Logo

নির্বাচিত

বাংলাদেশের পত্রিকা থেকে

সরকারের ভিতর সরকার!

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩:৫১

সরকারের ভিতর সরকার!

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন নয়

বাংলাদেশের খবর প্রধান প্রতিবেদন করেছে, ন্যূনতম সংস্কার শেষে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের প্রত্যাশা বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয়, সে বিষয়টিও ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে পরিষ্কার করেছেন দলগুলোর নেতারা। গতকাল বেলা ৩টার কিছু পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দেশের ২৬টি রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিদের নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের এই বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। 

বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা আশা করব, খুব দ্রুত এই সংস্কারের বিষয়ে ন্যূনতম যে ঐকমত্য তৈরি হবে, সেটার ওপর ভিত্তি করে অতি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।' 

বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে হতে হবে বলে আবার বিএনপির অবস্থানের কথা বৈঠকে তারা তুলে ধরেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা খুব পরিষ্কারভাবে বলেছি জাতীয় নির্বাচন আগে হতে হবে। তারপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন।' 

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম বৈঠক করলেন। এই বৈঠকে তিনি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে কথা বলেছেন। দলগুলোর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, সংস্কারের যে প্রতিবেদনগুলো বিভিন্ন কমিশন জমা দিয়েছে, সেগুলোর ওপর আলাপ-আলোচনা হবে। 

দলগুলো এ নিয়ে কমিশনগুলোর সঙ্গে কথা বলবে এবং একটা ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হবে। সেটাই মূল কথা। প্রাথমিক আলোচনা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন কথা বলেছে। 

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রথম বৈঠকটি ছিল মূলত পরিচিতিমূলক, যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের নিজস্ব মতামত উপস্থাপন করেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ও গঠনমূলক আলোচনা হয়নি। 

সংস্কার নিয়ে ঐক্যের প্রয়াস শুরু 

প্রথম আলোর প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর ব্যাপারে ঐকমত্য তৈরির প্রয়াস শুরু করল অন্তর্বর্তী সরকার। এ উদ্যোগকে সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরু বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। অন্যদিকে সরকারের এই প্রয়াসকে একটি সূচনা পর্ব হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের আশা, খুব দ্রুতই সংস্কারের ব্যাপারে ন্যূনতম ঐকমত্যের ভিত্তিতে অতি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গতকাল শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে প্রথম বৈঠক করে। এতে ছয় সংস্কার কমিশনের প্রধানেরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক কমিটি, ইসলামী আন্দোলন, এলডিপি, নাগরিক ঐক্য, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), খেলাফত মজলিস, গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদসহ ২৭টি দল ও জোটের প্রায় ১০০ রাজনীতিক অংশ নেন।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসে প্রথম ইনিংস বা প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে। প্রথম পর্ব ছিল প্রস্তুতি পর্ব। আজ রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হলো।

রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বেলা তিনটার পর থেকে প্রায় চার ঘণ্টা এই বৈঠক চলে। বৈঠকের পর তিনটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। তাঁদের মনে হয়েছে, সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে সরকার কিছুদিন নানাভাবে চর্চা করবে। শেষ পর্যন্ত সব বিষয়ে হয়তো ঐকমত্য হবে না। তখন সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।

বৈঠক শেষে বিভিন্ন দলের নেতারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের প্রথম সভায় প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদনগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার কথা বলেছেন। এরপর একটা ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হবে। সেটাই আজকের বৈঠকের মূল কথা।

ফখরুল বলেন, ‘আমরা আশা করি, খুব দ্রুত এই সংস্কারের যে ন্যূনতম ঐকমত্য তৈরি হবে এবং সেটার ওপর ভিত্তি করে অতি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একেবারে পজিটিভ কনস্ট্রাকটিভ কোনো আলোচনা আজকে হয়নি, সুযোগও ছিল না।’

বৈঠকে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

বৈঠকে মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী, অলি আহমেদের নেতৃত্বে এলডিপি, সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহর নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলন, মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বে নাগরিক ঐক্য, এসএম আলতাফ হোসেন ও সুব্রত চৌধুরীর নেতৃত্বে গণফোরাম, জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বে গণসংহতি আন্দোলন, সাইফুল হকের নেতৃত্বে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আবদুল বাছিদ আজাদ ও আহমেদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বে খেলাফতে মজলিস, আন্দালিব রহমান পার্থের নেতৃত্বে বিজেপি, নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাসদ, মজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে এবি পার্টি, নুরুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ, মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, খন্দকার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে জাগপা, ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে এনপিপিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা অংশ নেন।

বিডিআর ম্যাসাকারের অন্যতম সন্দেহভাজন কর্নেল শামস

আমার দেশ পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিডিআর সদর দপ্তর রাজধানীর পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে অস্ত্রাগার খুলে দিয়ে বিডিআরের বিপথগামী সদস্যদের হাতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন তৎকালীন ৪৪ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শামসুল আলম চৌধুরী। তিনি কর্নেল শামস নামে পরিচিত। এই সেনা কর্মকর্তা বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল।

পিলখানায় দুদিনের (২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯) হত্যাকাণ্ড ও বিদ্রোহে জড়িতদের অন্যতম সন্দেহভাজন এই কর্মকর্তা ওইদিন বিডিআর অস্ত্রাগারের দায়িত্বে ছিলেন। বিদ্রোহের জন্য এর আগে যে লিফলেট ছাড়া হয়, সেটির খসড়া তিনি তৈরি করেন এবং সুকৌশলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। নৃশংস হত্যাকাণ্ডে তার ব্যাটালিয়নই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।

২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর দরবার শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে ৪৪ ব্যাটালিয়নের সদস্য সিপাহি মঈন একটি অস্ত্র নিয়ে মঞ্চে উঠে বিডিআরের ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিলের মাথায় তাক করেছিলেন। একজন অফিসার তাকে নিরস্ত্র করেন। সিপাহি মঈনের হাতে থাকা অস্ত্রটি দেখে বিডিআর ডিজি তখন কর্নেল শামসকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, ‘শামস, এই অস্ত্র তোমার ব্যাটালিয়নের।’

আমার দেশ অনুসন্ধানে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, নৃশংস বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন স্বয়ং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে এই ম্যাসাকার সংঘটিত হয়। আর এই ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কর্নেল শামস। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়ে তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ইশারায় কাজ করেছেন এবং তার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন।

আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম, ফজলে নূর তাপস, জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং মির্জা আজমের সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল এবং ৪৪ ব্যাটালিয়নের আস্থাভাজন বিডিআর সদস্যদের তিনি তাদের সঙ্গে বৈঠক করান। কর্নেল শামসের দেওয়া তথ্যের প্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রী পিলখানায় তার পরবর্তী কর্মসূচি বাতিল করেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় রাইফেলস সপ্তাহ উদ্বোধন করেন।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের চাঞ্চল্যকর বিডিআর হত্যাকাণ্ডটি ছিল একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের দেওয়া তথ্যমতে, ওয়ান ইলেভেন ছিল এই ষড়যন্ত্রেরই প্রথম ধাপ। শেখ হাসিনা ও প্রতিবেশী ভারতের যৌথ ষড়যন্ত্রেই এই ঘটনাগুলো ঘটে। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এবং সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের প্রকাশ্য ভূমিকাই এর প্রমাণ।

প্রণব মুখার্জি তার আত্মজীবনীমূলক বইয়েও ওয়ান-ইলেভেনে এবং শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আসা নিয়ে লিখেছেন। অতীতে দেখা গেছে, এ ধরনের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রগুলো বাস্তবায়নের পথে সব সময় প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিডিআর। তারা নানা পদক্ষেপ নিয়ে ষড়যন্ত্র ভণ্ডুল করে দিয়েছে। এজন্য ভারতের পক্ষ থেকে পরিকল্পিতভাবেই সেনাবাহিনী ও বিডিআরকে দুর্বল বাহিনী করে রাখার জন্য ষড়যন্ত্র করা হয়।

সরকারের ভিতর সরকার!

বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের নভেম্বর থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে ভূমিসেবার নাকাল দশা। দিনের পর দিন ভূমি অফিসে দৌড়ঝাঁপ করেও হচ্ছে না নামজারি। পরিশোধ করা যাচ্ছে না খাজনা। পাওয়া যাচ্ছে না খতিয়ান, ডিসিআর। সব ক্ষেত্রে দেখানো হচ্ছে সার্ভার ত্রুটির অজুহাত। স্থবির হয়ে পড়েছে জমি নিবন্ধন কার্যক্রম। ভুক্তভোগী অনেকে ভূমিসেবায় হঠাৎ এমন স্থবিরতার জন্য সরকারকে দায়ী করছেন। কেউ কেউ বলছেন, সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে একটা শ্রেণি তৎপর রয়েছে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে জনদুর্ভোগ বাড়াচ্ছে। তবে ভূমিসেবায় ভোগান্তি নিয়ে মাঝেমধ্যে দুঃখ প্রকাশ করে দায় সারছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

সরকার বাজেট ঘাটতির জন্য শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট বাড়াচ্ছে অথচ সরকারের পাওনা ভূমিকর সরকারকে দিতে পারছে না জনগণ। এতে একদিকে সরকার রাজস্ববঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারবিরোধী ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। সরকারের ভিতর আরেকটি সরকার কাজ করছে বলে মন্তব্য করছেন ভুক্তভোগীরা।

বিভিন্ন ভূমি অফিসে সরেজমিনে দেখা গেছে, নামজারি, খাজনা আদায় বন্ধ থাকায় সন্তানকে বিদেশ পাঠাতে, মেয়ের বিয়ে বা জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনেও নিজের জমি বিক্রি করতে পারছে না মানুষ। ভুক্তভোগীরা বলছেন, দলিল রেজিস্ট্রেশনে হালনাগাদ খাজনা পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। খাজনা পরিশোধ করতে না পারায় অনেক জায়গায় দলিল রেজিস্ট্রেশনও বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া নামজারি ও খাজনা না দিলে সে জমিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির সংযোগ আনা যায় না। ব্যাংক ঋণ নেওয়া যায় না। একই কারণে অনেক নির্মাণকাজও বন্ধ রয়েছে। এতে নির্মাণশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রড, সিমেন্ট, শ্রমিক, রং, প্রকৌশলী, পাথর, টাইলস, বিদ্যুৎসামগ্রীসহ উপখাতগুলোও ক্ষতির মুখে। সব মিলে ভূমিসেবায় সারা দেশে ‘হযবরল’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

নামজারি ও ট্যাক্স পরিশোধ কেন করা যাচ্ছে না জানতে চাইলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে কিছুটা সমস্যা ছিল। এখন কোনো সমস্যা নেই। তবে সার্ভার আপডেট করা হচ্ছে। যদি এখনো কোনো সমস্যা থাকে আগামী মার্চ থেকে আর থাকবে না। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নামজারি ও খাজনা পরিশোধ বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘আমরা পূর্বাচল এলাকায় রাজউকের প্লটের নামজারি বন্ধ রেখেছি। রাজউক প্লট দিয়েছে, সেখানে কিছু অনিয়ম আছে, খতিয়ানে ভুল আছে। আমরা একটা ডিজিটাল জরিপ করছি। আগামী এক বছরের মধ্যেই সবকিছু একটা সিস্টেমে আনার উদ্যোগ নিচ্ছি।’

খাজনা না নেওয়া বা বিশেষ এলাকায় নামজারি বন্ধে সরকারের কোনো নির্দেশনা আছে কি না-জানতে চাইলে ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এমন নির্দেশনা কোথাও নেই। তবে রাজউকের প্লটগুলোর দাগ-খতিয়ান নেই। তাই সফটওয়্যার এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে আটকে দিচ্ছে।’ হঠাৎ সফটওয়্যার পরিবর্তন প্রসঙ্গে বলেন, ‘ভূমিসেবা সহজ করতে আগের ম্যানুয়াল একাধিক সফটওয়্যারকে একটিতে উন্নীত করা হয়েছে। এতে সার্ভারের ভাড়া কমবে। তবে সফটওয়্যারের কিছু ত্রুটি এখনো আছে। এগুলো দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে। ডিসেম্বরের চেয়ে এখন ভালো হয়েছে। আগামী মার্চে প্রধান উপদেষ্টা সময় দিলে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরিকল্পনা আছে। চেষ্টা করছি তার আগে ঠিক করতে। তবে নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না।’ অনেকের জমির তথ্য খুঁজে না পাওয়া, হোল্ডিং না পাওয়া, সফটওয়্যারে ধীরগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৩০ ভাগ সমস্যার দায় সফটওয়্যারের, বাকিটা ইন্টারনেটসহ অন্যান্য। এ ছাড়া সফটওয়্যারে এআই পদ্ধতি ব্যবহার করায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তথ্যে সামান্য ভুলত্রুটি হলে অটোমেটিক আটকে যাচ্ছে।’

ভূমিসেবায় ভোগান্তি চরমে

কালের কণ্ঠ পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিসেবায় ভোগান্তি এখন চরমে। গত বছরের নভেম্বর থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে ভূমিসেবায় নাকাল সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন ভূমি অফিসে দৌড়ঝাঁপ করেও মিলছে না নামজারি। পরিশোধ করা যাচ্ছে না খাজনা।

পাওয়া যাচ্ছে না খতিয়ান, ডিসিআর। সব ক্ষেত্রে সার্ভার ত্রুটিকে অজুহাত হিসেবে দেখানো হচ্ছে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে জমি নিবন্ধন কার্যক্রমও। ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ ভূমিসেবায় হঠাৎ এমন স্থবিরতার জন্য সরকারকে দায়ী করলেও কারো কারো মতে, এর মাধ্যমে সরকারের ইমেজ সংকট তৈরি করে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে একটা শ্রেণি তৎপর রয়েছে।

তারা ইচ্ছাকৃতভাবে জনদুর্ভোগ বাড়াচ্ছে। তবে ভূমিসেবায় ভোগান্তি নিয়ে মাঝেমধ্যে দুঃখ প্রকাশ করে দায় সারছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ভূমি অফিসের কর্মকর্তারাও সার্ভার জটিলতায় ভূমিসেবা বিঘ্নের দায় স্বীকার করছেন। সরকার বাজেট ঘাটতির জন্য শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট বাড়িয়েছে, অথচ সরকারের পাওনা ভূমিকর সরকারকে দিতে পারছে না জনগণ।

এতে একদিকে সরকার রাজস্ববঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারবিরোধী ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। সরকারের মধ্যে আরেকটি সরকার কাজ করছে কি না—এমন প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।

অনেক ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, নামজারি, খাজনা আদায় বন্ধ থাকায় সন্তানকে বিদেশে পাঠাতে, মেয়ের বিয়ে বা জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনেও নিজের জমি বিক্রি করতে পারছে না মানুষ। তারা বলছে, দলিল রেজিস্ট্রেশনে হালনাগাদ খাজনা পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। খাজনা পরিশোধ করতে না পারায় অনেক জায়গায় দলিল রেজিস্ট্রেশনও বন্ধ রয়েছে।

জাতীয় সংসদ ভোটের পর পুলিশে পদকের মচ্ছব

সমকাল পত্রিকার প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নমিনেশন ফরম বিক্রি-জমার কার্যক্রম চলছিল। দলটির নেতাকর্মী মিছিল, ব্যান্ড পার্টি ও ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় ভিড় করেছিল। এ সময় পুলিশ রাস্তা চালু করার নামে লাঠিপেটা, টিয়ার গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ছোড়া শুরু করে। মুহূর্তেই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। মনোনয়ন উৎসব রূপ নেয় সংঘাতে। ঘটনাস্থল থেকে ৫৯ জনকে আটক করা হয়।

এ ঘটনার জন্য ওই বছর পুলিশের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’ পান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের তৎকালীন উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। পদকপ্রাপ্তির প্রকাশনাতেই কারণ হিসেবে এর উল্লেখ করা হয়েছে।


শুধু আনোয়ার নন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওই বছরে এমন কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ পদক পেয়েছেন অনেকেই। মোট পদক দেওয়া হয় ৩৪৯ জনকে। এত বেশি সংখ্যক পুলিশ পদক ওই বছর ছিল ইতিহাসে সর্বোচ্চ। 

২০১৮ সালের নির্বাচনটি ‘রাতের ভোট’ হিসেবে দেশে-বিদেশে পরিচিত। সম্প্রতি নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে ওই নির্বাচনের রিটার্নিং ও সহকারী কর্মকর্তারা অনিয়মের জন্য পুলিশকে দায়ী করেন। পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রগুলোও বলছে, মূলত রাতের ভোটের কারিগর হিসেবে ওই সময় পুলিশ কর্মকর্তাদের এত বেশি পদক দেওয়া হয়।

পদক তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পরের বছরই (২০১৯) পুলিশ পদকের সংখ্যা নেমে আসে এক-তৃতীয়াংশে ১১৮ জন। এর পরের তিন বছরও চিত্র একই রকম; ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে পুলিশ পদক পান ১১৫ জন করে। পরের বছরের পদক দেওয়া হয় ২০২৪ সালে। পদক পান ৪০০ জন। বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ। ওই বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছিল দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। দেশে-বিদেশে তা ডামি নির্বাচন হিসেবে পরিচিতি পায়।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, বেশির ভাগ কর্মকর্তা নির্বাচনে বিশেষ ভূমিকা রাখার পুরস্কার হিসেবে এই পদক পেয়েছেন। নির্বাচনের আগে-পরে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে দমনপীড়নের স্বীকৃতি ছিল ওই পদক। 

পদক পাওয়া ওই কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। কেউ কেউ দেশ ছেড়েছেন। কয়েকজন গ্রেপ্তারের পর কারাগারে রয়েছেন। একটি বড় অংশ এখনও পুলিশে রয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম সভায় প্রধান উপদেষ্টা

সংস্কার করবে দলগুলো

যুগান্তর পত্রিকার প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার ও কমিশন সহযোগিতা করলেও আকাঙ্ক্ষিত সংস্কার করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। শনিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের সূচনা বক্তব্যে একথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, গোটা বিশ্ব বর্তমান সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। তাই ষড়যন্ত্রকারীরা ট্রাম্পের কাছে গিয়েও সুবিধা করতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের ৬ মাসে প্রথম ইনিংস বা প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে। রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হলো।

বেলা ৩টার কিছু পরে রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল ও কয়েকটি সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। তবে আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটে থাকা কোনো দল ও জাতীয় পার্টিকে এ বৈঠকে ডাকা হয়নি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, পৃথিবীজুড়ে আমাদের একটা বড় রকম সমর্থন গড়ে উঠেছে। যে কারণে অপর পক্ষ সুবিধা করতে পারছে না। পদে পদে ব্যাহত হচ্ছে, যেখানে যায়। বহু গল্প করছে, গল্প টেকাতে পারছে না। শেষমেষ তো ট্রাম্পকে নিয়ে গল্প, সে অপপ্রচার চালাতে গিয়ে চালাতে পারল না।


তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ একটা সমর্থন ও আন্তর্জাতিক একটা সমর্থন-এই দুই সমর্থনের ভেতর দিয়ে আমরা যদি এই নতুন বাংলাদেশ গড়তে না পারি তা আমাদের কর্মের দোষ ছাড়া আর কি বলব। আমরা এই সুযোগ ছাড়তে চাই না। আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন, সহযোগিতা এবং শুভেচ্ছাকে মস্ত বড় সম্পদ বলে উল্লেখ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, আমরা প্রথম পর্বের পর দ্বিতীয় পর্বে আসলাম। দ্বিতীয় পর্বে যেন আমরা আনন্দের সঙ্গে, খুশি মনে সম্পন্ন করতে পারি। নতুন বাংলাদেশে যে নতুন নির্বাচন, নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠন হবে সে ব্যাপারে কেউ প্রশ্ন তুলবে না। এ ব্যাপারে আইনকানুন সবার জানা থাকবে, এটা নড়চড় করার উপায় কারও থাকবে না। আইনকানুন বানানোর পরে সেটা নড়চড় করার সুযোগ থাকবে না, সেজন্য এতবড় কমিশন করতে হয়েছে।

ড. ইউনূস বলেন, আমাদের সেই দ্বিতীয় পর্ব শুরু। আপনারাই (রাজনৈতিক দল) এই দ্বিতীয় পর্বের শেষটা। আপনাদের সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য আমরা নিয়োজিত থাকব। এই সংস্কার কমিশনের যারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন সংস্কারটা যেন এমনভাবে হয় ভবিষ্যতের প্রজন্মরা যাতে আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, প্রচণ্ড সুযোগ। সুযোগ এজন্যই যে আমরা এমন পর্যায়ে আছি এখন। আমাদের মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টি হলে আমরা সেগুলো কাজে লাগাতে পারি। এবার কাজে লাগালে সেটা বংশ, প্রজন্ম পরম্পরায় সেটি চলতে থাকবে। একটা সুন্দর দেশ আমরা পাব। এই ভাবনা থেকেই আমরা এগুলো গ্রহণ করব।

এমআই

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর