Logo

বিশেষ সংবাদ

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির নেপথ্যে ৪ কারণ

নুর মোহাম্মদ মিঠু

নুর মোহাম্মদ মিঠু

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:১১

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির নেপথ্যে ৪ কারণ

বেসামাল অবস্থায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এমন পরিস্থিতিতে ‘ক্যারিশমা’ দেখাতে পারছে না সরকার। বরং দিন দিন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হচ্ছে। দেশজুড়ে ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, খুন ও সশস্ত্র হামলার ঘটনা বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে।

রাজধানীতে কিশোর গ্যাং থেকে শুরু করে আন্ডারওয়ার্ল্ডের অপরাধীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বহাল তবিয়তে। প্রকাশ্যে ছুরি-চাপাতির নিয়ে হামলায় আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ।

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির পেছনে বেশ কয়েকটি কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো-

  • অভ্যুত্থানবিরোধী চক্রের মদদ ও উসকানি
  • পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা
  • অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতা
  • লুটের অস্ত্র অপরাধীদের হাতে

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা চালিয়ে দুর্বৃত্তরা ৫ হাজার ৭৫০টি অস্ত্র লুট করে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৩৬৬টি অস্ত্র উদ্ধার করা হলেও এক হাজার ৩৮৪টি অস্ত্র অপরাধীদের হাতে রয়ে গেছে।

জানা গেছে, এসব অস্ত্রের বেশিরভাগই সন্ত্রাসীদের হাতে পৌঁছে গেছে। যদিও এত অস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে রেখেই খোদ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলছেন, দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক।

জননিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের সুযোগ নেবে অপরাধীরা। এছাড়া পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা এসব অপরাধে রসদ যোগাচ্ছেন। দেশ ও দেশের বাইরে থাকা শক্তির মদদ ও উসকানি বর্তমান পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশে দায়ী।

আরও একাধিক কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির নেপথ্যে কী জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নুরুল হুদা বলেন, ‘পুলিশের বৃহদাংশের নিস্ক্রিয়তা অন্যতম একটি কারণ। গত ১৫ বছরে যতটা না আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল, তারচেয়ে বেশি ক্ষমতা ছিল পুলিশের। আওয়ামী লীগ সরকার সেভাবেই পুলিশকে প্রাধান্য দিয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘দলটির দুর্নীতি ও অবৈধ অর্থের বিশেষ অংশীদার ছিল এই বাহিনী। সড়ক-মহাসড়ক, ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে চাঁদাবাজির যে হাজার হাজার কোটি টাকা উঠত- তার বড় অংশ পেত এই বাহিনী। অন্যান্য আরও উৎস থেকে বিপুল পরিমাণে অবৈধ অর্থ আসত তাদের কাছে। অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতা ও অর্থ দুটোই এখন আর আগের মতো নেই। নেই সেই চেইন অব কমান্ডও। সেসব সিনিয়র অফিসারদেরও কেউ নেই বাহিনীতে।’

সাবেক এই আইজিপি আরও বলেন, ‘সব মিলিয়ে দেশ কিংবা জনতার জন্য নয়, নিজের জন্যও কাজের স্পৃহা হারিয়ে ফেলেছেন মদদগ্রস্ত পুলিশ সদস্যরা। জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি তাদের কাছে এখন গৌণ, বরং মুখ্য হয়ে দাড়িয়েছে ‘আমরা ছাড়া তোমরা কতটা অসহায়’ সেই মেসেজটা জনগণকে বোঝানো।’

অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় ডর-ভয়হীনভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অপরাধীরা। সম্প্রতি ছিনতাই-চুরি, ডাকাতি-হত্যাসহ নানা অপরাধে যারা জড়িত, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এসে তারা হঠাৎ করে অপরাধী হয়ে যাননি। এদের অনেকেই পরিবারহীন, সমাজচ্যুত, ছিন্নমূল, ভবঘুরে, নিম্নআয়ের, অনেকক্ষেত্রে বেওয়ারিশ মানুষ। যাদের কারও প্রতি দায়বদ্ধতা নেই, সম্মানহানিরও ভয় নেই।’

তিনি বলেন, ‘জেল-হাজত এদের কাছে শাস্তি না, বরং দিনাতিপাতের নিশ্চয়তা। জানটা যাতে না যায়- ওদের ওইটুকুই ভয়। সরকারের ভূমিকায় এই শ্রেণিটি যখন বুঝে গেছে, অরাজকতা ঠেকাতে এই সরকার যদি বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যা করে, তবে ‘আগেই ভালো ছিলাম’ কিংবা যদি না করার কারণে অরাজকতা বাড়ে তবুও ‘আগেই ভালো ছিলাম’ স্লোগানধারী জনমত তো রয়েছেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুষ্কৃতকারীরা যেহেতু ওয়াকিবহাল, এই সরকার অন্তত বিচারবহির্ভূত হত্যা করবে না, ক্রসফায়ার যেহেতু হবে না, ধরলে বড়জোর জেল। সুতরাং তারা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক ডেসপারেট। চুরি ছিনতাই ডাকাতিতে ব্যবহৃত অস্ত্র মাথা ব্যথার বড় কারণ। অভ্যুত্থানের সময় থানা থেকে লুট হওয়া বেশিরভাগ অস্ত্র এখনও দুর্বৃত্তদের হাতে। থানা থেকে যেসব অস্ত্র লুট হয়েছে, তা বেশিরভাগই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই করেছে দুষ্কৃতকারীরা। লুটের সেসব অস্ত্র এখন কাজে লাগাচ্ছে তারা।’

  • এনএমএম/এমজে/ওএফ
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর