ভারতীয় মিডিয়ায় হিন্দু নির্যাতন
বিতর্কিত সেই সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় পাসপোর্ট আটকে
ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:৫৩
বাংলাদেশ সীমান্ত পাড়ি হয়ে কলকাতা প্রবেশ করতেই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে পাসপোর্ট। তারপর সেখানকার চ্যানেলের প্রতিবেদকের শিখিয়ে দেয়া কথামতো সাক্ষাৎকার না দিলে পাসপোর্ট দেয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের নানা কল্পকাহিনি বলিয়ে তা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে! সম্প্রতি ভারতের এবিপি আনন্দ টিভিতে এরকম একটি সাক্ষাৎকার দেন শুভ কর্মকার।
বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের চ্যানেলে ছাড়ানো সর্বশেষ প্রোপাগান্ডার সত্যতা জানতে সরেজমিনে সাক্ষাৎকার দেওয়া ফরিদপুরের শুভ কর্মকারের বাড়িতে গেলে তার অভিভাবকেরা জানান এসব ষড়যন্ত্রের তথ্য। লোকমুখে শুনে চ্যানেলে সন্তানের মুখে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর এই ধরনের নির্যাতনের বর্ণনা শুনে তারা বিস্মিত। এ ঘটনায় পুত্রের এই কাণ্ডে তারা বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের কাছে ক্ষমাও প্রার্থনা করেন তারা।
শুভ কর্মকার ফরিদপুর শহরের নীলটুলীর স্বর্ণকার পট্টির নিউ গিনি ভবন জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী সুনীল কর্মকারের ছেলে।
ওই সাক্ষাৎকারে শুভ দাবি করেন, বাংলাদেশের খুবই খারাপ অবস্থা। হিন্দুদের ওপর অনেক অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে বাড়িঘর দখল করা হচ্ছে। মন্দির-প্রাসাদ পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য খারাপ লাগে। তাদের মারধর করা করা হচ্ছে। মা বোনদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে। রাতে দোকান থেকে বাড়িতে যাওয়ার পর ভাবতে হয় সকালে দোকানের উদ্দেশ্যে আবার বের হতে পারবো কি না!
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভ কর্মকারের এই বক্তব্য জানাজানি হলে নিন্দার ঝড় উঠে। স্থানীয় সাংবাদিকেরা সরেজমিনে বিষয়টি জানতে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান। এসময় শুভর বাবা সুনীল কর্মকার এবং শুভর মা দুজনেই তাদের ছেলের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান।
শুভর মা বলেন, তার ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই এমন। কোন কথা শোনে না। এজন্য আমরা অনেক দুঃখিত। আমরা কখনোই এই দেশে কোন নির্যাতনের শিকার হইনি। আমার মেয়েরা, ভাসুরের মেয়েরা তারাও কখনোই এ ধরনের হামলার শিকার হয়নি। ভারতের ওই সাংবাদিকেরা খারাপ। তারা ইচ্ছা করেই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমরা বাংলাদেশে খুবই নিরাপদে রয়েছি।
শুভর বাবা সুনীল কর্মকারের বলেন, ওর এই কথা শুনে আমরা নিজেরাই অবাক হয়ে গেছি। ও কী করে এই কথা বললো ভাবতেও পারছি না। আমরা দেশে কোন ধরনের অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হইনি। আমি ওকে ফোন করেছিলাম ওর এই কথা শুনে। ও বললো, পেট্রাপোলে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার পরে সেখানকার সাংবাদিকেরা ওর পাসপোর্ট নিয়ে নেয়। এরপর ওদের শিখিয়ে দেয়া মতো কথা না বললে পাসপোর্ট দিবে না বলে ভয় দেখায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক নষ্টের উদ্দেশ্যেই এটি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের জেলা শাখার আহ্বায়ক নিতাই রায় জানান, ফরিদপুরের হিন্দুরা সবাই ভাল আছে। তিনি বলেন, আমি শুনেছি শুভ কর্মকারের পাসপোর্ট আটকে রেখে তাকে দিয়ে বাধ্য করেছে এমন বাংলাদেশ বিরোধী কথা বলতে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সাথে ও যে অন্যায় করেছে তার শাস্তি দাবি করি।
অপূর্ব অসীম/এমএইচএস/এনজে