Logo

আন্তর্জাতিক

গাজায় যুদ্ধবিরতি

আরেক দফা বন্দি বিনিময়ে সম্মত ইসরায়েল-হামাস

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬:২০

আরেক দফা বন্দি বিনিময়ে সম্মত ইসরায়েল-হামাস

ইসরায়েলি বন্দিদের মরদেহ হস্তান্তর ও বিনিময়ে শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছে ইসরায়েল প্রশাসন ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরই মধ্যে দিয়ে ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপে আরেক দফা বন্দি বিনিময় হতে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল ও হামাসের কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

চলতি সপ্তাহে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ৬০০ ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও তাদের মুক্তি দেয়নি হামাস। স্থানীয় সময় রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে এক ঘোষণার মাধ্যমে বন্দি বিনিময় স্থগিত করে ইসরায়েল। হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির সময়ে ‘অপমানজনক অনুষ্ঠান’ করার প্রতিবাদে এ সিদ্ধান্ত নেয় নেতানিয়াহু প্রশাসন।

শনিবার হামাসের জিম্মি মুক্তির সময় জিম্মিদের সমবেত জনতার উদ্দেশে হাত নাড়তে দেখা যায়। এমনকি হামাসের দুই যোদ্ধার কপালে এক জিম্মি চুমু খাওয়ার ছবি, ভিডিও ভাইরাল হয়।

এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এক বিবৃতিতে ইসরায়েল বলেছে, ‘লজ্জাজনক অনুষ্ঠান ছাড়াই পরবর্তী জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শনিবারের নির্ধারিত ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি বিলম্বিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

ইসরায়েলের এ পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানায় হামাস। একে যুদ্ধবিরতির চুক্তির ‘গুরুতর লঙ্ঘন’ আখ্যা দিয়ে হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, বন্দিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় বসবে না তারা।

এই অচলাবস্থার কারণে চলমান ছয় সপ্তাহের প্রথম ধাপের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়। তবে মঙ্গলবার আরেক বিবৃতিতে হামাস জানায়, সশস্ত্র দলটির শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা খলিল আল হায়ারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল কায়রো সফরকালে এই বিরোধ নিষ্পত্তির একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে।

আলোচনায় অগ্রগতির ফলে চার ইসরায়েলি জিম্মির লাশ ও যুদ্ধবিরতির আওতায় মুক্তি পাওয়া কয়েকশ অতিরিক্ত ফিলিস্তিনি বন্দিকে ঘরে ফেরানোর পথ সুগম হয়েছে বলে জানানো হয়।

গত শনিবার যেসব ফিলিস্তিনির মুক্তি স্থগিত করা হয়েছিল, তাদের সমন্বয়ে চুক্তি অনুযায়ী নতুন বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের লাশ হস্তান্তর করা হবে বলে নিশ্চিত করেছে হামাস।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা হামাসের হাতে নিহত জিম্মিদের লাশ ফিরিয়ে আনার চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আজই (বুধবার) এই বিনিময় কার্যকর হতে পারে। কোনো প্রকাশ্য অনুষ্ঠান ছাড়াই মিসরীয় কর্তৃপক্ষের কাছে দেহগুলো হস্তান্তর করা হবে বলে ইয়নেট নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এর আগে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) হামাস জিম্মিদের মুক্তির সময় একটি সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে ইসরায়েলি জিম্মিদের সমাবেশের উদ্দেশে হাত নাড়তে দেখা যায়। এমনকি এক জিম্মিকে হামাসের দুই যোদ্ধার কপালে চুমু খেতেও দেখা যায়। পরবর্তীতে এ ঘটনার ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ইসরায়েল এ ঘটনার প্রতিবাদ জানায়।

তবে মঙ্গলবারের ঘোষণা অনুযায়ী, নতুন চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের চুক্তির শর্ত পূরণ হবে। গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ কার্যকর হয়। আর এ ধাপে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে আটক কয়েক শ’ ফিলিস্তিনি ও বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে।

বন্দি বিনিময়ে এই অগ্রগতির পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফের মধ্যপ্রাচ্যে সফরের পথও সুগম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি এবং যুদ্ধ সমাপ্তির বিষয়ে আলোচনায় উইটকফের অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে হঠাৎ হামলা চালায় হামাস। সে সময় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন। পাশাপাশি আরও প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা।

এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে পরের দিন থেকে গাজাজুড়ে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। আকাশ ও স্থলপথে গত প্রায় ১৫ মাস ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

অন্যদিকে এই সময়ে হামাসের ১৭ হাজারের বেশি যোদ্ধাকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। তবে এই তথ্যের পক্ষে তারা কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি।

ইসরায়েলের হামলায় ধ্বংসনগরীতে পরিণত হয়েছে গাজা। সেখানকার ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে; ধ্বংস হয়েছে অবকাঠামো, ভেঙে পড়েছে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা। পাশাপাশি লড়াই চলাকালে প্রয়োজনীয় ত্রাণবাহী ট্রাকগুলোকে গাজায় প্রবেশ করতে না দেওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে গাজাবাসীর।

বিএইচ/

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর