Logo

সারাদেশ

নোয়াখালী দেশের ধনী জেলা হওয়ার রহস্য

Icon

নোয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬:১৩

নোয়াখালী দেশের ধনী জেলা হওয়ার রহস্য

প্রাচীন বাংলার সমতট জনপদের অন্তর্ভুক্ত নোয়াখালী অঞ্চলের সভ্যতা প্রায় তিন হাজার বছরের। যুগের পর যুগ ধরে প্রকৃতি আর বহিঃশত্রুর সঙ্গে লড়াই করে দারুণ আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠেছেন মেঘনা অববাহিকার উর্বর এ অঞ্চলের মানুষ। ইতিহাস ঐতিহ্যের সেই পথ ধরেই নোয়াখালী হয়ে উঠেছে ব্যতিক্রমী এক জেলা।  

সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশের ধনী জেলা হিসেবে নাম উঠে এসেছে নোয়াখালীর। যা সেই ইতিহাসের দিকেই দৃষ্টি ফেরায়। দশকের পর দশক ধরে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ব্যবসায়িক অগ্রগতির জন্য পরিচিতি পেয়েছে নোয়াখালী।

নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান— ‘আঙ্গো বাড়ি নোয়াখালী, রয়েল ডিস্ট্রিক ভাই‘ খুবই জনপ্রিয়।  এ গানটি মানুষের সঙ্গে জেলাটির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গভীর সম্পর্ককেই প্রতিফলিত করে।

টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সর্বত্র দেখা মেলে নোয়াখালীর মানুষের। এ জেলার মানুষ শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, সাহিত্যে জেলাবাসীর অবদান বিভিন্নভাবে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

প্রাকৃতিক দিক থেকে নোয়াখালী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে মেঘনা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত এ জেলার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। যা এর চরিত্রকে ভাঙা আর গড়ার অসাধারণ এক বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। নোয়াখালীর ভূ-প্রকৃতি আর ইতিহাস এখানকার মানুষের আত্মবিশ্বাস আর ঐতিহ্যের নীরব সাক্ষী হয়ে আছে। আর এসবই নোয়াখালীকে ধনী জেলায় পরিণত করেছে।

নোয়াখালীর জনসংখ্যা ৪০ লাখের বেশি। এখানকার মানুষ শুধু কৃষি ও মৎস্য থেকেই আয়ের মুখ দেখেন না; বরং বৈদেশিক মুদ্রার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতেও বিরাট অবদান রাখছেন। এখানকার উৎপাদিত কৃষিপণ্য, মৎস্য ও ডিম-মাংস শুধু নোয়াখালীতে নয়, পুরো দেশ ও বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ—লন্ডন, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যে—নোয়াখালীর মানুষ কর্মরত আছেন এবং এখানকার রেমিটেন্স যোদ্ধারা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

গত ২০ বছরে নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে নানা ধরনের সবজি আবাদ হচ্ছে। এ সবজি দেশের বাইরে রপ্তানি হচ্ছে। এক ফসলি জমির পরিবর্তে এখন চার ফসলের আবাদ হচ্ছে। এখানকার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া ও সুবর্ণচর বর্তমানে কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনের হাব হয়ে উঠেছে। হাতিয়া অঞ্চলে বর্তমানে ২০টিরও বেশি দ্বীপ রয়েছে। যেগুলোর বেশিরভাগই পর্যটন অঞ্চলে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা আর উদ্যোগ নিলে এ অঞ্চলটি হয়ে উঠতে পারে দেশের বৃহত্তম পর্যটন কেন্দ্রও।

নোয়াখালী শুধু একটি অঞ্চলই নয়, জীবন্ত একটি ইতিহাসও। যার অগ্রগতি দেশের উন্নতির সঙ্গে সম্পর্কিত। এ জেলা শুধু অর্থনীতির ক্ষেত্রেই এগিয়ে যায়নি, রাজনৈতিকভাবে ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নোয়াখালী মানুষের সাহসিকতা ও ত্যাগের সাক্ষী। দেশের স্বাধীনতা পরবর্তী ৫৪ বছরে নোয়াখালীর বিভিন্ন রাজনীতিকরা মন্ত্রী ও উপ-প্রধান মন্ত্রীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সাম্প্রতিক সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নোয়াখালীতে দারিদ্র্যতা কমেছে ও মাথাপিছু আয় বেড়েছে, যা দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক এগিয়ে। দেশের সবচেয়ে ধনী জেলার মর্যাদা পাওয়া নোয়াখালী— শুধু একটি জেলা-ই নয়, একটি নতুন ভাবনাও, যা অন্য জেলাগুলোর জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে।


দ্বীপ আজাদ/এআরএস/বিএইচ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর