ট্রাম্পের সৌদি সফর
১০০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন অস্ত্র বিক্রির উদ্যোগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:১৭

সৌদি আরবের কাছে ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের এক বিশাল অস্ত্রচুক্তি করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ছয়টি নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে এতথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
তারা জানিয়েছে, এই প্রস্তাবটি মে মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সৌদি আরব সফরের সময় ঘোষণা করা হতে পারে।
এই অস্ত্রচুক্তির প্রস্তাবটি এমন এক সময়ে আসছে, যখন সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন সৌদি আরবের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি চূড়ান্ত করার চেষ্টা করেছিল। যার অংশ হিসেবে সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটি বিস্তৃত চুক্তির পরিকল্পনাও ছিল।
বাইডেন প্রশাসনের প্রস্তাবে সৌদি আরবকে আরও উন্নত মার্কিন অস্ত্র দেওয়ার কথা ছিল। যার বিনিময়ে চীনের কাছ থেকে অস্ত্র কেনা বন্ধ ও চীনা বিনিয়োগ সীমিত করার শর্ত ছিল। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবেও এমন কোনো শর্ত আছে কি না, তা নিশ্চিত করতে পারেনি রয়টার্স।
হোয়াইট হাউস ও সৌদি সরকারের যোগাযোগ দপ্তর তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
একজন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। নিরাপত্তা সহযোগিতা ধরে রাখা এই অংশীদারত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, এবং সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা চাহিদা পূরণে আমরা তাদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব।’
প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রিকে যুক্তরাষ্ট্রের চাকরি বৃদ্ধির জন্য ইতিবাচক বলে প্রচার করেছিলেন।
সূত্র জানায়, লকহিড মার্টিন কর্পোরেশন এ চুক্তির আওতায় সি-১৩০ পরিবহন বিমানসহ উন্নত অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে। এক সূত্র বলেছে, প্রতিষ্ঠানটি ক্ষেপণাস্ত্র ও রাডারও সরবরাহ করবে।
সাবেক রেথিয়ন টেকনোলজিস নামে পরিচিত আরটিএক্স কর্পোরেশন চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে আরও থাকবে বোয়িং, নর্থরপ গ্রুম্যান কর্পোরেশন ও জেনারেল অ্যাটমিকসের মতো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বড় প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান।
সব সূত্রই বিষয়টির সংবেদনশীলতা বিবেচনায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছিল।
আরটিএক্স, নর্থরপ ও জেনারেল অ্যাটমিকস এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। বোয়িং কোনো মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়নি।
লকহিড মার্টিনের একজন মুখপাত্র বলেন, বিদেশে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি মূলত সরকার থেকে সরকারে হয়। বিদেশি সরকারের কাছে বিক্রি সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর যুক্তরাষ্ট্র সরকারই ভালোভাবে দিতে পারবে।
রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি চুক্তিতে থাকা কতগুলো প্রস্তাব নতুন। তবে দুটি সূত্র বলেছে, এর অনেকগুলোই অনেক দিন ধরেই প্রক্রিয়াধীন। উদাহরণস্বরূপ, সৌদি আরব ২০১৮ সালে প্রথম জেনারেল অ্যাটমিকসের ড্রোন নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছিল। গত ১২ মাসে প্রতিষ্ঠানটির এমকিউ-৯বি সিগার্ডিয়ান ড্রোন ও অন্যান্য বিমান নিয়ে ২০ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে।
তিনটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিরক্ষা খাতের একাধিক নির্বাহী কর্মকর্তা এই সফরের অংশ হিসেবে সৌদি আরব যেতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন ধরে সৌদি আরবকে অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে। ২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রায় ১১০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
তবে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মাত্র ১৪.৫ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে তখন কংগ্রেস এই চুক্তিগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
২০২১ সালে বাইডেন প্রশাসনের অধীনে কংগ্রেস সৌদি আরবের কাছে আক্রমণাত্মক অস্ত্র বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে- খাশোগি হত্যাকাণ্ড ও ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন যুদ্ধের কারণে, যাতে ব্যাপক বেসামরিক প্রাণহানি ঘটেছিল।
মার্কিন আইনে, বড় আন্তর্জাতিক অস্ত্রচুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার আগে কংগ্রেসের পর্যালোচনা ও অনুমোদন প্রয়োজন।
২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের ফলে বিশ্বজুড়ে তেল সরবরাহে প্রভাব পড়লে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের প্রতি নিজের কঠোর অবস্থান কিছুটা নমনীয় করে। ২০২৪ সালে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পর গাজা পরবর্তী পরিকল্পনায় রিয়াদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে গিয়ে ওয়াশিংটন সৌদি আরবে আক্রমণাত্মক অস্ত্র বিক্রির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
তিনটি সূত্র জানিয়েছে, বহু বছর ধরেই সৌদি আরব লকহিডের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার আগ্রহ দেখিয়ে আসছে। এই সফরে সেই বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। তবে তারা বলছে, সফরের সময় এফ-৩৫ চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা কম।
যুক্তরাষ্ট্র তার ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলকে আরব দেশগুলোর তুলনায় সবসময় উন্নততর মার্কিন অস্ত্র সরবরাহ করে থাকে, যাতে দেশটির প্রতিবেশীদের ওপর একটি ‘সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব’ বজায় রাখতে পারে।
ইসরায়েল গত নয় বছর ধরে এফ-৩৫ জেটের মালিক এবং ইতোমধ্যেই বহু স্কোয়াড্রন গঠন করেছে।
ওএফ