশ, প্রশাসন পুরোমাত্রায় সক্রিয় নয়। নানা প্রশ্ন, অনিশ্চয়তা। তবে দুই-তিনদিনের বুলডোজার হামলায় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে চরম।
নতুন করে জেঁকে বসেছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। অনেকেই বুঝার চেষ্টা করছেন কী হচ্ছে? পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে দেশে কার্যত কোনো সরকার নেই। ঘটনা ঘটার ২৪ ঘণ্টা পর সরকারের বিবৃতি হাস্যকর শুধু নয়, এক ধরনের তামাশায় পরিণত হয়েছে। উল্লাসের নৃত্য দেখে সচেতন মহলে প্রশ্ন, দেশটা আসলে যাচ্ছে কোথায়? সরকারের ভেতরে যে আরেকটা সরকার কাজ করছে- এটা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আর নানা পেশার মানুষ তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা প্রকাশ করতে না পারলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী বলেছেন, মবোক্রেসি দেশকে অস্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে।
উদ্বেগ জানিয়েছেন মাওলানা মামুনুল হকও। চলমান পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার পরিবার এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সম্পত্তিতে হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে গতকাল বিকালে একটি বিবৃতি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর আগে শুক্রবার রাতে একটি বিবৃতি দেয় সরকার। এতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে কতিপয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠী সারা দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করছে। সরকার এ ধরনের কর্মকাণ্ড শক্তভাবে প্রতিহত করবে। অন্তর্বর্তী সরকার নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রস্তুত। কোনো ধরনের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হলে দায়ী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইন- শৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেবে এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাবে। পুরো পরিস্থিতিতে জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে দু’টি পোস্ট করেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। সর্বশেষ পোস্টে তিনি বলেছেন, শান্ত হোন। সরকারকে কাজ করতে দিন।
এ পর্বের অবনতিশীল পরিস্থিতির শুরুটা অবশ্য বুধবার। গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ফেসবুক লাইভে বক্তব্য দিবেন- এমন খবর চাউর হওয়ার পর থেকেই ছাত্র- জনতার মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। ফেসবুক-ইউটিউবে একদল ব্যক্তি হাসিনার বক্তব্যের পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে হামলার ডাক দেন। তবে উত্তেজিত জনতার হামলা-ভাঙচুর কেবল এখানেই থেমে থাকেনি। সুধাসদনসহ হামলা হয়েছে জেলায় জেলায়। আক্রান্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘর। এসব নেতারা অবশ্য বাড়িতে ছিলেন না।
দ্রুত নির্বাচনের দিকেই যাচ্ছে সরকার
কালের কণ্ঠ লিড করেছে, দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, কবে সে নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে, তা নিয়ে নানা আলোচনা, সন্দেহ ও শঙ্কার মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘নির্বাচন একটি জাতির গণতান্ত্রিক হয়ে ওঠার জন্য অপরিহার্য। যত দ্রুত সম্ভব, এ বছরের শেষ দিকে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে পারে।’ জাপানের সরকারি টেলিভিশন এনএইচকেকে গত বুধবার দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময় তুলে ধরেন।
তিনি চলতি বছরের শেষ দিকে বা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের কথা বলেন। পরদিন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানান, ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। বিজয় দিবসে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর নির্বাচন কমিশন জানায়, জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। গত ১৭ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা বা অন্তর্বর্তী সরকার যখন চাইবে তখনই নির্বাচন করতে প্রস্তুত ইসি।’
কিন্তু এনএইচকেকে দেওয়া গত বুধবারের ওই সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ‘২০২৬ সালের প্রথমার্ধ’—এই বর্ধিত সময়সীমা থেকে সরে এসেছেন বলে অনেকের ধারণা। যদিও একই দিনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন এ বছরের শেষ নাগাদ, নাকি আগামী বছরের জুনের মধ্যে হবে তা নির্ভর করছে জুলাই চার্টারের ওপর।’ জুলাই চার্টার হচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত নির্বাচনব্যবস্থা ও সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ ছয়টি কমিশনের গ্রহণযোগ্য সুপারিশগুলো সম্পর্কে ‘ঐকমত্য কমিশন’-এর মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর একমত হওয়া।
এটিআর/