
যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন তৃতীয়বারের মতো রমজান মাস উদযাপন করতে আলোকসজ্জার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বুধবার রাতে লন্ডনের মেয়র সাদিক খান এর উদ্বোধন করেন।
এবার রমজানের আলোকসজ্জা উপলক্ষে ৩০ হাজারের বেশি এলইডি লাইট স্থাপন করা হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসের আনন্দ লন্ডন জুড়ে ছড়িয়ে দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। লন্ডনের কোভেন্ট্রি স্ট্রিটের এই আয়োজন স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের মুগ্ধ করেছে।
ব্রিটেনের প্রাণকেন্দ্রে চাঁদ—তারা খচিত ‘Happy Ramadan’ (হ্যাপি রমাদান) লেখা আলোকসজ্জা প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত জ্বলবে। এটি আগামী ২৯ মার্চ পর্যন্ত চলবে। এরপর সেখানে ‘Happy Eid’ (হ্যাপি ঈদ) বার্তা দেখাবে, যা ৬ এপ্রিল পর্যন্ত থাকবে।
শীতের তীব্রতা ও শূন্যের কাছাকাছি তাপমাত্রার মধ্য দিয়ে যাওয়া লন্ডনবাসীদের জন্য রমজানের এই আলোকসজ্জা যেন স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। যুক্তরাজ্যের মুসলিম জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ লন্ডনে বাস করেন।
এরিক নামের লন্ডনের এক বাসিন্দা লেস্টার স্কয়ারে মেরি পপিনসের ভাস্কর্যের কাছে রমজানের আলোকসজ্জা দেখে মুগ্ধ। তিনি রমজান সম্পর্কে আরও জানতে চান। লন্ডনের বহুমতের সাংস্কৃতিক পরিবেশের বিষয়টিও তিনি উদযাপন করতে চান। রমজানের প্রতীক হিসেবে তিনি ব্যাটারিচালিত কাগজের একটি লণ্ঠন নিয়ে ঘুরছিলেন— যা মিশরীয় মুসলিম খলিফার পথ আলোকিত করতে ১০ শতাব্দীতে ব্যবহৃত হতো ।
লন্ডন ইউরোপের প্রথম প্রধান শহর যেখানে রমজান উপলক্ষে কেন্দ্রীয় সড়কগুলো আলোকসজ্জিত করা হয়। ২০২৪ সাল থেকে লন্ডনের পাশাপাশি জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরেও রমজানে আলোকসজ্জা করা হয়।
আজিজ ফাউন্ডেশন তৃতীয়বারের মতো লন্ডনে রমজানের জন্য এই আলোকসজ্জার আয়োজন করেছে। এটি লন্ডনে হানুকা ও দীপাবলির মতো বাৎসরিক আলোকসজ্জার বিষয় হয়ে উঠেছে।
আজিজ ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি রহিমা আজিজ বলেন, এ বছর আমাদের বার্তা হলো ‘আলো ছড়িয়ে দাও’। আমরা চাই মুসলিমরা যেন শুধু আলোকসজ্জা দেখতে না আসেন, বরং তারাও যেন অভিজ্ঞতার অংশীদার হয়ে উঠেন। এ বছর রমজান উপলক্ষে ইফতারির আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে হালাল খাবার থাকবে।
ঐক্যের বার্তা বহন করছে রমজান
ওয়েস্টমিনস্টারের লর্ড মেয়র কাউন্সিলর রবার্ট রিগবি বুধবার বিকেলে স্কুল শিক্ষার্থীদের নিয়ে লেস্টার স্কয়ারে একটি লণ্ঠন শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন। পরে আলোকসজ্জা উদ্বোধন করেন। একই সময়ে রাজা চার্লস তৃতীয় ও রানি ক্যামিলা রমজান উপলক্ষে একটি ভারতীয় রেস্তোরাঁয় খাবার বিতরণের প্যাকেট তৈরিতে সাহায্য করেন।
রিগবি বলেন, আমরা বহু ধর্মের মানুষের আবাসস্থল। যেখানে মুসলিমরাও রয়েছে। আমরা বিশ্বের সব স্থান থেকে আসা অতিথিদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই।
কোভেন্ট্রি স্ট্রিটে মেয়র সাদিক খানকে আলো প্রজ্বালন করতে দেখে উৎসুক জনতা জড়ো হয়।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ ঈমান, নামাজ, যাকাত, রমজানের রোজা ও হজ। এরমধ্যে রোজা অন্যতম একটি। এই রমজানে ব্রিটিশ মুসলিমরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রায় ১৩ ঘণ্টা রোজা রাখবেন। তবে গ্রীষ্মকালে রোজার সময়কাল প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে। এটি দেশভেদে পরিবর্তিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সারা বিশ্বাস করেন, রমজান ব্রিটিশ মুসলিম সম্প্রদায়কে আরও কাছে আনে এবং পরস্পরের সাথে সম্পর্ক তৈরিতে সহায়তা করে।
স্কুল শিক্ষার্থী ইউসুফ বলছে, রোজার দীর্ঘ সময়ের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো ইফতারে পরিবারের সবার সঙ্গে একত্রিত হওয়া।
রমজান উদযাপনের এই আলোকসজ্জা লন্ডনকে আরও উজ্জ্বল ও সহনশীল নগরী হিসেবে তুলে ধরেছে। এই শহরে সকল ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষ একসঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারে।
- ওএফ