Logo

খেলা

ভয়ানক শারীরিক সমস্যা জয় করে ২২ গজে রাজত্ব করেছেন যারা

Icon

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:০৩

ভয়ানক শারীরিক সমস্যা জয় করে ২২ গজে রাজত্ব করেছেন যারা

ছবি : সংগৃহীত

ক্রিকেটের ২২ গজে যারা শাসন করেছেন, তাদের শুধু ব্যাট ও বলের জাদু নয়, জীবনেও রয়েছে এক অদম্য সাহসিকতার গল্প। প্রতিটি ম্যাচ, প্রতিটি ইনিংস যেন ছিল এক যুদ্ধ—তবে এই যুদ্ধে প্রতিপক্ষ শুধুমাত্র প্রতিপক্ষ দলের বোলার বা ফিল্ডারই নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও একাধিক ভয়ানক শারীরিক সমস্যা লড়াই করেছে তাদের বিরুদ্ধে।

কেউ হারিয়েছেন ক্যানসারকে, কেউ পোলিয়োকে, কেউ আবার কেবল শারীরিক যন্ত্রণায় নয়, জীবনকে নিয়ে গিয়েছিলেন এক অদৃশ্য যুদ্ধের মাঝে। কিন্তু প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে জয় করে তারা ফিরে এসেছেন ২২ গজে, যেখানে তাদের প্রতিভা এবং সংকল্পের কাছে অসীম ছিল জয়। এই গল্প শুধু তাদের ক্রিকেটের নয়, জীবনযুদ্ধেরও এক উদাহরণ।

এই বিশাল তালিকায় নাম রয়েছে বিশ্বক্রিকেটের কিছু মহানায়ক, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন জাতীয় দলের অধিনায়কও ছিলেন। চলুন, তাদের অবিশ্বাস্য সাহসিকতার দিকে এক নজর ফেলা যাক।

মাইকেল আথারটন (ইংল্যান্ড)
এনকিলোসিং স্পন্ডিলাইটিস নামের বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে দেহের মেরুদণ্ড এবং পিঠের পেশিতে অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করতেন ইংল্যান্ডের এই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান। তবে এই দুঃসহ যন্ত্রণা সহ্য করে তিনি জাতীয় দলের হয়ে ১১৫টি টেস্ট এবং ৫৪টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। তার ব্যাটিং গড় ছিল প্রায় ৩৮, যা তার সংগ্রামী মানসিকতার পরিচায়ক।

মনসুর আলি খান পটৌদী (ভারত)
ভারতের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেট অধিনায়ক পটৌদী এক গাড়ি দুর্ঘটনায় একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন, কিন্তু তা তার ক্রিকেট জীবনে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। তিনি ৪৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের মধ্যে ৪০টি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেন এবং নয়টি ম্যাচে ভারতকে জয়ের স্বাদ দেন। তার অনবদ্য নেতৃত্ব এবং ক্রিকেট দক্ষতা ভারতীয় ক্রিকেটকে নতুন দিগন্ত দেখিয়েছে।

ব্রায়ান লারা (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ব্রায়ান লারা ২০০২ সালে হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে তার এই রোগ তাকে থামাতে পারেনি। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি মাঠে ফিরেছিলেন এবং ২০০৪ সালে টেস্ট ক্রিকেটে অপরাজিত ৪০০ রান করে বিশ্বরেকর্ড গড়েন, যা আজও অক্ষুণ্ণ রয়েছে।

ভাগবত চন্দ্রশেখর (ভারত)
মাত্র তিন বছর বয়সে পোলিয়ো আক্রান্ত হন ভারতীয় লেগস্পিনের জাদুকর ভাগবত চন্দ্রশেখর। তার একটি হাত প্রায় অক্ষম হয়ে গিয়েছিল, তবে তার ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা এবং পরিশ্রম তাকে থামাতে পারেনি। তিনি ৫৮টি টেস্টে ২৪২ উইকেট নেন এবং ভারতীয় ক্রিকেটে তার লেগস্পিনের ছাপ রেখে যান।

মাইকেল ক্লার্ক (অস্ট্রেলিয়া)
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক ডেসিমেটেড ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক নামক বিরল রোগ এবং ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবুও তিনি ২০০৭ এবং ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপ জিতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার টেস্ট এবং এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে রয়েছে অসংখ্য দুর্দান্ত ইনিংস।

ওয়াসিম আক্রাম (পাকিস্তান)
পাকিস্তানের পেস কিংবদন্তি ওয়াসিম আক্রাম ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩১ বছর বয়সে। তার পরেও তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে পাকিস্তানকে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছেন। তার টেস্ট ও এক দিনের আন্তর্জাতিক উইকেটের সংখ্যা যথাক্রমে ৪১৪ এবং ৫০৩টি।

শোয়েব আখতার (পাকিস্তান)
পাকিস্তানের অন্যতম দ্রুতগতির বোলার শোয়েব আখতার ছোটবেলায় হাইপারএক্সটেন্ডেড এলবো এবং হাঁটতে পারার সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তবে তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও খেলার প্রতি ভালোবাসা তাকে মাঠে ফিরিয়েছে এবং তিনি ১৭৮টি টেস্ট উইকেটসহ ২৪৭টি এক দিনের আন্তর্জাতিক উইকেট নিয়েছেন।

যুবরাজ সিংহ (ভারত)
বিশ্বকাপ জয়ী যুবরাজ সিংহ ২০১১ সালের আইসিসি এক দিনের বিশ্বকাপ চলাকালীন কাশির সমস্যা নিয়ে খেলেছিলেন, পরে জানতে পারেন যে তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। কিন্তু ক্যানসার জয় করে ২০১২ সালে তিনি জাতীয় দলে ফিরেছিলেন এবং আরও কিছুদিন ভারতের হয়ে খেলে যান। যুবরাজের এই সাহসিকতা আজও অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা।

মার্টিন গাপ্তিল
মাত্র ১৪ বছর বয়সে ট্রাক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন নিউজ়িল্যান্ডের প্রাক্তন ওপেনার মার্টিন গাপ্তিল। মারাত্মক জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করেন তাঁর। তাতে বাঁ পায়ের তিনটি আঙুল হারান গাপ্তিল। তার পর থেকে ওই দুর্ঘটনার দুঃস্বপ্নকে মনে রাখতে নিজেকে ‘টু টোজ়’ বলে ডাকতেন এই কিউয়ি ওপেনার।

যুবরাজ সিংহ
২০১১ সালে আইসিসি এক দিনের আন্তর্জাতিক বিশ্বকাপের ‘সেরা খেলোয়াড়’ ছিলেন যুবরাজ সিংহ। ওই টুর্নামেন্ট চলাকালীন কাশির সমস্যা হচ্ছিল তাঁর। সেটাকে পাত্তা না দিয়ে খেলে যান যুবি। বিশ্বকাপ জয়ের পর ডাক্তারি পরীক্ষায় ক্যানসার ধরা পড়ে তার।

সূত্র : আনন্দবাজার অনলাইন

এটিআর/

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর