জাপানকে ছাড়িয়ে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ক্যালিফোর্নিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:১৩

জাপানকে ছাপিয়ে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া। নতুন অর্থনৈতিক উপাত্তের ভিত্তিতে এই ঘোষণা দিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও মার্কিন অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ব্যুরোর (বিইএ) সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) দাঁড়ায় ৪ দশমিক ১০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা একই সময়ের জাপানের জিডিপি ৪ দশমিক ০১ ট্রিলিয়ন ডলারের চেয়ে বেশি। এখন ক্যালিফোর্নিয়া শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও জার্মানির পেছনে রয়েছে।
নিউজম বলেন, ‘ক্যালিফোর্নিয়া শুধু বিশ্বকে অনুসরণ করছে না— বরং আমরাই গতি নির্ধারণ করছি।’
এই অর্জনের মধ্যেই, গভর্নর নিউজম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কাও জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়াই সবচেয়ে বেশি উৎপাদন শিল্প ও কৃষিপণ্য উৎপাদন করে। একইসঙ্গে এটি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কেন্দ্র, বিশ্ববিখ্যাত বিনোদন শিল্পের ঘাঁটি ও দেশের সবচেয়ে বড় দুটি সমুদ্রবন্দর এই অঙ্গরাজ্যেই।
ডেমোক্রেট দলের নেতা ও ২০২৮ সালের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নিউজম ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ক্ষমতা চ্যালেঞ্জ করে আইনি পদক্ষেপও নিয়েছেন। তিনি বলেন, এই নীতিগুলো বিশ্ববাজারে অস্থিরতা ও বাণিজ্য ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসন প্রায় সব দেশ থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করেছে। যদিও প্রথমে ৯০ দিনের একটি শিথিলতা ঘোষণা করা হয়েছিল, পরবর্তীতে মেক্সিকো ও কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ও চীনের ওপর সর্বোচ্চ ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়।
চীনও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫% পর্যন্ত কর বসায়। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি অনুযায়ী, নতুন শুল্কসহ কিছু চীনা পণ্যের ওপর মোট শুল্ক দাঁড়াবে ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত।
নিউজম বলেন, ‘এই সাফল্যের মুহূর্তে আমরা যেমন গর্বিত, তেমনি সচেতনও—কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের বেপরোয়া শুল্কনীতি আমাদের অগ্রগতিকে হুমকির মুখে ফেলছে। ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতি গোটা দেশের চালিকাশক্তি, এবং তা রক্ষা করতে হবে।’
ট্রাম্প দাবি করেন, তার শুল্কনীতি শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রকে বাণিজ্য ভারসাম্যে ফিরিয়ে আনতেই গ্রহণ করা হয়েছে। তার অর্থনৈতিক কর্মসূচির প্রধান স্তম্ভগুলোর একটি হলো কারখানা ও চাকরি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনা। আরেকটি হলো সুদের হার হ্রাস, যাতে মার্কিন জনগণের জন্য ঋণ নেওয়ার খরচ কমে।
নতুন উপাত্ত অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জিডিপি দেশ ও অঞ্চলগুলো হলো- যুক্তরাষ্টের ২৯ দশমিক ১৮ ট্রিলিয়ন ডলার, চীনের ১৮ দশমিক ৭৪ ট্রিলিয়ন ডলার, জার্মানির ৪ দশমিক ৬৫ ট্রিলিয়ন ডলার, ক্যালিফোর্নিয়া অঙঙ্গরাজ্যের ৪.১০ ট্রিলিয়ন ডলার ও জাপানের ৪ দশমিক ০১ ট্রিলিয়ন ডলার।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই তালিকায় ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতি সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল।
অন্যদিকে, জাপানের অর্থনীতি বয়স বাড়তে থাকা ও জনসংখ্যার কমে যাওয়ার কারণে চাপে রয়েছে। এতে শ্রমশক্তি হ্রাস পাচ্ছে ও সামাজিক খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
এই সপ্তাহে আইএমএফ জানিয়েছে, জাপানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং শুল্কের প্রভাবের কারণে সুদের হার ধীরে বাড়ানো হবে বলে ধারণা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ওএফ