বাংলাদেশের পত্রিকা থেকে
যুদ্ধদাস বেচে দালালদের অট্টালিকা
বাংলাদেশের খবর
প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:২২
প্রিয় পাঠক, রাঙা সকালে চায়ের ধোঁয়ার সঙ্গে উড়ে যাক আপনার সকল গ্লানি। প্রতিটি চুমুকে সুখ নামুক। আজকের বিপরীতে আগামীদিন আরও প্রশান্তিময় হোক— এই প্রত্যাশায় চলুন জেনে নিই আজকের দিনের বাংলাদেশকে। চোখ বুলাই দেশের শীর্ষ দৈনিকগুলোর প্রধান প্রতিবেদনে—
পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনাই চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের খবরে লিড করা হয়েছে,হওয়া অর্থ ফেরত আনা কঠিন হবে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দেশের অর্থ যতটা সহজে দেশের বাইরে গেছে, ফিরিয়ে আনা ততটাই জটিল ও সময়সাপেক্ষ হবে। যদি পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে হয় তবে দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবীর পরামর্শ, সরকারের সম্মিলিত উদ্যোগ ও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। এ জন্য জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবীরা।
অর্থপাচার একটি জটিল ও সূক্ষ্ম আর্থিক অপরাধ। অর্থপাচার চিহ্নিত করা, সঠিক তথ্য উদঘাটন, পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনা চ্যালেঞ্জিং কাজ। কারণ অপরাধটি করা হয় সুকৌশলে। আমদানি, রপ্তানি, বড় প্রকল্পের কেনাকাটার আড়ালে দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থপাচার হয়ে থাকে।
জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত জাতীয় শ্বেতপত্র কমিটির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে যে, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরে বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছে ২৮ লাখ কোটি টাকা। কমিটির তথ্য মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতি বছর পাচার হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের পরিমাণের পাঁচ ভাগ টাকা পাচার হয়েছে। বিদেশি যত ঋণ ও বিনিয়োগ দেশে আসে তার দ্বিগুণ অর্থপাচার হয়েছে।
গুলি ছোড়ায় কড়াকড়ি, বলপ্রয়োগে ৫ সুপারিশ
প্রথম আলো লিড করেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নির্বিচার প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের পর বিক্ষোভ দমনে গুলির ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের কাছ থেকে প্রাণঘাতী অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার প্রস্তাবও এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলি করার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে বলপ্রয়োগে পাঁচটি ধাপ অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর নীতিমালা এবং পুলিশ প্রবিধান, ১৯৪৩ অনুযায়ী বলপ্রয়োগের এই ধাপগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পুলিশ সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দেয় গত ১৫ জানুয়ারি। সুপারিশে পুলিশ পরিচালনা কর্তৃপক্ষ হিসেবে নিরপেক্ষ প্রভাবমুক্ত পুলিশ কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। কমিশনের তিনজন সদস্য প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, প্রতিবেদনে কমিশন গঠনের বিষয়ে মতামত দেওয়া হলেও এর কাঠামো নিয়ে কোনো সুপারিশ করা হয়নি। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে ১১ সদস্যের কমিশন এবং এর কাঠামোর বিষয়ে সংস্কার কমিশনের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
ভোটে হচ্ছে চার জোট
বাংলাদেশ প্রতিদিন লিড করেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জোট গঠনের তোড়জোড় চলছে। এবারের আলোচনায় রয়েছে প্রধান চারটি জোটের নাম। জোট সম্প্রসারণ নিয়ে চলছে টানাপোড়েন। আসন ভাগাভাগি নিয়ে হচ্ছে আলোচনা। বিএনপি সমমনা দলের জন্য বেশ কয়টি আসন ছেড়ে দিয়েছে। ইসলামি দলগুলোকে নিজ নিজ পক্ষে রাখতে তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রথমত- বিএনপি তার সমমনা জোট ও দল নিয়ে বৃহত্তর জোট গঠনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বিশেষ করে দলটি মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে। দ্বিতীয়ত- জামায়াতে ইসলামী আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি জোট গঠনের ঘোষণা দেয়নি। তবে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে এক প্ল্যাটফরমে আনার চেষ্টা করছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ অন্য ইসলামি দলগুলো বৃহত্তর ইসলামি শক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। তৃতীয়ত- গণতন্ত্র মঞ্চ চেষ্টা করছে জোট সম্প্রারণের। চতুর্থত- বাম গণতান্ত্রিক জোট ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা এই দুই প্ল্যাটফরমের রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে আলোচনা চলছে। চলতি মাসেই নতুন এই দলটির নাম এবং আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হতে পারে। নতুন এই দল সংসদ নির্বাচনে একক, না জোটগতভাবে অংশ নেবে- তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায়ের আন্দোলনে যেসব দল রাজপথে ছিল আমরা তাদের নিয়ে নির্বাচন এবং পরবর্তীতে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার গঠন করতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমরা দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও বৈঠক করে চলেছি।
‘ঘুম হারাম’ এলাকাবাসীর
যুগান্তর লিড করেছে, রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ভয়ভীতি দেখিয়ে দখল-চাঁদাবাজির রাজত্ব কায়েম করছে হাজি মো. মনির হোসেনের নেতৃত্বাধীন একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক। ব্যক্তিস্বার্থে স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসার কমিটি দখলসহ বিভিন্ন ধরনের চাঁদাবাজি-দখলদারিত্বের রাজত্ব কায়েম করেছে চক্রটি। এছাড়া হাট-বাজার, মেলা, নৌকাঘাট, কলকারখানা, ভবনমালিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে জিম্মি করে মাসে প্রায় কোটি টাকার চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে রীতিমতো ‘ঘুম হারাম’ এলাকাবাসীর। স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে এবং যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুলিশের কাজে সহযোগিতার জন্য কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশকে দুটো গাড়ি ‘উপহার’ দেওয়ার ঘোষণা দেন হাজি মনির। এরপর পুলিশের নাম ভাঙিয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজি শুরু করেন। বিষয়টি পুলিশ জানতে পারলে তাকে ডেকে নিয়ে পুলিশ কারও গাড়ি নেবে না বলে জানিয়ে দেয়। পাশাপাশি কারও কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে থাকলে সেসব টাকা ফেরত দিয়ে দিতে বলেন। এরপর কয়েকজনের টাকা ফেরত দিলেও সিংহভাগ টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন।
সরেজমিন ঘুরে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, হাজি মনির এবং তার ক্যাডার বাহিনী ব্যক্তিস্বার্থে এসব দখলদারিত্ব করলেও এসব অপরাধের দায় পড়ছে বিএনপির ওপর। বিষয়টি নিয়ে কামরাঙ্গীরচর থানা বিএনপির অন্য সৎ নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। তারাও এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিচার চান। ইতোমধ্যে এসব ঘটনায় কামরাঙ্গীরচর থানায় সাধারণ ডায়েরি এবং মামলা দায়ের হয়েছে। পাশাপাশি এসবের প্রতিকার চেয়ে এবং মাসে কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি করার ঘটনা বন্ধ করতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিএনপির মহানগর ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন দলটির স্থানীয় নেতাকর্মী।
ট্রানজিটের ফায়দা শুধু ভারতের, দেবপ্রিয়র তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত
আমার দেশ লিড করেছে, শেখ হাসিনার সময়ে ভারতকে দেওয়া একতরফা ‘ট্রানজিট’ বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে। ট্রানজিটের নামে দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগব্যবস্থার সুফলের পুরোটাই পেয়েছে ভারত। দেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যে (সেভেন সিস্টার্স) পণ্য পরিবহনে সুবিধা পেয়েছে ভারত। এর বিপরীতে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহনের সুযোগ চাইলেও পায়নি বাংলাদেশ। ট্রানজিটের আয় দিয়ে বাংলাদেশ একসময় ‘সিঙ্গাপুর’ বনে যাওয়ার স্বপ্নও পূরণ করতে পারেনি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভারতকে ট্রানজিটের নামে করিডোর দিতে বাংলাদেশের প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও এ খাত থেকে বাংলাদেশ আয় করেছে মাত্র ৩৭ লাখ টাকা। ট্রানজিট থেকে সামান্য আয় নিয়ে যেমন দেশের অর্থনীতিবিদ-বিশ্লেষকদের উদ্বেগ আছে, তেমনি এর মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে আছে বড় ধরনের উদ্বেগ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, ২০১৬ সালের জুন থেকে ভারতকে বিদ্যমান নৌ-প্রটোকলের আওতায় প্রথমে কলকাতা-আশুগঞ্জ নৌপথ এবং তারপর আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়কপথ ব্যবহার করে ত্রিপুরার আগরতলায় পণ্য পরিবহনের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ।
২০১৮ সালে দুই দেশের মধ্যে ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া’ চুক্তি হয়। এ চুক্তির মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে সড়কপথে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে এসবের মধ্যে নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহনের জন্য ভারতের করিডোর ব্যবহারের সুযোগ পায়নি বাংলাদেশ।
ভারতকে বাংলাদেশের বুক চিড়ে ট্রানজিটের পক্ষে হাসিনা সরকার যেমন মরিয়া ছিল, তেমনি দেশের সুশীলরাও ছিলেন সোচ্চার। সুশীলদের মধ্যে এক্ষেত্রে সবার থেকে এগিয়ে ছিলেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি ট্রানজিটের আয় দিয়ে দিনবদলের গল্প শুনিয়েছিলেন দেশের মানুষকে। ট্রানজিট বাস্তবায়ন হলেও তার সেই ‘সিঙ্গাপুর’ বনে যাওয়ার বাস্তবতার দেখা এখন পর্যন্ত মেলেনি।
ট্রাম্পের আদেশের বড় ধাক্কা বাংলাদেশে, ঝুঁকিতে লাখো মানুষ
সমকাল লিড করেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসেই বিদেশে সরকারি খরচে লাগাম টানেন। সেই পটভূমিতে যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) রোহিঙ্গা সহায়তা ছাড়া বাংলাদেশের বাকি সব কার্যক্রম আপাতত তিন মাসের জন্য গুটিয়ে নিয়েছে। এক সপ্তাহ আগের এই আদেশের প্রভাব বাংলাদেশে পড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ইউএসএআইডির অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ বা স্থগিত করা হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, গণতন্ত্র ও শাসন ব্যবস্থা, পরিবেশ, জ্বালানি এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমও গতি হারিয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়েছে কর্মী ছাঁটাইয়ের নোটিশ।
উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ নানা কারণে চাপে থাকা বাংলাদেশকে আরও বড় ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অর্থনীতির ক্ষতগুলো সামনে আসে, যা সামলাতে খেই হারাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন খাত ঝুঁকিতে পড়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিশাল জনগোষ্ঠী।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই সিদ্ধান্ত দেশের জন্য উদ্বেগের বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, উন্নয়নে বিশেষ করে কারিগরি সহায়তায় দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব পড়বে। এ জন্য এখন থেকেই নিতে হবে কূটনৈতিক উদ্যোগ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। তাদের এটি বোঝাতে হবে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সহযোগী দেশ।
যুবদল নেতার মৃত্যু
পুরনো বিরোধ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আলোচনায়
মানবজমিন লিড করেছে, মহানগরী থেকে চার কিলোমিটার দূরত্বে ইটাল্লা গ্রাম। গ্রামে প্রবেশ করলেই নিহত যুবদল নেতা তৌহিদদের বাড়ি। বাড়ির ফটক থেকে ভেতরে যেতেই দেখা যায়, স্বজনরা উঠানে বসে আহাজারি করছেন। প্রতিবেশীরাও আসা-যাওয়া করছেন। শোকের আবহ। তৌহিদের স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। ৩১শে জানুয়ারি যৌথবাহিনীর হেফাজতে মারা যান তৌহিদুল ইসলাম। তিনি কুমিল্লা সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনা এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবারের সদস্যরা দাবি করছেন, যৌথবাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে বেধড়ক পেটায় তৌহিদকে। সেই আঘাতের চিহ্নও ছিল তার শরীর জুড়ে।
কেন তৌহিদুলকে তুলে নেয়া হয়েছিল। কারা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিল। এসব বিষয় নিয়ে এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়েছে মানবজমিন। স্থানীয়দের কাছ থেকে উঠে এসেছে এসব বিষয়ে নানা তথ্য। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধের জেরেই তৌহিদকে জীবন দিতে হয়েছে। এ ছাড়া যুবদলের আহ্বায়ক হওয়ায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিষয়টিও সন্দেহে রেখেছে পরিবার।
গ্রামের মানুষ ও পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, পাশের বাড়ির তানজিল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তৌহিদ পরিবারের দ্বন্দ্ব প্রায় ১৫ বছরের। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সেই দ্বন্দ্ব আরও চরমে উঠে। স্থানীয়রা বলেন, বাড়ির পাশেই মসজিদ ও পারিবারিক কবরস্থানের জন্য জায়গা দিয়েছিলেন তৌহিদের পূর্বপুরুষরা। সেই জায়গার বেশ কিছু অংশের মালিকানা দাবি করে আসছিলেন পাশের বাড়ির তানজিলের পরিবার। এ নিয়ে বরাবরই তাদের মধ্যে বিবাদ লেগে থাকতো। সম্প্রতি তৌহিদের সঙ্গে ওই পক্ষের খানিকটা হাতাহাতিও হয়। তারই জের ধরে মিথ্যা অভিযোগ তুলে যৌথবাহিনীর কাছে গিয়েছিলেন তানজিল। তাকে ক্ষমতাধর কোনো পক্ষ সহযোগিতা করেছে এমনও আলোচনা আছে। স্থানীয়রা আরও জানান, তৌহিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়, তার কাছে অস্ত্র রয়েছে। তাই ৩০শে জানুয়ারি রাতে তাকে আটকের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি দল বাড়িতে আসে। সেই দলের সদস্যরা রাতে ঘরে ঢুকে তৌহিদকে তুলে নিয়ে যায়। রাতেই কয়েক দফা মারধর করে। পরদিন আবারো মারধরের পর পুলিশে দেয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেন তৌহিদ। পরে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রোববার তৌহিদের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি মানবজমিনকে বলেন, আমার ভাই তৌহিদ স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সে ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক। তার সঙ্গে কারও কখনো কোনো রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ছিল না। এখানে আমরা জানি না কেন সেনাবাহিনী তাকে নিয়ে গেছে। আমার ভাইয়ের কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না। কখনোই ছিল না। কিন্তু অস্ত্র থাকার অভিযোগে তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে লাশ হয়ে ফিরে আসে।
যুদ্ধদাস বেচে দালালদের অট্টালিকা
কালের কণ্ঠ লিড করেছে, দেশ থেকে নিরীহ ব্যক্তিদের রাশিয়ায় পাঠিয়ে যুদ্ধদাস বানানোর কারিগর এম এম আবুল হাসান। ইউরোপের উন্নত দেশে নির্ভার জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখিয়ে মূলত টাকার কল খুলে বসেন পতিত আওয়ামী লীগের এই নেতা। মানুষ বেচে তিনি বনে গেছেন অঢেল সম্পদের মালিক। নড়াইলের কালিয়ায় বানিয়েছেন তিনতলা অট্টালিকা।
ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে কোটি টাকা ঢেলেছেন। এলাকার মানুষের কাছে ‘দানবীর’ পরিচিতি পাওয়া হাসান মূলত রাশিয়ায় মানবপাচারের মূল হোতা। যুদ্ধদাস বেচে দালালদের অট্টালিকা অনুসন্ধানে জানা গেছে, আবুল হাসানের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত বহু মানুষ। বেশির ভাগই রাশিয়ায় আটকে পড়েছেন।
কেউ কেউ দেশে ফিরতে ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। অনেকের কোনো খোঁজ পাচ্ছে না পরিবার। স্বজনদের ঘরে ঘরেও কান্নার রোল। এ পর্যন্ত সাতটি জেলার অন্তত ২৮ জন ভুক্তভোগীর অভিযোগ পেয়েছে কালের কণ্ঠ। সব অভিযোগের তীর হাসানের দিকে। যুদ্ধদাস বানানোর এই কারিগর সম্পর্কে সরেজমিন অনুসন্ধান করেছে কালের কণ্ঠ। হাসানের বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলায়। তিনি কলাগাতী থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। গত বছর ৮ নম্বর কলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ‘অটোরিকশা’ প্রতীকে ভোট করেছেন।
ওই ভোটে তিনি কোটি টাকা ব্যয় করেছেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার বনানীতে কার্যালয় খুলে মানবপাচার নিয়ন্ত্রণ করতেন আবুল হাসান। বনানীর এফ ব্লকে ৪ নম্বর সড়কের মির্জা ভবনের (৪ নম্বর বাড়ি) নিচতলায় দুই কক্ষের একটি কার্যালয় রয়েছে ড্রিম হোম ট্রাভেলসের। ১৫ দিন ধরে কার্যালয়টি বন্ধ রয়েছে বলে জানান দায়িত্বরত নিরাপত্তা রক্ষী শহীদুল্লাহ। হাসানের খোঁজে প্রতিদিনই ভুক্তভোগীরা এই কার্যালয়ে ভিড় করে।
এটিআর/